কোশের গঠন ও বৈশিষ্ট্য (Cell structure and properties)
A. প্রোক্যারিওটিক কোশ বা আদি কোশ (Prokaryotic Cell)
সংজ্ঞা:- যে কোশে সংগঠিত নিউক্লিয়াস এবং পর্দাঘেরা কোশঅঙ্গাণু থাকে না সেই রকম কোশকে প্রোক্যারিওটিক কোশ বা আদি কোশ বলে । যেমন: ব্যাকটেরিয়া, নীলাভ-সবুজ শৈবাল (অ্যানাবিনা, নস্টক, অসিলেটোরিয়া, গ্লিওক্যাপসা প্রভৃতি) ।
আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশের গঠন:-
আদি কোশ প্রধানত কোশপ্রাচীর এবং প্রোটোপ্লাজম নামে দু'টি অংশ নিয়ে গঠিত ।
আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্য:- আদি কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল :
[i] আদি কোশে নিউক্লিও জালক বা নিউক্লিয়ার মেমব্রেন থাকে না এবং এই কোশের নিউক্লিয়াস একটি মাত্র ক্রোমোজোম দিয়ে গঠিত যা কোশের সাইটোপ্লাজমের সরাসরি সংস্পর্শে থাকে । আদি কোশে সাইটোপ্লাজমের সরাসরি সংস্পর্শে থাকা নিউক্লিয়াস অঞ্চলটিকে এককথায় নিউক্লয়েড বলা হয় ।
[ii] আদি কোশে রাইবোজোম নামে পর্দাবিহীন কোশ অঙ্গাণু থাকে কিন্তু কোনও পর্দাঘেরা কোশ অঙ্গাণু (যেমন: মাইটোকনড্রিয়া, গলগি বডিস, প্লাস্টিড, সেট্রোজোম, লাইসোজোম প্রভৃতি) থাকে না ।
[iii] আদি কোশের আকার তুলনামূলকভাবে ছোটো ।
[iv] আদি কোশে নিউক্লিওলাস থাকে না ।
[v] আদি কোশে সাধারণত বিভাজন, উপবৃদ্ধি বা কোরকোদ্গম [Budding] পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন হয় ।
B. ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ (Eukaryotic Cell)
সংজ্ঞা:- যে কোশে সুগঠিত বা সংগঠিত নিউক্লিয়াস এবং পর্দাঘেরা কোশ-অঙ্গাণু থাকে, সেই রকম কোশকে ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ বলে । যেমন : উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশ ।
আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোশের গঠন:-
আদর্শ কোশের প্রধান অংশগুলি হল : [i] কোশ প্রাচীর, [ii] কোশ পর্দা এবং [iii] প্রোটোপ্লাজম ।
[i] কোশ প্রাচীর [Cell Wall]:- আদর্শ কোশের চতুর্দিকে অর্থাৎ কোশ-মধ্যস্থ সজীব অংশের বাইরে যে জড়, পুরু এবং দৃঢ় একটি প্রাচীর থাকে, তাকে কোশ প্রাচীর বলে । এটি কোশের সজীব অংশকে রক্ষা করে । কেবলমাত্র উদ্ভিদ ও ব্যাকটেরিয়ার কোশে কোশ প্রাচীর থাকে ।
[ii] কোশ পর্দা [membrane]:- আদর্শ কোশের প্রোটোপ্লাজমকে ঘিরে যে সজীব, সুক্ষ্ম এবং অর্ধভেদ্য একক পর্দা থাকে তাকে কোশ পর্দা বলে । এটিও প্রোটোপ্লাজমকে রক্ষা করে ।
[iii] প্রোটোপ্লাজম [Protoplasm]:- কোশ পর্দা ঘেরা কোশ-মধ্যস্থ সমগ্র সজীব অংশটিকে প্রোটোপ্লাজম বলে । এটি [a] নিউক্লিয়াস এবং [b] সাইটোপ্লাজম নিয়ে গঠিত ।
[a] নিউক্লিয়াস [Nucleus]:- নিউক্লিয়াস হল প্রোটোপ্লাজমের সবচেয়ে ঘন, পর্দাঘেরা এবং প্রায় গোলাকার অংশ । আদর্শ কোশের সুগঠিত নিউক্লিয়াসটি চারটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা: (i) নিউক্লিয় পর্দা, (ii) নিউক্লিওলাস, (iii) নিউক্লিয়প্লাজম এবং (iv) নিউক্লিয়জালক ।
(i) নিউক্লিয় পর্দা:- নিউক্লিয়াসকে বেষ্টন করে অবস্থিত দ্বি-স্তরী পর্দা বিশেষ ;
(ii) নিউক্লিওলাস:- নিউক্লিয়াস-মধ্যস্থ সবচেয়ে ঘন অংশ ;
(iii) নিউক্লিয়প্লাজম:- নিউক্লিয়াস-মধ্যস্থ তরল ধাত্র বিশেষ ;
(iv) নিউক্লিয়জালক :- নিউক্লিয়াস-মধ্যস্থ সুক্ষ্ম সুতোর জলের মতো অংশ ।
[b] সাইটোপ্লাজম [Cytoplasm]:- নিউক্লিয়াস ছাড়া প্রোটোপ্লাজমের বাকি অর্ধতরল, দানাদার ও জেলির মতো অংশকে সাইটোপ্লাজম বলে ।
সাইটোপ্লাজম সাধারণত দু'টি স্তরে বিন্যস্ত থাকে । কোশ পর্দা সংলগ্ন হালকা স্বচ্ছ স্তরকে এক্টোপ্লাজম [ectoplasm] এবং কেন্দ্রের দিকে অপেক্ষাকৃত ঘন ও দানাদার স্তরকে এন্ডোপ্লাজম [endoplasm] বলে । সাইটোপ্লাজমের যে তরলে বিভিন্ন জৈব ও অজৈব উপাদান দ্রবীভূত বা ভাসমান অবস্থায় থাকে, তাকে ধাত্র বা হায়ালোপ্লাজম [hyaloplasm] বলা হয় ।
আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্য:-
এই কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল এই যে :
[i] আদর্শ কোশের সুগঠিত নিউক্লিয়াসটি নিউক্লিয়-পর্দা, নিউক্লিওলাস, নিউক্লিওপ্লাজম ও নিউক্লিওজালক নামে চারটি অংশ নিয়ে গঠিত ।
[ii] আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে পর্দা-ঘেরা নানারকম কোশ অঙ্গাণু থাকে ।
[iii] আদর্শ কোশের নিউক্লিয়াস অঞ্চলটি নিউক্লিও পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকায় সরাসরি সাইটোপ্লাজমের সংস্পর্শে থাকে না ।
[iv] আদর্শ কোশের নিউক্লিয়াসে একাধিক ক্রোমোজোম থাকে ।
[v] আদর্শ কোশে সাধারনত মাইটোসিস অথবা মিয়োসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন হয় ।
প্রোক্যারিওটিক কোশ ও ইউক্যারিওটিক কোশের পার্থক্য (Difference between Prokaryotic and Eukaryotic Cells)
বৈশিষ্ট্য | আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশ | আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোশ |
1. আকার | তুলনামূলকভাবে ছোটো (1— 10µm ) । | তুলনামূলকভাবে বড়ো (5 — 100µm ) । |
2. প্রকৃতি | এই কোশ অনুন্নত এবং সরল । | এই কোশ উন্নত ও অপেক্ষাকৃত জটিল । |
3. নিউক্লিয় পর্দার উপস্থিতি | নিউক্লিয়াস অঞ্চলটি (নিউক্লয়েড) নিউক্লিয় পর্দা (নিউক্লিয়ার মেমব্রেন) দিয়ে ঘেরা নয় । | নিউক্লিয়াস অঞ্চলটি নিউক্লিয় পর্দা দিয়ে ঘেরা । |
4. ক্রোমোজোমের সংখ্যা | এই কোশে একটিমাত্র ক্রোমোজোম থাকে । | এই কোশে একাধিক ক্রোমোজোম থাকে । |
5. নিউক্লিয়াসের উপস্থিতি | এই কোশে নিউক্লিয়াসে নিউক্লিওলাস থাকে না । | এই কোশে নিউক্লিয়াসে নিউক্লিওলাস থাকে না । |
6. পর্দা ঘেরা কোশ অঙ্গাণুর উপস্থিতি | এই কোশে রাইবোজোম নামে পর্দাবিহীন কোশঅঙ্গাণু থাকে । | এই কোশে পর্দাঘেরা কোশঅঙ্গাণু গুলি থাকে । |
7. রাইবোজোম | 70S প্রকৃতির । | 80S প্রকৃতির । |
8. কোশ বিভাজন |
উপবৃদ্ধি অথবা কোরকোদ্গম পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন হয় । |
মাইটোসিস কিম্বা মিয়োসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন হয় । |
*****
- 1609 views