জিন (Gene)
এক কথায় জিন হল বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক, বাহক ও নিয়ন্ত্রক ।
1950 খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই জিন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারনা বাধ্য হয়ে বার বার পাল্টাতে হয়েছে । ক্রোমোজোম ও জিন সম্পর্কে আধুনিক গবেষণাই প্রমাণিত হয়েছে যে, জিন হল জীবকোশের ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা DNA -এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যা DNA -এর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করে । জিনকে ক্রোমোজোমের কার্যগত একক [functional unit of Chromosome] বলা হয় ।
সংজ্ঞা [Defination]:- প্রধানত ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোমে অবস্থিত, DNA দ্বারা গঠিত এবং জীবের বংশানুক্রমে প্রবাহিত বৈশিষ্ট্য নির্ধারক একককে জিন বলে ।
গঠন [Structure]:- DNA নিউক্লিক অ্যাসিড দিয়ে গঠিত । DNA -র নির্দিষ্ট সংখ্যক 'বেস', যা কোনও একটি প্রোটিন (এনজাইম) সংশ্লেষের সংকেত বহন করে, তা নিয়েই জিন গঠিত হয় । জিনকে ক্রোমোজোমের রাসায়নিক একক হিসেবেও অভিহিত করা হয় ।
জিনের বৈশিষ্ট্য:-
[ক] জিন নিউক্লিক অ্যাসিড দ্বারা গঠিত ।
[খ] জিন ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোমে অবস্থান করে ।
[গ] জিন জীবের বিশেষ কোনও বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমিকভাবে বহন করে ।
[ঘ] এটি জীবের প্রকরণ এবং পরিব্যক্তি বা মিউটেশনে মুখ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে ।
জিনের কাজ:-
[ক] জিনকে বংশগতির ধারক ও বাহক বলা যায়, কারণ : ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান DNA -ই জিনের রাসায়নিক রূপ । DNA অণুই জীবের বংশগতির বৈশিষ্ট্যাবলী পুরুষানুক্রমে এক জনু থেকে অপর জনুতে বহন করে । এই কারণে DNA অণুকেই জিন বলে মনে করা হয় । যে সব জীবদেহে DNA থাকে না, কেবল RNA থাকে, সেক্ষেত্রে RNA জিন হিসেবে কাজ করে (যেমন উদ্ভিদ ভাইরাসের ক্ষেত্রে) ।
[খ] জীবের এক-একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জিন কাজ করে, অর্থাৎ এক-একটি বৈশিষ্ট্য একাধিক জিনের সম্মিলিত ক্রিয়ার ফল । যেমন : ড্রসোফিলা নামে মাছির চোখের রং প্রায় 20টি জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । মানুষের চামড়ার রং -এর ক্ষেত্রেও আছে বেশ কয়েক জোড়া জিন । আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে একটি মাত্র জিন বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রিত করে । উদাহরণস্বরূপ, অ্যালবিনো (albino) মানুষের দেহের চর্ম, চুলের রং ইত্যাদি একটি মাত্র জিনের মিউটেশনের ফলে সৃষ্টি হয় । অর্থাৎ, এক্ষেত্রে একটি মাত্র জিন দেহের বিভিন্ন অংশের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে ।
অ্যালবিনো (albino):- যে সমস্ত মানুষের দেহে কোনও রঞ্জক না থাকার, ফলে চুল, চামড়ার রং, চোখের তারার রং ইত্যাদি সাদা বা ফ্যাকাশে বা বর্ণহীন বর্ণের হয়, তাদের অ্যালবিনো (albino) বলে ।
[গ] আকৃতি ও সংযুক্তি অপরিবর্তিত রেখে জিনের স্ব-প্রতিরূপ [self duplication] গঠনের ক্ষমতা আছে । অবশ্য মাঝে মাঝে জিনের গঠনগত পরিবর্তনের ফলে তাদের আচরণগত পরিবর্তন-ও ঘটে, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব হয় । জিনের এই গঠনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাবকে পরিব্যক্তি বা মিউটেশন [mutation] বলা হয় ।
এক কথায় জিন হল বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক, বাহক ও নিয়ন্ত্রক ।
*****
- 19449 views