কোশের গঠন ও বৈশিষ্ট্য

Submitted by arpita pramanik on Mon, 06/06/2011 - 08:28

কোশের গঠন ও বৈশিষ্ট্য (Cell structure and properties)

A. প্রোক্যারিওটিক কোশ বা আদি কোশ (Prokaryotic Cell)

সংজ্ঞা:- যে কোশে সংগঠিত নিউক্লিয়াস এবং পর্দাঘেরা কোশঅঙ্গাণু থাকে না সেই রকম কোশকে প্রোক্যারিওটিক কোশ বা আদি কোশ বলে । যেমন: ব্যাকটেরিয়া, নীলাভ-সবুজ শৈবাল (অ্যানাবিনা, নস্টক, অসিলেটোরিয়া, গ্লিওক্যাপসা প্রভৃতি) ।

আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশের গঠন:-

আদি কোশ প্রধানত কোশপ্রাচীর এবং প্রোটোপ্লাজম নামে দু'টি অংশ নিয়ে গঠিত ।

আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্য:-  আদি কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল :

[i]  আদি কোশে নিউক্লিও জালক বা নিউক্লিয়ার মেমব্রেন থাকে না এবং এই কোশের নিউক্লিয়াস একটি মাত্র ক্রোমোজোম দিয়ে গঠিত যা কোশের সাইটোপ্লাজমের সরাসরি সংস্পর্শে থাকে । আদি কোশে সাইটোপ্লাজমের সরাসরি সংস্পর্শে থাকা নিউক্লিয়াস অঞ্চলটিকে এককথায় নিউক্লয়েড বলা হয় ।

[ii]  আদি কোশে রাইবোজোম নামে পর্দাবিহীন কোশ অঙ্গাণু থাকে কিন্তু কোনও পর্দাঘেরা কোশ অঙ্গাণু (যেমন: মাইটোকনড্রিয়া, গলগি বডিস, প্লাস্টিড, সেট্রোজোম, লাইসোজোম প্রভৃতি) থাকে না ।

[iii]  আদি কোশের আকার তুলনামূলকভাবে ছোটো ।

[iv]  আদি কোশে নিউক্লিওলাস থাকে না ।

[v]  আদি কোশে সাধারণত বিভাজন, উপবৃদ্ধি বা কোরকোদ্গম [Budding] পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন হয় ।

 

B. ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ (Eukaryotic Cell)

সংজ্ঞা:- যে কোশে সুগঠিত বা সংগঠিত নিউক্লিয়াস এবং পর্দাঘেরা কোশ-অঙ্গাণু থাকে, সেই রকম কোশকে ইউক্যারিওটিক কোশ বা আদর্শ কোশ বলে । যেমন : উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশ ।

আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোশের গঠন:-

আদর্শ কোশের প্রধান অংশগুলি হল : [i] কোশ প্রাচীর,  [ii] কোশ পর্দা এবং  [iii] প্রোটোপ্লাজম

[i] কোশ প্রাচীর [Cell Wall]:- আদর্শ কোশের চতুর্দিকে অর্থাৎ কোশ-মধ্যস্থ সজীব অংশের বাইরে যে জড়, পুরু এবং দৃঢ় একটি প্রাচীর থাকে, তাকে কোশ প্রাচীর বলে । এটি কোশের সজীব অংশকে রক্ষা করে । কেবলমাত্র উদ্ভিদ ও ব্যাকটেরিয়ার কোশে কোশ প্রাচীর থাকে

[ii] কোশ পর্দা [membrane]:- আদর্শ কোশের প্রোটোপ্লাজমকে ঘিরে যে সজীব, সুক্ষ্ম এবং অর্ধভেদ্য একক পর্দা থাকে তাকে কোশ পর্দা বলে । এটিও প্রোটোপ্লাজমকে রক্ষা করে ।

[iii] প্রোটোপ্লাজম [Protoplasm]:- কোশ পর্দা ঘেরা কোশ-মধ্যস্থ সমগ্র সজীব অংশটিকে প্রোটোপ্লাজম বলে । এটি  [a] নিউক্লিয়াস এবং  [b] সাইটোপ্লাজম নিয়ে গঠিত ।

[a] নিউক্লিয়াস [Nucleus]:-  নিউক্লিয়াস হল প্রোটোপ্লাজমের সবচেয়ে ঘন, পর্দাঘেরা এবং প্রায় গোলাকার অংশ । আদর্শ কোশের সুগঠিত নিউক্লিয়াসটি চারটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা: (i) নিউক্লিয় পর্দা,  (ii) নিউক্লিওলাস,  (iii) নিউক্লিয়প্লাজম এবং (iv) নিউক্লিয়জালক

(i) নিউক্লিয় পর্দা:- নিউক্লিয়াসকে বেষ্টন করে অবস্থিত দ্বি-স্তরী পর্দা বিশেষ ;

(ii) নিউক্লিওলাস:- নিউক্লিয়াস-মধ্যস্থ সবচেয়ে ঘন অংশ ;

(iii) নিউক্লিয়প্লাজম:- নিউক্লিয়াস-মধ্যস্থ তরল ধাত্র বিশেষ ;

(iv) নিউক্লিয়জালক :- নিউক্লিয়াস-মধ্যস্থ সুক্ষ্ম সুতোর জলের মতো অংশ ।

[b] সাইটোপ্লাজম [Cytoplasm]:-  নিউক্লিয়াস ছাড়া প্রোটোপ্লাজমের বাকি অর্ধতরল, দানাদার ও জেলির মতো অংশকে সাইটোপ্লাজম বলে ।

সাইটোপ্লাজম সাধারণত দু'টি স্তরে বিন্যস্ত থাকে । কোশ পর্দা সংলগ্ন হালকা স্বচ্ছ স্তরকে এক্টোপ্লাজম [ectoplasm] এবং কেন্দ্রের দিকে অপেক্ষাকৃত ঘন ও দানাদার স্তরকে এন্ডোপ্লাজম [endoplasm] বলে । সাইটোপ্লাজমের যে তরলে বিভিন্ন জৈব ও অজৈব উপাদান দ্রবীভূত বা ভাসমান অবস্থায় থাকে, তাকে ধাত্র বা হায়ালোপ্লাজম [hyaloplasm] বলা হয় ।

আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্য:-

এই কোশের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল এই যে :

[i] আদর্শ কোশের সুগঠিত নিউক্লিয়াসটি নিউক্লিয়-পর্দা, নিউক্লিওলাস, নিউক্লিওপ্লাজম ও নিউক্লিওজালক নামে চারটি অংশ নিয়ে গঠিত ।

[ii] আদর্শ কোশের সাইটোপ্লাজমে পর্দা-ঘেরা নানারকম কোশ অঙ্গাণু থাকে ।

[iii] আদর্শ কোশের নিউক্লিয়াস অঞ্চলটি নিউক্লিও পর্দা দিয়ে ঘেরা থাকায় সরাসরি সাইটোপ্লাজমের সংস্পর্শে থাকে না ।

[iv] আদর্শ কোশের নিউক্লিয়াসে একাধিক ক্রোমোজোম থাকে ।

[v] আদর্শ কোশে সাধারনত মাইটোসিস অথবা মিয়োসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন হয় ।

প্রোক্যারিওটিক কোশ ও ইউক্যারিওটিক কোশের পার্থক্য (Difference between Prokaryotic and Eukaryotic Cells)

বৈশিষ্ট্য আদি কোশ বা প্রোক্যারিওটিক কোশ আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোশ
1. আকার তুলনামূলকভাবে ছোটো (1— 10µm ) । তুলনামূলকভাবে বড়ো (5 — 100µm ) ।
2. প্রকৃতি এই কোশ অনুন্নত এবং সরল । এই কোশ উন্নত ও অপেক্ষাকৃত জটিল ।
3. নিউক্লিয় পর্দার উপস্থিতি নিউক্লিয়াস অঞ্চলটি (নিউক্লয়েড) নিউক্লিয় পর্দা (নিউক্লিয়ার মেমব্রেন) দিয়ে ঘেরা নয় । নিউক্লিয়াস অঞ্চলটি নিউক্লিয় পর্দা দিয়ে ঘেরা ।
4. ক্রোমোজোমের সংখ্যা এই কোশে একটিমাত্র ক্রোমোজোম থাকে । এই কোশে একাধিক ক্রোমোজোম থাকে ।
5. নিউক্লিয়াসের উপস্থিতি এই কোশে নিউক্লিয়াসে নিউক্লিওলাস থাকে না । এই কোশে নিউক্লিয়াসে নিউক্লিওলাস থাকে না ।
6. পর্দা ঘেরা কোশ অঙ্গাণুর উপস্থিতি এই কোশে রাইবোজোম নামে পর্দাবিহীন কোশঅঙ্গাণু থাকে । এই কোশে পর্দাঘেরা কোশঅঙ্গাণু গুলি থাকে ।
7. রাইবোজোম 70S প্রকৃতির । 80S প্রকৃতির ।

8. কোশ বিভাজন

উপবৃদ্ধি অথবা কোরকোদ্গম পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন হয় ।

মাইটোসিস কিম্বা মিয়োসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন হয় ।

*****

Related Items

ছত্রাক (Fungi)

ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ও ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদদের ছত্রাক বলা হয় । ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম । মানবজীবনে ছত্রাকের উপকারিতা ও অপকারিতা । পেনিসিলিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি উপকারী ছত্রাক । পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোশী মৃতজীবী ...

জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)

যে সমস্ত অতি ক্ষুদ্র এবং এককোশী বা বহুকোশী জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, তাদেরই সাধারণভাবে জীবাণু বলে । অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয় ।

রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগ সংক্রমণ প্রক্রিয়া

ভাইরাস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে, যেমন - ইনফ্লুয়েঞ্জা, AIDS, পোলিও, জল বসন্ত, মাম্পস, হাম, এনকেফালাইটিস, জলাতঙ্ক, পা ও মুখের ঘা, জন্ডিস, ডেঙ্গু জ্বর প্রভৃতি । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ...

ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ

1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য হেরেলী ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাসদের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ বা ফাজ নামে অভিহিত করেন । এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাকটিরিওফাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে 'T' শ্রেণির অন্তর্গত ব্যাকটিরিওফাজই প্রধান । ...

ভাইরাসে জড়ের ও প্রাণের লক্ষণ

ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না । ভাইরাস কোনো বহিঃস্থ উদ্দীপকে সাড়া দেয় না । ভাইরাসের চলন ক্ষমতা নেই । ভাইরাসের দেহে কোনোরকম বিপাক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না । পোষকের দেহ-কোশে ভাইরাস বংশবিস্তারে সক্ষম । ভাইরাসের দেহে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের ...