অনুপাত ও সমানুপাত (Ratio and Proportion)
অনুপাত (Ratio) :- পাটিগণিতে দুটি বাস্তব সংখ্যার অনুপাতকে একটি ভগ্নাংশের আকারে প্রকাশ করা যায় । ভগ্নাংশের লব ও হরকে যথাক্রমে অনুপাতের পূর্বপদ (Antecedent) ও উত্তরপদ (Consequent) বলে । a ও b রাশির দুটির অনুপাতকে a : b আকারে লেখা হয়, এবং পড়া হয় " a অনুপাত b " ( a is to b ) ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, a:b=ab [b ≠ 0]
[অনুপাতের দুটি পদের মধ্যে গ.সা.গু যেন 1হয় অর্থাৎ অনুপাতকে সবসময় সর্বনিম্ন আকারে প্রকাশ করা হয় । ]
অনুপাতের দুটি পদ সমান হতে পারে আবার নাও হতে পারে । যদি সমান হয়, যেমন a : a তাহলে তাকে বলে সাম্যানুপাত (Ratio of equality) । আর যদি অসমান হয়, যেমন b : c তাহলে তাকে বলে বৈষম্যানুপাত (Ratio of inequality) ।
গুরু অনুপাত (Ratio of greater inequality) ও লঘু অনুপাত (Ratio of less inequality):-
যেখানে পূর্বপদের মান উত্তরপদের মানের চেয়ে বড়ো (a : b, a > b অর্থাৎ ab>1) হয়, সেখানে অনুপাতকে গুরু অনুপাত (Ratio of greater inequality) বলে । আর পূর্বপদের মান উত্তরপদের চেয়ে ছোট (c : d, c < d অর্থাৎ ab<1 ) হলে তাকে লঘু অনুপাত (Ratio of less inequality) বলে ।
[ কোনো অনুপাতের পদ দুটিকে শূন্য ব্যতীত একই সংখ্যা দ্বারা গুণ বা ভাগ করলে অনুপাতের কোন পরিবর্তন হয় না ]
ব্যস্ত-অনুপাত (Inverse ratio):-
দুটি অনুপাতের মধ্যে যদি প্রথমটির পূর্বপদ দ্বিতীয়টির উত্তরপদের সমান হয় এবং দ্বিতীয়টির পূর্বপদ প্রথমটির উত্তরপদের সমান হয়, তাহলে একটিকে অপরটির ব্যস্ত-অনুপাত (Inverse ratio) বলে ।
যেমন a : b এর ব্যস্ত-অনুপাত হবে b : a ।
[ব্যস্ত-অনুপাতে দুটি অনুপাতকে ভগ্নাংশের আকারে প্রকাশ করলে ওরা পরস্পরের অন্যোন্যক হবে ]
যৌগিক বা মিশ্র-অনুপাত (Composition of ratio) :
দুই বা ততোধিক অনুপাতের পূর্বপদগুলির এবং উত্তরপদগুলির গুণফলকে অনুপাতের আকারে প্রকাশ করলে যে অনুপাত পাওয়া যায় তাকে যৌগিক বা মিশ্র-অনুপাত (Composition of ratio) বলে ।
যেমন, a : b, c : d এবং e : f অনুপাতের যৌগিক বা মিশ্র-অনুপাত হবে a x c x e : b x d x f ।
সমানুপাত (Proportion): - দুটি অনুপাত পরস্পর সমান হলে তাদের সমানুপাত বলে । যেমন 4 টাকা : 6 টাকা = 2 : 3; আবার 8 গ্রাম : 12 গ্রাম = 2 : 3; সুতরাং 4 টাকা : 6 টাকা ও 8 গ্রাম : 12 গ্রাম হলো সমান অনুপাত এদেরকে সমানুপাত বলে । সমানুপাতের পদগুলিকে সমানুপাতী বলে । a : b = c : d এখানে a, b, c এবং d কে সমানুপাতী বলে । সমানুপাতকে a : b : : c : d আকারে প্রকাশ করা হয়.সমানুপাতের প্রথম ও চতুর্থ পদকে বলা হয় প্রান্তীয় পদ (extremes or end-terms) এবং মাঝের পদগুলিকে বলে মধ্যপদ (means or middle terms) । এখানে a এবং d কে বলে প্রান্তীয় পদ ও b এবং c কে বলে মধ্যপদ । আবার d কে a, b, c এর চতুর্থ সমানুপাতী বলে ।
ক্রমিক সমানুপাতী (Continued Proportion) :
যদি a : b :: b : c হয় অর্থাৎ ab=bc হয় তবে a, b, c কে ক্রমিক সমানুপাতী (Continued Proportion) বলে । b কে a ও c এর মধ্য সমানুপাতী (Mean Proportional) বলে ।
এখন দেখা যাচ্ছে a , b ও c ক্রমিক সমানুপাতে থাকবে যদি তাদেরকে ac=b2 আকারে থাকে । অর্থাৎ তিনটি পদ ক্রমিক সমানুপাতী হলে প্রথম ও তৃতীয় পদের গুণফল মধ্য পদের বর্গের সমান হয় ।
[তিনটির অধিক পদও ক্রমিক সমানুপাতী হতে পারে । যদি ab=bc=cd হয় তবে a, b, c, d ক্রমিক সমানুপাতী । ]
সমানুপাতের কয়েকটি প্রয়োজনীয় ধর্ম (Some Important Properties of Proportion) :
(১) একান্তর প্রক্রিয়া (Alter nendo):
a : b = c : d হলে, a : c = b : d হবে
প্রমাণ :
a:b=c:d⇒ab=cd⇒ab×bc=cd×bc⇒ac=bd
[ প্রমাণিত ]
(২) বিপরীত বা ব্যস্ত-প্রক্রিয়া ( Invertendo )
a : b = c : d হলে, b : a = d : c হবে
প্রমাণ :
ab=cd
1. উভয়পক্ষে ab এবং cd দিয়ে ভাগ করে পাই,
1÷ab=1÷cd⇒ba=dc
অতএব
ab=cd⇒ba=dc∴a:b=c:d⇒b:a=d:c
[ প্রমাণিত ]
(৩) যোগ প্রক্রিয়া ( Componendo )
a : b = c : d হলে , ( a + b ) : b = ( c + d ) : d হবে।
প্রমাণ :
a:b=c:d⇒ab=cd⇒ab+1=cd+1⇒a+bb=c+dd⇒(a+b):b=(c+d):d
[ প্রমাণিত ]
(৪) ভাগ প্রক্রিয়া ( Dividendo )
a : b = c : d হলে, ( a - b ) : b = ( c - d ) : d হবে।
প্রমাণ :
a:b=c:d⇒ab=cd⇒ab−1=cd−1⇒a−bb=c−dd⇒(a−b):b=(c−d):d
[প্রমাণিত ]
(৫) যোগ-ভাগ প্রক্রিয়া ( Componendo and Dividendo )
a : b = c : d হলে, ( a + b ) : ( a - b ) = ( c + d ) : ( c - d ) হবে
প্রমাণ :
a:b=c:d
⇒ab=cd [যোগ ও ভাগ প্রক্রিয়া করে পাই ]
⇒a+ba−b=c+dc−d
⇒(a+b):(a−c)=(c+d):(c−d)
[প্রমাণিত ]
বিকল্প প্রমাণ :
মনে করি
ab=cd=k
অতএব a = bk এবং c = dk
এবার
a+ba−b=bk+bbk−b=k+1k−1
আবার
c+dc−d=dk+ddk−d=k+1k−1
∴a+ba−b=c+dc−d
(৬) সংযোজন প্রক্রিয়া ( Addendo )
a : b = c : d = e : f হলে, প্রতিটি অনুপাতের মান ( a + c + e ) : ( b+ d + f ) হবে, অর্থাৎ
ab=cd=ef=a+c+eb+d+f
সাধারণভাবে
ab=cd=ef=.........=a+c+e+........b+d+f+.......
প্রমাণ :
মনে করি
ab=cd=ef=k
অতএব a = bk , c = dk , e = fk
এবার
a+c+eb+d+f=bk+dk+fkb+d+f=k(b+d+f)(b+d+f)=k∴ab=cd=ef=k=a+c+eb+d+f
( প্রমাণিত )
মন্তব্য :
ab=cd=ef=..........=a+c+e+.........b+d+f+........,[b,d,f,.......≠0]
*****