শেষ জীবন:-
বিবেকানন্দ কিছু দিন মায়াবতীর অদ্বৈত আশ্রমে এবং পরে বেলুড় মঠে অতিবাহিত করেন । অতঃপর শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বেলুড় মঠে অবস্থান করে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের কাজ এবং ইংল্যান্ড ও আমেরিকার কাজ দেখাশোনা করে অতিবাহিত করেন । গোয়ালিয়রের মহারাজাসহ এ বছরগুলিতে হাজার হাজার দর্শক তাঁকে দেখতে আসেন । ১৯০১ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে দেখতে আসেন লোকমান্য তিলকসহ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয়রা । জাপানের ধর্ম মহাসভায় যোগ দেয়ার জন্য তিনি ১৯০১ সালের ডিসেম্বরে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন, কিন্ত্তু তাঁর ভগ্ন স্বাস্থ্য সেটি অসম্ভব করে তোলে । তাঁর শেষ দিনগুলিতে তিনি বোধগয়া ও বারাণসী তীর্থ করেন । তাঁর ভ্রমণসমূহ, উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতাদান, ব্যক্তিগত আলোচনা এবং চিঠিপত্রের আদান-প্রদান তাঁর স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করেছিল । তিনি হাঁপানি, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য শারীরীক অসুখে ভুগছিলেন । তাঁর দেহ ত্যাগের কিছুদিন পূর্বে তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে বর্ষপঞ্জি/পঞ্জিকা পড়তে দেখা যেত । তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার তিনি দিন পূর্বে তাঁকে দাহ করার স্থান দেখিয়ে দেন- যে স্থানে বর্তমানে তাঁর স্মৃতিতে একটি মন্দির দাঁড়িয়ে আছে । তিনি কতিপয় লোকের কাছে মন্তব্য করেছিলেন যে তিনি চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবেন না । তাঁর দেহ ত্যাগ করার দিন তিনি বেলুড় মঠে সকালে কিছু ছাত্রকে শুক্লা-যজুর্বেদ শেখান । তিনি ভ্রাতা-শিষ্য স্বামী প্রেমানন্দের সাথে হাটেন এবং তাকে রামকৃষ্ণ মঠের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নির্দেশনা দেন । বিবেকানন্দ ধ্যান করার সময় ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই রাত ৯টা ১০ মিনিটে দেহ ত্যাগ করেন । তাঁর শিষ্যদের মতে এটা ছিল মহাসমাধি । পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যগণ লিপিবদ্ধ করেন যে তারা স্বামীজির নাসারন্ধ্র, তাঁর মুখ এবং চোখে "সামান্য রক্ত" লক্ষ্য করেছেন । ডাক্তাররা মন্তব্য করেন যে এটি হয়েছে তাঁর মস্তিষ্কে একটি রক্তনালী ফেটে যাবার কারণে, কিন্ত্তু তারা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বের করতে পারেননি । তাঁর শিষ্যদের মতানুসারে ব্রহ্মরন্ধ্র-মস্তিষ্কের চূড়ার রন্ধ্র-অবশ্যই ফেটে থাকবে যখন তিনি মহাসমাধি অর্জন করেছিলেন । বিবেকানন্দ তাঁর চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত বেচে না থাকার তাঁর নিজের ভবিষ্যৎবাণী পূরণ করেছিলেন ।
***