তাপ পরিমাপের একক ও আপেক্ষিক তাপ

Submitted by arpita pramanik on Mon, 01/14/2013 - 11:37

তাপ পরিমাপের একক ও আপেক্ষিক তাপ :

তাপ পরিমাপের একক (Unit of measurement of heat) :

ক্যালোরি (Calorie) : 1 গ্রাম বিশুদ্ধ জলের উষ্ণতা 1oC বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োজন হয় তাকে 1 ক্যালোরি বলে । CGS পদ্ধতিতে তাপের একক হল ক্যালোরি

জুল (joule) : SI পদ্ধতিতে তাপের একক শক্তির এককে প্রকাশ করা হয় । SI পদ্ধতিতে তাপের পরিমাপের একক হল জুল । 1 ক্যালোরি = 4.1825 জুল = 4.2 জুল (প্রায়)

তাপের পরিমাপ নির্ণায়ক বিষয়সমূহ (Factors determining the quantities of heat) :

কোনো বস্তুর তাপের পরিমাণ বস্তুর ভর, উষ্ণতা এবং প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ।  

ভরের ওপর নির্ভরশীলতা : একই পরিমাণ উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য একই পদার্থের বিভিন্ন ভরের বস্তু বিভিন্ন পরিমাণ তাপ গ্রহণ  কিংবা বর্জন করে । এই গৃহীত বা বর্জিত তাপ বস্তুর ভরের সমানুপাতিক ।

উষ্ণতার ওপর নির্ভরশীলতা : নির্দিষ্ট ভরের কোনো বস্তু কর্তৃক গৃহীত বা বর্জিত তাপ উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের সমানুপাতিক ।

বস্তুর প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা : কোনো বস্তু কর্তৃক গৃহীত বা বর্জিত তাপের পরিমাণ বস্তুর শুধু ভর বা উষ্ণতার পার্থক্য ছাড়াও আর একটি বিশেষ ধর্ম অর্থাৎ, বস্তুটি যে পদার্থের তৈরি তার প্রকৃতির ওপরেও নির্ভর করে । পদার্থের এই বিশেষ ধর্মকে তার আপেক্ষিক তাপ বলে । যেমন— একই ভরের জল ও দুধের একই রকম দুটি পাত্রে নিয়ে একই উনুনের ওপর বসিয়ে উত্তপ্ত করলে (অর্থাৎ, একই হারে তাপ প্রদান করলে) দুধের চেয়ে জলের আপেক্ষিক তাপ বেশি হওয়ায়, জলের চেয়ে দুধের উষ্ণতা বৃদ্ধি বেশি হয় ।  

জলের আপেক্ষিক তাপ অন্যান্য তরলের চেয়ে বেশি হওয়ায়, এর তাপগ্রহণ ও তাপধারণ ক্ষমতা বেশি । তাই সেঁক দেওয়ার কাজে জল বেশি উপযোগী ।  

আপেক্ষিক তাপ (Specific heat) :

সংজ্ঞা : কোনো পদার্থের একক ভরের উষ্ণতা এক ডিগ্রি বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে ওই পদার্থের  আপেক্ষিক তাপ বলে ।

(ক) CGS পদ্ধতিতে আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞা : এক গ্রাম ভরের কোনো পদার্থের উষ্ণতা 1oC বাড়াতে যত ক্যালোরি তাপের প্রয়োজন হয়, তাকে ওই পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বলে । এই পদ্ধতিতে আপেক্ষিক তাপের একক হল ক্যালোরি প্রতি গ্রাম প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস (cal/gmoC) ।

'তামার আপেক্ষিক তাপ 0.09 ক্যালোরি/গ্রাম ডিগ্রি সেলসিয়াস' —বলতে এই বোঝায় যে, এক গ্রাম তামার উষ্ণতা 1oC বৃদ্ধি করতে 0.09 ক্যালোরি তাপের প্রয়োজন হয় ।

(খ) SI পদ্ধতিতে আপেক্ষিক তাপের সংজ্ঞা : এক কিলোগ্রাম ভরের কোনো পদার্থের উষ্ণতা এক কেলভিন বা 1oC বৃদ্ধি করতে যে পরিমাণ তাপশক্তির প্রয়োজন হয়, তাকে ওই পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বলে । এর একক হল— জুল/কেজি কেলভিন বা ডিগ্রি সেলসিয়াস (J/kg K বা, J/kg oC) । আপেক্ষিক তাপের মাত্রা = [ML2T-2/MK] = [L2T-2K-1]

'লোহার আপেক্ষিক তাপ 462 J/kgK' বলতে এই বোঝায় যে 1 কেজি লোহার উষ্ণতা 1K বৃদ্ধি করতে 462 জুল তাপশক্তির প্রয়োজন । জলের আপেক্ষিক তাপ সবচেয়ে বেশি । CGS পদ্ধতিতে জলের আপেক্ষিক তাপ = 1 cal/gmoC এবং SI পদ্ধতিতে জলের আপেক্ষিক তাপ = 4200 J/kgK ।

*****

Related Items

গ্যাসের অণুর গতি

গ্যাসের অণুগুলির মোট আয়তন গ্যাসের আয়তনের তুলনায় নগন্য । আণবিক গতির পক্ষে প্রমাণ, গ্যাসের চাপের ওপর গ্যাস-অণুর গতির প্রভাব, গ্যাসের উষ্ণতার ওপর গ্যাস-অণুর গতির প্রভাব, আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাস, বাস্তব গ্যাস ...

বয়েল ও চার্লসের সূত্রদ্বয়ের সমন্বয়

বয়েল ও চার্লসের সমন্বয়সূত্র PV = KT সমীকরণের ধ্রুবক K -এর মান গ্যাসের ভরের ওপর নির্ভর করে । এক গ্রাম-অণু অর্থাৎ, এক মৌল পরিমাণ যে-কোনো গ্যাসের ক্ষেত্রে ধ্রুবক K -এর মান একই হয় । এই ধ্রুবককে R অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয় । ধ্রুবক R -কে সার্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক ...

চার্লসের সূত্রের বিকল্প রূপ

স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন তার পরম উষ্ণতার সমানুপাতিক —এটাই পরম স্কেল অনুযায়ী চার্লসের সুত্র । 76 সেন্টিমিটার পারদস্তম্ভের চাপ এবং 0oC বা 273K উষ্ণতাকে একসঙ্গে প্রমাণ চাপ ও উষ্ণতা (STP) বলে । ...

উষ্ণতার পরম স্কেল ও পরম শূন্য

চার্লসের সূত্রানুযায়ী যে উষ্ণতায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাস কোনো আয়তন অধিকার করে না; অর্থাৎ আয়তন শুন্য হয় —তাকে পরম শুন্য উষ্ণতা বলা হয় । উষ্ণতার পরম স্কেল বা কেলভিন স্কেল, সেলসিয়াস স্কেল এবং পরম স্কেলের মধ্যে সম্পর্ক ...

গ্যাসের সূত্রাবলি (Gas laws)

চাপ ও উষ্ণতার পরিবর্তনের সঙ্গে গ্যাসের আয়তনের পরিবর্তনের সূত্রগুলিকে গ্যাসের সুত্র বলে । বয়েলের সূত্র :- উষ্ণতা স্থির থাকলে, নির্দিষ্ট ভরের যে কোনো গ্যাসের আয়তন ওই গ্যাসের চাপের সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয় ।