জৈব যৌগগুলির প্রাথমিক শ্রেণিবিভাগ

Submitted by arpita pramanik on Fri, 04/19/2013 - 09:59

জৈব যৌগগুলির প্রাথমিক শ্রেণিবিভাগ (Elementary Classification of Organic Compounds) :

কার্যকরী মূলকের ওপর ভিত্তি করে জৈব যৌগগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা :-

[1] হাইড্রোকার্বন

[2] অ্যালকোহল

[3] অ্যালডিহাইড

[4] কিটোন 

[5] কার্বক্সিলিক অ্যাসিড যৌগ

 

নীচে জৈব যৌগের কয়েকটি শ্রেণি এবং প্রতিটি শ্রেণির প্রথম তিনটি সদস্যের নাম ও গঠন দেওয়া হল :

[1] হাইড্রোকার্বন (Hydrocarbons)

যেসব জৈব যৌগ শুধু কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণু দিয়ে গঠিত তাদের হাইড্রোকার্বন বলে । যথা : মিথেন (CH4), ইথেন (C2H6), ইথিলিন (C2H4), অ্যাসিটিলিন (C2H2) ইত্যাদি । যেসব জৈব যৌগের গঠনে প্রান্তের কার্বন পরমাণুগুলি মুক্ত থাকে তাদের মুক্ত শৃঙ্খল জৈব যৌগ বলে । যেমন, প্রপেন একটি মুক্ত শৃঙ্খল জৈব যৌগ : CH3CH2CH3 প্রপেন (মুক্ত শৃঙ্খল যৌগ) এখানে শুধু মুক্ত শৃঙ্খল জৈব যৌগ আলোচনা করা হল ।

মুক্ত শৃঙ্খল হাইড্রোকার্বনগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:  [i] সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন (Saturated Hydrocarbons)  এবং [ii] অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন (Unsaturated Hydrocarbons) ।

[i] সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন (Saturated Hydrocarbons) :-  শুধু কার্বন বা হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত মুক্ত শৃঙ্খল জৈব যৌগ যাদের গঠনে শুধু কার্বন-কার্বন এক-বন্ধন (C - C) এবং / অথবা কার্বন-হাইড্রোজেন এক বন্ধন (C - H) থাকে তাদের মুক্ত শৃঙ্খল সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বা প্যারাফিন বলে । এদের নামের শেষে 'এন্' (ane) কথাটি যুক্ত থাকে, এদের অ্যালকেন (Alkane) বলে । এদের সাধারণ সংকেত CnH2n+2 ( যেখানে n হল কার্বন পরমাণুর সংখ্যা ) । যথা : মিথেন (CH4), ইথেন (C2H6), প্রোপেন (C3H8) ইত্যাদি ।

অ্যালকেনের প্রথম তিনটি সদস্যের গঠন ও নাম—

 

[ii] অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন (Unsaturated Hydrocarbons):- যে সব হাইড্রোকার্বনের গঠনে এক বা একাধিক কার্বন-কার্বন দ্বি-বন্ধনী ( > C = C < ) বা ত্রি-বন্ধনী ( — C ≡ C — ) থাকে, তাদের অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বলে । অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন দু-ধরনের হয় : যথা- [a] অ্যালকিন এবং [b] অ্যালকাইন

[a] অ্যালকিন (Alkene) :  যে সব হাইড্রোকার্বনের গঠনে এক বা একাধিক কার্বন-কার্বন দ্বি-বন্ধনী ( > C = C < ) থাকে, তাদের অ্যালকিন (Alkene) বলে । এদের নামের শেষে 'ইন' (ene) কথাটি যুক্ত থাকে । এদের রাসায়নিক সংকেত হল CnH2n  IUPAC অনুসারে এদের কার্যকরী মূলক ( > C = C < ) । যথা: ইথিলিন বা ইথিন (C2H4), প্রোপিলিন বা প্রোপিন (C3H6), বিউটিলিন (C4H8) ইত্যাদি । অ্যালকিন একটি (> C = C <) শ্রেণি যুক্ত মুক্ত শৃঙ্খল হাইড্রোকার্বন । 

অ্যালকিনের প্রথম তিনটি সদস্যের গঠন ও নাম—

[b] অ্যালকাইন (Alkyne) : যে সব হাইড্রোকার্বনের গঠনে এক বা একাধিক কার্বন-কার্বন ত্রি-বন্ধনী ( — C ≡ C — ) থাকে, তাদের অ্যালকাইন বলে । এদের নামের শেষে 'আইন' (yne) কথাটি যুক্ত থাকে । এদের রাসায়নিক সংকেত হল CnH2n-2  ।  IUPAC অনুসারে এদের কার্যকরী মূলক ( — C ≡ C — ) । অ্যালকাইন একটি ( — C ≡ C — ) শ্রেণি যুক্ত মুক্ত শৃঙ্খল হাইড্রোকার্বন ।  যথা: অ্যাসিটিলিন ( HC ≡ CH ), মিথাইল অ্যাসিটিলিন ( CH3C ≡ CH ), ডাইমিথাইল অ্যাসিটিলিন ( H3C - C ≡ C - CH3 ) ইত্যাদি ।   

অ্যালকাইনের প্রথম তিনটি সদস্যের গঠন ও নাম—

 

[2] অ্যালকোহল (Alcohols) :

অ্যালকেনের এক বা একাধিক হাইড্রোজেন পরমাণু হাইড্রক্সিল গ্রুপ (—OH) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন করে, তাদের অ্যালকোহল শ্রেণির যৌগ বলে । অর্থাৎ R-H ( অ্যালকেন ) থেকে  R-OH ( অ্যালকোহল ) । যেসব অ্যালকোহল যৌগে (-CH2OH) গ্রুপ থাকে, তাদের প্রাইমারী অ্যালকোহল বলে । IUPAC অনুসারে অ্যালকোহল শ্রেণির যৌগের কার্যকরী মূলক —OH । এদের নামের শেষে 'অনল' কথাটি যুক্ত থাকে । অ্যালকোহল হল কার্যকরী মূলক -OH যুক্ত মুক্ত শৃঙ্খল যৌগ । এই শ্রেণির সাধারণ সংকেত হল CnH2n+1, যেখানে n= কার্বন পরমাণুর সংখ্যা ।  যেমন: মিথাইল অ্যালকোহল বা মিথানল (CH3OH), ইথাইল অ্যালকোহল বা ইথানল (CH3CH2OH), প্রোপাইল অ্যালকোহল বা প্রোপানল (CH3CH2CH2OH) ।  

উদাহরণ: 

[3] অ্যালডিহাইড (Aldehydes) :

অ্যালকেনের একটি হাইড্রোজেন পরমাণু (—CHO) গ্রুপ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হলে, তাদের অ্যালডিহাইড শ্রেণির যৌগ বলে । IUPAC অনুসারে অ্যালডিহাইড শ্রেণির যৌগের কার্যকরী মূলক -CHO । এদের নামের শেষে 'অ্যাল' কথাটি যুক্ত থাকে । অ্যালডিহাইডের সাধারণ সংকেত R—CHO, যেখান R হল অ্যালকিল মূলক, কেবলমাত্র প্রথম যৌগ ফরম্যালডিহাইড ( H—CHO ) এর ক্ষেত্রে R = H ।  যেমন : ফরম্যালডিহাইড বা মিথান্যাল (HCHO), অ্যাসিট্যালডিহাইড বা ইথান্যাল (CH3CHO), প্রোপিয়োন্যালহাইড বা প্রোপান্যাল (CH3CH2CHO), ইত্যাদি । 

উদাহরণ:  

[4] কিটোন (Ketones):

যে সব জৈব যৌগে কিটোনিক গ্রুপ থাকে, তাদের কিটোন শ্রেণির যৌগ বলে । এই শ্রেণির যৌগের কার্যকরী মূলক ( > C = O ) , কার্বনের দুটি যোজ্যতাই কার্বন পরমাণু দ্বারা তৃপ্ত । এই যৌগে কার্যকরী মূলকের সঙ্গে দুটি অ্যালকিল মূলক ( ভিন্ন বা অভিন্ন ) যুক্ত থাকে ।

উদাহরণ: 

[5] কার্বক্সিলিক অ্যাসিড যৌগ (Carboxylic Acid):

অ্যালকেনের হাইড্রোজেন পরমাণু (—COOH) গ্রুপ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন করে, তাদের কার্বক্সিলিক অ্যাসিড শ্রেণির যৌগ বলে । এদের ফ্যাটি অ্যাসিডও বলা হয় । এই শ্রেণির যৌগের কার্যকরী মূলক -COOH । কার্বক্সিলিক অ্যাসিডের সাধারণ সংকেত RCOOH, যেখানে R অ্যালকিল মূলক ; কেবলমাত্র প্রথম যৌগ ফরমিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে R = H ।

উদাহরণ: 

*****

Related Items

কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ

কপার সালফেট জলে আয়নিত হয়ে কপার (+) এবং সালফেট (-) আয়ন উত্পন্ন করে । সুতরাং, জলীয় দ্রবণে চার প্রকার আয়ন থাকে, দুধরনের ক্যাটায়ান H (+) ও Cu (+) এবং দু ধরনের অ্যানায়ন OH (-) ও সালফেট (-) ।

জলের তড়িৎ-বিশ্লেষণ

বিশুদ্ধ জল তড়িতের কুপরিবাহী, কিন্তু সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার জলে মেশালে ওই জল তড়িতের সুপরিবাহী হয় । এর কারণ হল বিশুদ্ধ জলে খুব কম সংখ্যক অণু H+ এবং OH- আয়নে বিশ্লেষিত অবস্থায় থাকে । ওই জলে সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার যোগ করলে এদের আয়ন ...

তড়িৎ-বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ

যেসব পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে নিজেরা রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই সব পদার্থকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে ।

তড়িৎ-পরিবাহী এবং তড়িৎ-অপরিবাহী

যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহিত করলে তা তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম হয়, তাদের তড়িৎ-পরিবাহী পদার্থ বলে । যেমন; সোনা, রুপো, তামা, প্রভৃতি ধাতু, গ্রাফাইট, সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ ইত্যাদি । তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম এমন পদার্থগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় --

জারণ ও বিজারণ একসঙ্গে ঘটে

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জারণ ও বিজারণ প্রক্রিয়া একই সঙ্গে ঘটে । অর্থাৎ, জারণ ও বিজারণ ক্রিয়া পরস্পরের পরিপূরক । কোনো বিক্রিয়ায় জারণ-ক্রিয়া ঘটলেই বিজারণ ক্রিয়াও ঘটবে । এই রকম রাসায়নিক বিক্রিয়াকে রেডক্স বিক্রিয়া বলা হয় । ...