জৈব যৌগ ও জৈব রসায়ন

Submitted by arpita pramanik on Tue, 04/16/2013 - 16:38

জৈব যৌগ ও জৈব রসায়ন (Organic Compound and Organic Chemistry) :

জৈব রসায়ন (Organic Chemistry)

বহু বছর আগে পৃথিবীতে এককোশি জীবের আবির্ভাব ঘটেছিল । ক্রমে নানা উদ্ভিদ, অন্যান্য প্রাণী এবং মানুষ এলো পৃথিবীতে । মানুষ সুদূর অতীত থেকেই চাল, গম, ময়দা, দুধ, মাখন, মদ ইত্যাদি খাদ্যবস্তু দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে শুরু করে । এইসব পদার্থগুলির উৎস উদ্ভিদ বা প্রাণী এবং এগুলি সবই জৈব পদার্থ । তাই সাধারণভাবে এই ধারণাই সৃষ্টি হয়েছিল যে, জৈব যৌগ শুধু উদ্ভিদ বা প্রাণী জগৎ থেকেই পাওয়া সম্ভব । বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়েঁ অনেকগুলি জৈব যৌগের বিশ্লেষণ করে দেখান যে, সব জৈব যৌগের মধ্যে কার্বন আছে । 1815 খ্রিস্টাব্দে বার্জেলিয়াস প্রাণ শক্তি তত্ত্বের (vital force theory) দ্বারা জৈব এবং অজৈব যৌগগুলি পার্থক্য করেন এবং তিনি বলেন জৈব যৌগগুলির উৎপন্নের জন্য উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীদেহে উপস্থিত প্রাণশক্তির প্রয়োজন । তাঁর মতে, এই শক্তি মানুষের করায়ত্ত নয়, তাই পরীক্ষাগারে অজৈব যৌগ থেকে জৈব যৌগগুলি প্রস্তুত করা সম্ভব নয় । তারপর এই প্রচলিত ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে 1828 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ভোলার (Fredrich Whohler) সর্বপ্রথম অজৈব যৌগ অ্যামোনিয়াম সায়ানেট (ammonium cyanate) [NH4CNO] -কে উত্তপ্ত করে জৈব যৌগ ইউরিয়া (Urea) [CO(NH2)2] প্রস্তুত করে দেখান যে, পরীক্ষাগারে জৈব যৌগ তৈরি করা যায় । ইউরিয়া একটি জৈব পদার্থ, যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর মুত্রের মধ্যে পাওয়া যায় । এই আবিষ্কারটি জৈব রসায়নে নবযুগের সূচনা করে ।

NH4CNO (অ্যামোনিয়াম সায়ানেট)  →  CO(NH2)2 (ইউরিয়া)

তাই বলা যেতে পারে যে, বিজ্ঞানী ভোলারই আধুনিক জৈব রসায়নের জনক । এরপর 1845 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী কোলবে, অ্যাসেটিক অ্যাসিড নামে কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দ্বারা গঠিত একটি জৈব যৌগ প্রস্তুত করেন । 1856 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী বার্থ্লো কার্বন ও হাইড্রোজেন ঘটিত জৈব যৌগ মিথেন প্রস্তুত করেন । এভাবেই জীবকোশের প্রাণশক্তি ছাড়াই জৈব যৌগ যে প্রস্তুত করা যায় তা প্রমাণিত হল । ফলে জীবনী শক্তি মতবাদটি বাতিল হয়ে যায় । প্রত্যেক জৈব যৌগে কার্বন আছে, কিন্তু সব কার্বন যৌগকেই জৈব যৌগের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না ।

জৈব যৌগ ও জৈব রসায়ন : কার্বনের যে সমস্ত যৌগ প্রধানত জীবজগতে উৎপন্ন হয় এবং যে সমস্ত যৌগে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং বৃত্তাকার শৃঙ্খলে যুক্ত থেকে বিভিন্ন সমধর্মী যৌগের শ্রেণি গঠন করতে পারে, সেই সমস্ত যৌগকে সামগ্রিকভাবে জৈব যৌগ (Organic Compounds) বলে এবং রসায়নের যে শাখায় কার্বনের এই যৌগগুলি সম্বন্ধে আলোচনা করা হয় তাকে জৈব রসায়ন (Organic Chemistry) বলে ।

জৈব যৌগ (Organic Compound) :

সংজ্ঞা :- কার্বনের অক্সাইড, ধাতব কার্বনেট এবং বাইকার্বনেট, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, ধাতব সায়ানাইড লবণগুলি ছাড়া কার্বন দ্বারা গঠিত যৌগগুলিকে জৈব যৌগ বলা হয় । কার্বন ডাইঅক্সাইড কার্বন মনোক্সাইড, ধাতব কার্বনেট এবং বাইকার্বনেট প্রভৃতি যৌগগুলির মধ্যে কার্বন থাকলেও এইগুলিকে জৈব যৌগরূপে গণ্য করা হয় না । তাই প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী এদের অজৈব যৌগরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অজৈব রসায়ন বিভাগেই এই যৌগগুলির প্রস্তুতি, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়গুলি আলোচনা করা হয়েছে । 

*****

Related Items

Class X Physical Science Study Reference (Old Syllabus)

ভৌত বিজ্ঞান, দশম শ্রেণির জন্য, পরমাণুর গঠন, গ্যাসের ধর্ম, অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প, রাসায়নিক বিক্রিয়া ও রাসায়নিক সমীকরণ, তাপ, আলো : লেন্স ও বিচ্ছুরণ, প্রবাহী তড়িৎবিজ্ঞান, আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান, তড়িৎ চুম্বকত্ব, পর্যায় সারণি, রাসায়নিক বন্ধন, আয়নীয় যোজ্যতা, সমযোজ্যতা ...