জীবনক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভুমিকা

Submitted by arpita pramanik on Tue, 04/16/2013 - 19:18

জীবনক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভূমিকা (Role of Organic Compounds in Life Process) :

প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহের বেশির ভাগ অংশ জৈব যৌগ দিয়ে গঠিত । তাই জীব জগতে জৈব যৌগের দান অতুলনীয় । জীবন ক্রিয়ার সঙ্গে জৈব যৌগ গভীর ভাবে জড়িত । জীবদেহের জীবনক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য জৈব যৌগের ভূমিকা অপরিসীম । জীবজগতে প্রত্যেক জৈবিক ক্রিয়ার কারণ হল জীবদেহে জৈব যৌগের ক্রিয়া ।

[i] দেহের পুষ্টি সাধন, বৃদ্ধি ও গঠনে জৈব যৌগের ভূমিকা :- দেহের পুষ্টি, বৃদ্ধি, গঠন ও রোগ-প্রতিরোধের জন্য আমরা যে সমস্ত খাদ্য গ্রহণ করি তাদের প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় । এরা সবই জৈব যৌগ ।

(ক) কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় পদার্থ : চাল, গম, আলু, ভুট্টা, চিনি, গ্লুকোজ প্রভৃতি শর্করা জাতীয় পদার্থ । এসব খাদ্য দেহে রক্তের সঙ্গে মিশে পুষ্টি ও শক্তি যোগায় ।

(খ) স্নেহ জাতীয় পদার্থ : তেল, মাখন, ঘি প্রভৃতি স্নেহজাতীয় পদার্থ । এগুলি দেহে তাপ ও শক্তি যোগায় ।

(গ) আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় পদার্থ : মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি প্রাণীজ প্রোটিন এবং মুসুর, মগ, ছোলা, সয়াবীন প্রভৃতি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন । এই প্রোটিন আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে অ্যামাইনো অ্যাসিড উৎপন্ন করে যা আমাদের দেহ গঠনে ও ক্ষয়প্রাপ্ত কোশের পুনর্গঠনে সাহায্য করে । এছাড়া যে ভিটামিনগুলি আমরা শাকসবজির মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকি সেগুলিও জৈব যৌগ । এই ভিটামিন আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ করে দেহকে সতেজ রাখে ।      

[ii] জীবদেহের রাসায়নিক পরিবর্তনে জৈব যৌগের ভূমিকা : জীবদেহে যে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে তাতে উৎসেচক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এই উৎসেচকগুলি জৈব যৌগ । এরা অনুঘটকের কাজ করে ।

[iii] হিমোগ্লোবিন একটি জৈব যৌগ : হিমোগ্লোবিন একটি প্রোটিন জাতীয় জৈব পদার্থ । যা মেরুদন্ডী প্রাণীদেহে অক্সিজেন বহন করে ।

[iv] প্রাণীর গমন ও পেশী সঞ্চালনে জৈব যৌগের ভূমিকা : প্রাণীর গমন এবং দেহের পেশী সঞ্চালন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি, স্থিতিশক্তি হিসাবে দেহের মধ্যে অ্যাডিনোসিন ট্রাই-ফসফেট (ATP) নামক জৈব যৌগের মধ্যে জমা থাকে । 

[v] প্রাণীর জীবনধারা ও বংশবৃদ্ধিতে জৈব যৌগের ভূমিকা : প্রাণীর জীবনধারা বা বংশবৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ রাখতে ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA) এবং রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (RNA) সাহায্য করে । এগুলি সব জটিল জৈব যৌগ ।

[vi] হরমোন একটি জৈব পদার্থ : প্রাণীর বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন (Hormone) একরকম জৈব পদার্থ, যা দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায় ।  

[vii] রোগ নিরাময়ে জৈব যৌগের ভূমিকা : নানারকম জৈব যৌগ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয় । যেমন ; ম্যালেরিয়ায় কুইনাইন, নিউমোনিয়ায় পেনিসিলিন, যক্ষ্মায় স্ট্রেপটোমাইসিন, টাইফয়েডে ক্লোরোমাইসিটিন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় । ক্লোরোফর্ম, ইথার প্রভৃতি চেতনানাশক পদার্থ অস্ত্রোপচারকে যন্ত্রণা শূন্য করেছে ।            

[viii] মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে ব্যবহৃত নানান জৈব যৌগ : মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে সাবান, বিভিন্ন অঙ্গরাগ ও রঞ্জক পদার্থ, কৃত্রিম সিল্ক, নাইলন, টেরিলিন, প্রভৃতির আবিষ্কার জৈব রসায়নের অবদান । এছাড়া পেট্রল, কেরোসিন, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জৈব যৌগ জ্বালানী হিসেবে সভ্যতায় যুগান্তর সৃষ্টি করছে ।    

*****

Related Items

কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ

কপার সালফেট জলে আয়নিত হয়ে কপার (+) এবং সালফেট (-) আয়ন উত্পন্ন করে । সুতরাং, জলীয় দ্রবণে চার প্রকার আয়ন থাকে, দুধরনের ক্যাটায়ান H (+) ও Cu (+) এবং দু ধরনের অ্যানায়ন OH (-) ও সালফেট (-) ।

জলের তড়িৎ-বিশ্লেষণ

বিশুদ্ধ জল তড়িতের কুপরিবাহী, কিন্তু সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার জলে মেশালে ওই জল তড়িতের সুপরিবাহী হয় । এর কারণ হল বিশুদ্ধ জলে খুব কম সংখ্যক অণু H+ এবং OH- আয়নে বিশ্লেষিত অবস্থায় থাকে । ওই জলে সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার যোগ করলে এদের আয়ন ...

তড়িৎ-বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ

যেসব পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে নিজেরা রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই সব পদার্থকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে ।

তড়িৎ-পরিবাহী এবং তড়িৎ-অপরিবাহী

যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহিত করলে তা তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম হয়, তাদের তড়িৎ-পরিবাহী পদার্থ বলে । যেমন; সোনা, রুপো, তামা, প্রভৃতি ধাতু, গ্রাফাইট, সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ ইত্যাদি । তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম এমন পদার্থগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় --

জারণ ও বিজারণ একসঙ্গে ঘটে

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জারণ ও বিজারণ প্রক্রিয়া একই সঙ্গে ঘটে । অর্থাৎ, জারণ ও বিজারণ ক্রিয়া পরস্পরের পরিপূরক । কোনো বিক্রিয়ায় জারণ-ক্রিয়া ঘটলেই বিজারণ ক্রিয়াও ঘটবে । এই রকম রাসায়নিক বিক্রিয়াকে রেডক্স বিক্রিয়া বলা হয় । ...