জীবনক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভূমিকা (Role of Organic Compounds in Life Process) :
প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহের বেশির ভাগ অংশ জৈব যৌগ দিয়ে গঠিত । তাই জীব জগতে জৈব যৌগের দান অতুলনীয় । জীবন ক্রিয়ার সঙ্গে জৈব যৌগ গভীর ভাবে জড়িত । জীবদেহের জীবনক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য জৈব যৌগের ভূমিকা অপরিসীম । জীবজগতে প্রত্যেক জৈবিক ক্রিয়ার কারণ হল জীবদেহে জৈব যৌগের ক্রিয়া ।
[i] দেহের পুষ্টি সাধন, বৃদ্ধি ও গঠনে জৈব যৌগের ভূমিকা :- দেহের পুষ্টি, বৃদ্ধি, গঠন ও রোগ-প্রতিরোধের জন্য আমরা যে সমস্ত খাদ্য গ্রহণ করি তাদের প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় । এরা সবই জৈব যৌগ ।
(ক) কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় পদার্থ : চাল, গম, আলু, ভুট্টা, চিনি, গ্লুকোজ প্রভৃতি শর্করা জাতীয় পদার্থ । এসব খাদ্য দেহে রক্তের সঙ্গে মিশে পুষ্টি ও শক্তি যোগায় ।
(খ) স্নেহ জাতীয় পদার্থ : তেল, মাখন, ঘি প্রভৃতি স্নেহজাতীয় পদার্থ । এগুলি দেহে তাপ ও শক্তি যোগায় ।
(গ) আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় পদার্থ : মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি প্রাণীজ প্রোটিন এবং মুসুর, মগ, ছোলা, সয়াবীন প্রভৃতি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন । এই প্রোটিন আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে অ্যামাইনো অ্যাসিড উৎপন্ন করে যা আমাদের দেহ গঠনে ও ক্ষয়প্রাপ্ত কোশের পুনর্গঠনে সাহায্য করে । এছাড়া যে ভিটামিনগুলি আমরা শাকসবজির মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকি সেগুলিও জৈব যৌগ । এই ভিটামিন আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ করে দেহকে সতেজ রাখে ।
[ii] জীবদেহের রাসায়নিক পরিবর্তনে জৈব যৌগের ভূমিকা : জীবদেহে যে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে তাতে উৎসেচক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এই উৎসেচকগুলি জৈব যৌগ । এরা অনুঘটকের কাজ করে ।
[iii] হিমোগ্লোবিন একটি জৈব যৌগ : হিমোগ্লোবিন একটি প্রোটিন জাতীয় জৈব পদার্থ । যা মেরুদন্ডী প্রাণীদেহে অক্সিজেন বহন করে ।
[iv] প্রাণীর গমন ও পেশী সঞ্চালনে জৈব যৌগের ভূমিকা : প্রাণীর গমন এবং দেহের পেশী সঞ্চালন করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি, স্থিতিশক্তি হিসাবে দেহের মধ্যে অ্যাডিনোসিন ট্রাই-ফসফেট (ATP) নামক জৈব যৌগের মধ্যে জমা থাকে ।
[v] প্রাণীর জীবনধারা ও বংশবৃদ্ধিতে জৈব যৌগের ভূমিকা : প্রাণীর জীবনধারা বা বংশবৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ রাখতে ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA) এবং রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (RNA) সাহায্য করে । এগুলি সব জটিল জৈব যৌগ ।
[vi] হরমোন একটি জৈব পদার্থ : প্রাণীর বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন (Hormone) একরকম জৈব পদার্থ, যা দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায় ।
[vii] রোগ নিরাময়ে জৈব যৌগের ভূমিকা : নানারকম জৈব যৌগ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয় । যেমন ; ম্যালেরিয়ায় কুইনাইন, নিউমোনিয়ায় পেনিসিলিন, যক্ষ্মায় স্ট্রেপটোমাইসিন, টাইফয়েডে ক্লোরোমাইসিটিন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় । ক্লোরোফর্ম, ইথার প্রভৃতি চেতনানাশক পদার্থ অস্ত্রোপচারকে যন্ত্রণা শূন্য করেছে ।
[viii] মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে ব্যবহৃত নানান জৈব যৌগ : মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে সাবান, বিভিন্ন অঙ্গরাগ ও রঞ্জক পদার্থ, কৃত্রিম সিল্ক, নাইলন, টেরিলিন, প্রভৃতির আবিষ্কার জৈব রসায়নের অবদান । এছাড়া পেট্রল, কেরোসিন, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জৈব যৌগ জ্বালানী হিসেবে সভ্যতায় যুগান্তর সৃষ্টি করছে ।
*****
- 2473 views