গ্যাসের অণুর গতি

Submitted by arpita pramanik on Wed, 01/09/2013 - 21:28

গ্যাসের অণুর গতি (Motion of gas molecules) :

গ্যাসের গতি সম্বন্ধীয় অঙ্গীকারগুলি (assumptions) হল :

[i] গ্যাসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুগুলি সব কঠিন স্থিতিস্থাপক গোলক ।

[ii] একই গ্যাসের সব অণুগুলি একরকম ।

[iii] গ্যাসের অণুগুলির মোট আয়তন গ্যাসের আয়তনের তুলনায় নগণ্য ।

[iv] গ্যাসের অণুগুলির মধ্যে কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল কাজ করে না— তাই এদের কোনো স্থিতিশক্তি নেই এদের শক্তি সম্পূর্ণভাবে গতিশক্তি ।

[v] অণুগুলি সতত গতিসম্পন্ন এবং নিজেদের সঙ্গে সংঘর্ষ স্থিতিস্থাপক হওয়ায় ভরবেগ ও গতিশক্তি সংরক্ষিত থাকে ।

[vi] অণুগুলির মধ্যে সংঘর্ষ তাৎক্ষণিক ।

[vii] পরপর দুটি সংঘর্ষের মধ্যে পথগুলি সরলরেখা— ওই দুরত্বকে মুক্তপথ (Free path) বলে ।

আণবিক গতির পক্ষে প্রমাণ (Evidences in favour of molecular motion) :

[i] গ্যাসের প্রসারণশীলতা ধর্মের দরুন সামান্য পরিমাণ গ্যাস যে-কোনো আকারের পাত্রের সর্বত্র দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ।

[ii] ব্যাপন ধর্মের জন্য ঘরের মধ্যে রাখা এক ফোঁটা সুগন্ধি তেল মুহুর্তের মধ্যে ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে ।

[iii] কোনো পাত্রে আবদ্ধ গ্যাস অণুগুলি দ্রুত বেগে যেতে যেতে পাত্রের দেওয়ালে ধাক্কা দেয়, ফলে পাত্রের দেওয়ালে চাপের সৃষ্টি হয় । এই সব ঘটনা প্রমাণ করে যে গ্যাসের অণুগুলি সতত গতিশীল অবস্থায় থাকে ।

গ্যাসের চাপের ওপর গ্যাস-অণুর গতির প্রভাব (Dependence of pressure on motion of gas molecules) :

গ্যাস-অণুগুলির গতিশক্তি থাকার জন্য অণুগুলি অবিরত পাত্রের দেওয়ালে আঘাত করতে থাকে । ফলে ভরবেগের পরিবর্তন ঘটে এবং পাত্রের দেওয়ালে চাপের সৃষ্টি হয় । পাত্রের দেওয়ালের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের ওপর সংঘর্ষজনিত বলের পরিমাপই হল গ্যাসের চাপ । অণুগুলির গতি বৃদ্ধি পেলে চাপও বেড়ে যায় । এভাবে সৃষ্ট চাপের পরিমাণ অণুগুলির গড় গতিবেগের ওপর নির্ভর করে । গড় গতিবেগ তিনগুণ হলে চাপ নয়গুণ বেড়ে যাবে । এক কথায় গ্যাস-অণুর গতিবেগ হল কারণ এবং চাপ হল তার ফল । 

গ্যাসের উষ্ণতার ওপর গ্যাস-অণুর গতির প্রভাব (Dependence of temperature on motion of gas molecules) :

গ্যাস-অণুগুলির গতির মান বাড়লে গ্যাসটির উষ্ণতা বাড়ে, আবার গতি কমলে উষ্ণতা কমে যায় । এর কারণ হল— গ্যাস-অণুগুলির গতি বাড়লে গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং এই বাড়তি গতিশক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় । গ্যাসের গতীয় তত্ত্ব থেকে দেখানো যায় যে, প্রতি গ্যাস-অণুর গড় গতিশক্তি গ্যাসের পরম উষ্ণতার সমানুপাতিক । অর্থাৎ উষ্ণতা হল গ্যাসের অণুগুলির গতিশক্তির বহিঃপ্রকাশ এবং গ্যাসের প্রতিটি অণুর গড় গতিশক্তি হল উষ্ণতার পরিমাণ

আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাস (Ideal gas and real gas) :

আদর্শ গ্যাস (Ideal gas) : গতীয় তত্ত্বের অঙ্গীকারগুলি যেসব গ্যাস পুরোপুরি মেনে চলে তাদের আদর্শ গ্যাস বলে । গ্যাসের গতীয় তত্ত্ব থেকে বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র প্রমাণ করা যায় । অর্থাৎ, যেসব গ্যাস বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র সঠিকভাবে মেনে চলে তাদের সবাই হল আদর্শ গ্যাস

বাস্তব গ্যাস (Real gas) : যেসব গ্যাস বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র সঠিকভাবে মেনে চলে না তাদের বাস্তব বা প্রকৃত গ্যাস বলে । হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি পরিচিত গ্যাসগুলিকে বাস্তব গ্যাস বলে । আসলে আদর্শ গ্যাসের অস্তিত্ব নিছক কল্পনা মাত্র । শুধুমাত্র উচ্চ উষ্ণতায় এবং নিম্নচাপে বাস্তব গ্যাসগুলি প্রায় আদর্শ গ্যাসের মতো আচরণ করে এবং আদর্শ গ্যাস সমীকরণগুলি মেনে চলে ।

*****

Related Items

গাণিতিক প্রশ্নোত্তর : অ্যাভোগাড্রোর সূত্র

অ্যাভোগাড্রো সূত্র সম্পর্কিত গাণিতিক প্রশ্নোত্তর ও তার সমাধান এখানে দেওয়া হলো । বিভিন্ন পরীক্ষায় আগত প্রশ্নোত্তর আলোচনা ও তার সমাধান ...

অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের অনুসিদ্ধান্ত

অ্যাভোগাড্রোর সূত্র থেকে নিম্নলিখিত অনুসিদ্ধান্তগুলি পাওয়া যায়— নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলি ছাড়া অন্যান্য মৌলিক গ্যাসগুলি (যেমন— হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি) দ্বি-পরমাণুক । কোনো গ্যাসের আণবিক ভর [M] গ্যাসটির বাষ্প ঘনত্বের [D] দ্বিগুণ অর্থাৎ, M = 2D ।

আণবিক ভর ও গ্রাম-পারমাণবিক ভর

আণবিক ভর ও গ্রাম-পারমাণবিক ভর :

আণবিক ভর (Molecular mass) :

কোনো মৌল বা যৌগের একটি অণু একটি কার্বন -12 (C12) পরমাণুর ভরের 1/12 অংশের তুলনায় যতগুণ ভারী, সেই তুলনামূলক সংখ্যাটিকে ওই মৌল বা যৌগের আণবিক ভর বলে

অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প

একই চাপ ও উষ্ণতায় সম-আয়তন সকল গ্যাসের মধ্যে সমান সংখ্যক অণু থাকে । বার্জিলিয়াসের প্রকল্প সংশোধন করে অ্যাভোগাড্রো এই প্রকল্পটি প্রকাশ করেন । এটি অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প নামে খ্যাত । অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের সাহায্যে গ্যাস-আয়তন সূত্র এবং পরমাণুবাদের মধ্যে সমন্বয় ...

অণুর ধারণা ও প্রকারভেদ

বিজ্ঞানী ডালটনের পরমাণুবাদের মূল কথা হল— প্রত্যেক মৌলিক পদার্থ বহু সংখ্যক অতি ক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণা দিয়ে গঠিত । এই ক্ষুদ্রতম কণাগুলির নাম হল পরমাণু । রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলি পূর্ণ সংখ্যার সরল অনুপাতে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে । ...