কৃত্রিম পলিমার ব্যবহারের সমস্যা ও নিয়ন্ত্রণ

Submitted by arpita pramanik on Mon, 04/22/2013 - 23:14

কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার ব্যবহারের সমস্যা (Hazards of using systhetic polymers) :

কৃত্রিম পলিমার থেকে প্রস্তুত বস্তুসামগ্রীর ব্যবহার যথেচ্ছভাবে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে । পলিথিন ও টেফলন থেকে তৈরি ব্যাগ ও প্লাস্টিকের থলি এবং অন্যান্য সামগ্রী আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু হয়ে উঠেছে । প্লাস্টিক এমন একটি দূষক যা প্রকৃতিতে দীর্ঘদিন অবিকৃত থাকে, পচে যায় না এবং প্রকৃতিতে বর্তমান ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাস দ্বারা বিয়োজিত হয় না (non-biodegradable) । ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেলে প্লাস্টিকের সামগ্রীগুলিকে বর্জ্য পদার্থ হিসাবে ব্যবহারকারীরা যেখানে সেখানে ফেলে দেয় । ফলে দেখা যায় যে, নর্দমাগুলি প্লাস্টিকের জিনিস দিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং নোংরা জল ও বস্তুগুলি নিষ্কাশিত হতে পারছে না । পরিণামে আশপাশের এলাকাগুলি নোংরা জলে প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে ও এলাকার পানীয় জলের উৎসগুলিতে নোংরা জল মিশে গিয়ে জলাধারের বিশুদ্ধ জলকে দূষিত করছে এবং আন্ত্রিক ও নানা রকম রোগের প্রকোপ বাড়ছে । বদ্ধ ও নোংরা জলে মশা ও মাছি এবং নানা ধরনের ক্ষতিকারক কীটের দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ঘটছে । এই সব কীট ও মশামাছি নানা রকম দূরারোগ্য ব্যাধি, যেমন— ম্যালেরিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড ও কলেরার জীবাণু লোকালয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে মানুষ ও গৃহপালিত জীবজন্তু মারাত্বক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের অকাল মৃত্যু ঘটছে । জলাশয়ে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক অবিকৃত অবস্থায় জলাশয়ে জমা হয় । জলাশয়ের মাছ ও প্রাণী প্লাস্টিকের টুকরো খেয়ে ফেলতে পারে এবং সেগুলি ক্রমাগত তাদের পাকস্থলিতে জমা হওয়ার ফলে তারা কিছু খেতে পারে না । তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও খাদ্যের অভাবে তারা মারা যায় । যে প্রাণী ওই সব মরে যাওয়া মাছ ও জলজ প্রাণীদের খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে তারাও প্লাস্টিকের দূষণে আক্রান্ত হয় । রাস্তায়, মাঠে এবং যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিকের টুকরো অপরিচ্ছন্ন এবং দূষিত আবহাওয়ার কারণ হয়ে ওঠে । মাটির নীচে জমে থাকা প্লাস্টিকের দরুন উদ্ভিদ সহজভাবে মাটি থেকে জলীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না, ফলে কৃষিকার্যেও স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয় ।

দুষণ নিয়ন্ত্রণের সম্ভাব্য উপায় এবং বিকল্প ব্যবস্থা (Possible remedial measures and alternatives) :

[i] পলিথিন ও প্লাস্টিক এবং পলিমারজাত অন্যান্য বস্তু সামগ্রী পচনশীল নয়, তাই বর্জ্য পলিথিন ও প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বস্তুগুলিকে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে নষ্ট করা দরকার । এই প্রক্রিয়াটি যথেচ্ছ ভাবে না করে নিয়ন্ত্রিত ভাবে করা দরকার, কারণ এর ফলে আবার পরিবেশ দূষিত হয় ।

[ii] বর্জ্য পদার্থগুলিকে আবর্তনশীল পদ্ধতিতে আবার ব্যবহারের উপযোগী করে তা থেকে নানা ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করা প্রয়োজন, এইভাবে প্লাস্টিকের দ্বারা সৃষ্ট দূষণ কিছুটা কমানো যায় ।

[iii] গৃহস্থালির কাজকর্মে আবর্জনা যাতে কম সৃষ্টি হয় সেই চেষ্টা করা উচিত । নির্দিষ্ট জায়গায় আবর্জনা ফেলার অভ্যাস করা প্রত্যেক নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য হওয়া উচিত ।

[iv] জানুয়ারি 2002 খ্রিস্টাব্দে আইন করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার 20 মাইক্রন বেধের কম প্লাস্টিকের থলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে । জনসাধারণকেও এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে ।

[v] কলকাতা পৌরসভা এবং অন্যান্য অনেক পৌরসভা তাদের কর্মীদের সাহায্যে গৃহস্থ বাড়ি থেকে প্রতিদিন বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে নিয়ে যাবার এবং সেগুলিকে নির্দিষ্ট নিরাপদ জায়গায় ফেলার ব্যবস্থা করেছে । পলিথিন ও প্লাস্টিকের দ্বারা সৃষ্ট দূষণ সম্বন্ধে নিজেকে অবহিত হতে হবে এবং প্রতিবেশীকেও বোঝাতে হবে । তা না হলে এই পৃথিবী একদিন বিষাক্ত বায়ু,  দূষিত জল, ক্ষতিকারক কীটে ভরা মাটি ও রোগ জীবাণুতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে । তখন সমগ্র পৃথিবীটাই হবে যে-কোনো প্রাণীর সামান্যতম সুস্থভাবে বেঁচে থাকার পক্ষে প্রতিকূল স্থান । তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থে ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে দূষণমুক্ত সুন্দর এক পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট হতে হবে ।

*****

Related Items

তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার, দুষণ ও সতর্কীকরণ

তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি নিউক্লীয় ঘটনা । প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গনের ফলে যে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সৃষ্টি হয় তাকে চিকিত্সাবিজ্ঞান, কৃষিকার্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । রোগ নির্ণয় এবং রোগ ...

তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন গবেষণার পর তেজস্ক্রিয়তা সম্বন্ধে নীচের বিষয়গুলি জানা যায় । তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি নিউক্লীয় ঘটনা [nuclear phenomenon] । এর সঙ্গে নিউক্লিয়াস বহির্ভূত ইলেকট্রনের কোনো সম্পর্ক নেই । যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 83 -এর বেশি হয়, কেবলমাত্র তারাই ...

প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা ও তেজস্ক্রিয় রশ্মিসমূহের ধর্মাবলী

মৌলগুলি থেকে নিঃসৃত এই জাতীয় শক্তিশালী রশ্মিকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বলা হয় । বিভিন্ন মৌল দ্বারা তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিঃসরণের এই ঘটনাকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা বলা হয় । যেসব পদার্থ থেকে এই রশ্মি বিকিরিত হয় সেই পদার্থগুলিকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ...

এক্স-রশ্মি ও সাধারণ আলোক-রশ্মির তুলনা

এক্স-রশ্মি এবং আলোক-রশ্মি উভয়েই তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ । শূন্য মাধ্যমে আলোক-রশ্মি এবং এক্স-রশ্মি উভয়ের বেগ (3 x 108 মিটার / সেকেন্ড) । উভয় রশ্মিই সরলরেখায় যায় । বিশেষ ব্যবস্থায় আলোক-রশ্মির মতো এক্স-রশ্মির প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ হয় । উভয় রশ্মিই ফটোগ্রাফিক ...

এক্স-রশ্মির ধর্ম ও এর ব্যবহার

এক্স-রশ্মি এক প্রকার তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ হওয়ায় তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্রের দ্বারা এই রশ্মির গতিপথের কোনো বিচ্যুতি ঘটে না । এক্স-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক কম। এই রশ্মি মানুষের চোখে অনুভূতি জন্মায় না । কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মিকে কঠিন এক্স-রশ্মি ...