ভৌতরাশির দৈর্ঘ্য পরিমাপে সাধারণ রৈখিক স্কেলের ব্যবহার (Measurement of length with ordinary linear scale)
বিভিন্ন ভৌতরাশির [Physical quantity] দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য ব্যবহারিক জীবনে আমরা যে সমস্ত যন্ত্র ব্যবহার করি তার মধ্যে সাধারণ রৈখিক স্কেল (Ordiary linear scale) হল অন্যতম ।
সাধারণ রৈখিক স্কেল (Ordiary linear scale ) : দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রকে রৈখিক স্কেল বলা হয় । স্কেল সাধারণত প্লাস্টিক, কাঠ বা ধাতুর তৈরি হয় এবং এর দৈর্ঘ্য বরাবর একধারে মিলিমিটার ও সেন্টিমিটারে এবং ওপর ধারে ইঞ্চি ও তার ভগ্নাংশে দাগ কাটা থাকে ।
সাধারণ স্কেলের ব্যবহার : স্কেলটিকে রেখাংশের উপর এমন ভাবে বসাতে হবে যেন স্কেলের দাগ কাটা ধার রেখাংশের সঙ্গে সমাপতিত হয় । রেখাংশের বাম প্রান্তকে স্কেলের নির্দিষ্ট দাগের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে ডান প্রান্তে স্কেলের সঙ্গে লম্বভাবে তাকিয়ে পাঠ নেওয়া হয় । দুই প্রান্তের পাঠের ব্যবধানই রেখাংশটির দৈর্ঘ্য ।
সাধারণ স্কেলে দৈর্ঘ্য পরিমাপের সীমা : আমরা যে সব স্কেল ব্যবহার করি তা মিলিমিটারে অংশাঙ্কিত ধারে ক্ষুদ্রতম এক ঘর 1 মিলিমিটার এবং ইঞ্চিতে অংশাঙ্কিত ধারে ক্ষুদ্রতম এক ঘর 0.1 ইঞ্চি হয় । তাই এই ন্যূনতম 1 মিলিমিটার বা 0.1 ইঞ্চি দৈর্ঘ্য সঠিক ভাবে পরিমাপ করা যায় । 1 ফুট দৈর্ঘ্যের স্কেলে, স্কেলের একধারে 30 সেমি এবং অপরধারে 12 ইঞ্চি পর্যন্ত দাগ কাটা থাকে বলে সর্বোচ্চ ওই দৈর্ঘ্য মাপা সম্ভব ।
সাধারণ রৈখিক স্কেলে দৈর্ঘ্য পরিমাপে ত্রুটি : সাধারণ স্কেলে দৈর্ঘ্য পরিমাপে বিভিন্ন ত্রুটি গুলি হল –
(1) চোখের আন্দাজ জনিত ত্রুটি : দৈর্ঘ্য পরিমাপের সময় বামদিকের পাঠ নির্দিষ্ট দাগে বসলেও ডানদিকের পাঠ নির্দিষ্ট দাগে নাও মিলতে পারে । সেক্ষত্রে ডানদিকের পাঠ চোখের আন্দাজে ঠিক করতে হয় । ফলে পাঠে যে ত্রুটি আসে তাকেই চোখের আন্দাজ জনিত ত্রুটি বলা হয় । সাধারণ স্কেলে এই ত্রুটির সম্ভাবনা থেকেই যায় ।
(2) যান্ত্রিক ত্রুটি : স্কেলের ক্ষুদ্রতম ঘর গুলি সমান সমান ফাঁক বিশিষ্টি না হলে এই ত্রুটি আসে । এরূপ স্কেলের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে দৈর্ঘ্য মেপে গড় নিলে এই ত্রুটি যথা সম্ভব কমানো যায় ।
(3) লম্বন ত্রুটি : স্কেলের পাঠ নেওয়ার সময় আমাদের দৃষ্টি রেখাকে স্কেলের সঙ্গে লম্বভাবে না রেখে তীর্যকভাবে রাখা হলে পাঠে যে ত্রুটি থাকে তাকে লম্বন ত্রুটি বলে । পাঠ নেওয়ার বিন্দুতে দৃষ্টি রেখাকে লম্বভাবে স্থাপন করলে এই ত্রুটি দূর করা সম্ভব হয় ।
উষ্ণতার পরিবর্তনে ধাতব দন্ডের প্রসারণ বা সংকোচন কাঠের বা প্লাস্টিক দন্ডের প্রসারণ বা সংকোচনের তুলনায় অনেক বেশি । সেজন্য সাধারণ স্কেল ধাতুর না করে প্লাস্টিক বা কাঠের করাই শ্রেয় । ধাতুর স্কেলে পরিমিত দৈর্ঘ্য শীতকালে এবং গ্রীষ্মকালে ভিন্ন হবে অর্থাৎ, পরিমাপে ত্রুটি থাকার সম্ভাবনা থাকে ।
রৈখিক স্কেলের সাহায্যে বক্ররেখার দৈর্ঘ্য পরিমাপ : একটি লম্বা সুতো নিয়ে রেখাটির সঙ্গে মিলিয়ে তার উপর রাখতে হবে এবং রেখাটির দুপ্রান্তকে সুতোয় চিহ্নিত করতে হবে । এরপর সুতোটিকে টানটান করে ধরে চিহ্নিত দাগ দুটির মাঝের দূরত্ব স্কেলের সাহায্যে মেপে নিলে বক্ররেখার সঠিক দৈর্ঘ্য মাপা যায় ।
রৈখিক স্কেলের সাহায্যে পাতলা কাগজের বেধ পরিমাপ : একটি বড়ো পাতলা কাগজ নিয়ে অনেকবার ভাঁজ করে নিতে হবে । এবার ভাঁজ করা মোটা অংশটির বেধ স্কেল দিয়ে মেপে নিতে হবে । প্রাপ্ত বেধ কে ভাঁজ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলেই পাতলা কাগজের বেধ জানা যায় । যদি n সংখ্যক ভাঁজের মোট বেধ d হয় তবে পাতলা কাগজটির বেধ = [tex]\frac {d}{n}[/tex] ।
*****