ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women's Participation in the Quit India Movement):-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দোলন ধীরে ধীরে দেশ জুড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয় । আন্দোলন ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হলে সর্বস্তরের ভারতবাসীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য নারীরাও সক্রিয়ভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শামিল হয় । জাতীয় স্তরে সুচেতা কৃপালনী, নন্দিতা কৃপালানি ও অরুণা আসফ আলির মতো ব্যক্তিত্ব নেতৃত্বে এগিয়ে এসে নারীদের সংগঠিত করে এই আন্দোলনে শামিল করেন । পাঞ্জাবের (বর্তমানে হরিয়ানা) সুচেতা কৃপালনী নারীদেরকে গোপনে সংগঠিত করার কাজে এবং পাঞ্জাবের গৃহবধু অরুণা আসফ আলি বৈপ্লবিক কাজকর্মের প্রসারে নিয়োজিত হন । অরুণা আসফ আলির নেতৃত্বে বোম্বাইয়ে আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে । গুজরাটের ঊষা মেহতা গোপনে জাতীয় কংগ্রেসের বেতারকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন ।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বাংলার নারীরা বিশেষ গৌরবজনক ভূমিকা পালন করেন । এই আন্দোলন চলাকালে বাংলার মেদিনীপুরে গঠিত হয় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার । তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের সঙ্গে যুক্ত নারী স্বেচ্ছাসেবীকাদের নিয়ে গঠিত হয় ভগিনী সেনা । ৭৩ বছর বয়স্কা মাতঙ্গিনি হাজরা যিনি 'গান্ধিবুড়ি' নামে খ্যাত মেদিনীপুরের তমলুক থানা ঘেরাও অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন । শান্তিনিকেতনের নন্দিতা কৃপালানি, রানি চন্দ, এলা দত্ত, সুমিতা সেন, শান্তি দাশগুপ্ত প্রমূখ ছাত্রী বীরভূমে ভারতছাড়ো আন্দোলনের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ও কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন । আসামের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফুকননী ভারত ছাড়ো আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন । অসমিয়া তরুণী কনকলতা বড়ুয়া, করাচির কিশোরী হেমু কালানি ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন ।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছে । আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গান্ধিজি মন্তব্য করেছেন যে,"ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস লেখার সময় নারীদের বীরত্বের কথা সর্বাধিক স্থান দখল করবে ।"
*****