Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 01/05/2021 - 22:43

বর্তমান ভারত (Bartaman Bharat) :-

'বর্ত্তমান ভারত' স্বামী বিবেকানন্দের লেখা একটি প্রবন্ধ । ১৮৯৭ সালে বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণ করেন । তারপর ১৮৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বাংলা মুখপত্র 'উদ্বোধন' পত্রিকা চালু করেন । এই পত্রিকার প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে কয়েকটি সংখ্যায় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দের লেখা 'বর্তমান ভারত' ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রবন্ধটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ও পরে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা সংকলনের ষষ্ঠ খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হয় । ঔপনিবেশিক আমলে 'বর্তমান ভারত' গ্রন্থটি  ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ভারতবর্ষের ইতিহাস বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এই গ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায় । এই গ্রন্থে স্বামীজি ভারতে আগত জাতিসমূহের দ্বারা এদেশের আচার-ব্যবহার কার্যপ্রণালীর পরিবর্তন ও তার ভবিষ্যৎ -এর ওপর আলোকপাত করেছেন । এই গ্রন্থে প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন দিক বর্ণনার পাশপাশি ইংরেজদের এদেশ অধিকার, সমাজে বৈশ্যশক্তির অভ্যুদয়, পুরোহিতদের অবস্থান, ক্ষত্রিয় শক্তির স্বরূপ, ভারতের শাসন প্রণালীর দোষ-গুণ, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সংঘর্ষ, স্বদেশমন্ত্র—"আমায় মানুষ কর" প্রভৃতি বিষয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।

'বর্তমান ভারত' গ্রন্থটি শুধু মাত্র সমাজতাত্ত্বিক ইতিহাস নয়, এটি একটি দর্শন গ্রন্থ । প্রাচীন ভারতের বৈদিক যুগের পর ব্রাহ্মণ্য শক্তির আধিপত্যের সময় থেকে আধুনিক যুগের শূদ্র জাগরণের সময় পর্যন্ত ভারতীয় ধর্ম ও সমাজজীবনের সারকথা এই গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে । শূদ্রজাগরণ বলতে স্বামী বিবেকানন্দ সাধারণ মানুষের উত্থানকে চিহ্নিত করেছেন । এই গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ দেশবাসীকে স্বদেশ মন্ত্রে দীক্ষিত করতে চেয়েছেন । তিনি পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরমুখাপেক্ষা প্রভৃতি দাসসুলভ দুর্বলতা ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন ও সমাজের সকলকে নিজের ভাই বলে ভাবতে শিখিয়েছেন । তিনি পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ না করার কথাও বলেছেন ।

স্বামীজি বলেছেন রামচন্দ্র, অশোক বা আকবরের মত প্রজা কল্যাণকামী শাসকের ভীষণ অভাব । তিনি বলেছেন বৌদ্ধ বিপ্লবের পর ব্রাহ্মণ্যশক্তির বিনাশের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে রাজশক্তির সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে । স্বামীজির ধারণায় বিদ্যা, অস্ত্র ও অর্থ এই তিন বলের প্রভাবেই সমাজে যথাক্রমে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের আধিপত্য গড়ে উঠেছে । প্রথম দিকে বৈদিক ব্রাহ্মণ পুরোহিতেরা কিভাবে সমাজকে শাসন করতেন, তারপর কিভাবে ক্ষমতাশালী যোদ্ধারা সমাজের নেতৃস্থানে এলেন এবং শেষে কিভাবে বৈশ্যদের ক্ষমতা বাড়ল, এই সব আলোচনার পর লেখক বলেছেন যে, চক্রাকার পথে বৈশ্যের পর ভারতীয় সমাজ শূদ্রের অধীনে আসতে বাধ্য । এই গ্রন্থে স্বামীজি প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সংঘর্ষের স্বরূপ বর্ণনা করেছেন ।

স্বামীজি আলোচ্য গ্রন্থেে মানুষ হয়ে ওঠার পথ নির্দেশ করেছেন । তার মতে সীতা, সাবিত্রী ও দময়ন্তী হলেন ভারতীয় নারীর আদর্শ । নারী জাতির প্রতি সম্মান রক্ষার পাশাপাশি দেশবাসীকে স্বদেশ মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন । স্বামীজি বলেছেন, ভুলে গেলে চলবে না যে, আমরা সকলেই জন্ম থেকে মাতৃভূমির জন্য আত্মবিসর্জন দিতে প্রস্তুত । আমাদের সমাজের নীচু জাতিভুক্ত, মুর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ মানুষেরা সকলেই আমাদের কাছে ভাইয়ের মতো । তিনি আরও বলেছেন, সমস্ত ভারতবাসীই আমার প্রাণ, ভারতের সমাজ আমাদের জীবনের সবকিছু । তিনি ভারতবাসীকে ভারতের মাটিকে স্বর্গ মনে করতে এবং ভারতের কল্যাণকে নিজের কল্যাণ ভাবতে বলেন ।

*****

Comments

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?