উনিশ শতকের বাংলা — সমাজ সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 12/04/2020 - 19:34

উনিশ শতকের শুরুর দিকে বাংলায় ব্রিটিশ শাসন সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় । সেই সময় বাংলার সমাজজীবনে চরম দুর্দিন চলছিল । হিন্দুসমাজে তখন ব্রাহ্মণদের প্রতিপত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল এবং তারাই সমাজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন । হিন্দুসমাজে প্রকট জাতিভেদ প্রথা চালু ছিল । হিন্দুসমাজ ছিল ভীষণ গোঁড়া ও রক্ষণশীল । ব্রাহ্মণরা সমাজের মধ্যমনি হয়ে থাকলেও তাদের মধ্যে সমাজের কুসংস্কার ও কুপ্রথার প্রচলন সবচেয়ে বেশি ছিল । সে সময়কার সমাজের নিম্নশ্রেণির মানুষ নানাভাবে সামাজিক বঞ্চনা ও অত্যাচারের শিকার হত, কিন্তু সমাজের কুসংস্কার ও কুপ্রথা বা নানাবিধ সামাজিক বিধিনিষেধ তাদেরকে তেমন গভীরভাবে স্পর্শ করেনি । ব্রিটিশ শাসক হিন্দু সমাজের কুপ্রথাগুলি নিয়ে প্রথমদিকে তেমনভাবে মাথা ঘামায় নি বা তারা হিন্দুদের সামাজিক জীবনে হস্তক্ষেপ করতে চায়নি । কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল এতে হস্তক্ষেপ করলে স্থানীয় মানুষ অসন্তুষ্ট হতে পারে ।

উনিশ শতকের বাংলায় সামাজিক আন্দোলনের তিনটি ধারা লক্ষ্য করা যায় । প্রথম ধারার বৈশিষ্ট্য হল প্রাচীন সনাতন হিন্দু সমাজ-ব্যবস্থাকে ধরে রাখার জন্য হিন্দুসমাজে একদল গোঁড়া ও রক্ষণশীল মানুষ উঠে পড়ে লেগেছিল । পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রভাবে যাতে হিন্দুদের সাবেকি সমাজব্যবস্থা ভেঙে না পড়ে এবং হিন্দুসমাজের বিভিন্ন রক্ষণশীল কুপ্রথা ও নিষ্ঠুর ব্যবস্থাগুলিকে রক্ষা করতে তারা সর্বদা সচেষ্ট ছিল । তারা সর্বপ্রকার সংস্কারের বিরোধী ছিলেন । আর একটি গোষ্ঠী ছিল উচ্চশিক্ষিত ও পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধ অনুকরণকারী । সমাজের প্রগতিশীল এই সমস্ত ছাত্ররা হিন্দুসমাজের কুপ্রথা বা অত্যাচারের কঠোর সমালোচক ছিলেন । কিন্তু সংস্কার আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা ছিল নেতিবাচক । আর তৃতীয়টি হল এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যবর্তী কিছু স্বচ্ছ দৃষ্টি সম্পন্ন, যুক্তিবাদী, উদার ও সংস্কারপন্থী মানুষ ছিলেন । তাঁদের চিন্তাধারা ছিল বাস্তবসম্মত ও প্রগতিশীল । পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সভ্যতা সম্পর্কে তাঁরা যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । দেশীয় সমাজ ও সভ্যতাকে তাঁরা ঘৃণার চোখে দেখতেন না । তাঁরা হিন্দুসমাজকে না ভেঙে শুধুমাত্র সমাজের দোষ-ত্রুটি ও কুপ্রথাগুলির অবসান ঘটিয়ে সমাজের মধ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে চেয়েছিলেন । এঁদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন অগ্রগণ্য । পরে ব্রাহ্মসমাজ এই কাজে কিছুটা সচেষ্ট হয়েছিল ।

******

Related Items

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar)

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar):-

বিশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে । সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজ প্রথমদিকে পরোক্ষভাবে অংশ নি

দীপালি সংঘ (Dipali Sangha)

দীপালি সংঘ (Dipali Sangha):-

বিংশ শতকে জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে জাতীয় আন্দোলগুলি ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণ করতে ব্যর্থ হলে বাংলায় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বৈপ্লবিক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে । এই সময় নারীদের সংগঠিত করে বিপ্লবী কার্যকলাপে শামি

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ (Nature of Women's Role in the Armed Revolution Struggles):-

বিশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে । সশস্ত্র বিপ্

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women's Participation in the Quit India Movement):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women's Participation in the Civil Disobedience Movement):-

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সারা বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় । এই অর্থনৈতিক মন্দা ঔপনিবেশিক ভারতের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে । ভারতের কৃষিজাত পণ্