স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার উৎপত্তি পরস্পর সংযুক্ত কেন ?

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 12/25/2021 - 22:20

প্রশ্ন:- স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার উৎপত্তি পরস্পর সংযুক্ত কেন ?

উত্তর:  ভূপৃষ্ঠের কোনো অংশের শিলাস্তরের চ্যুতির ঝুলন অংশের উত্থান কিংবা বসে যাওয়ার মতো ভূপ্রাকৃতিক ঘটনার ফলেই স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] উৎপত্তি হয় । স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার উৎপত্তি পরস্পর সংযুক্ত কারণ-

১) প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ভূ-ত্বকের [Lithosphere] কোথাও সংকোচন টান আবার কোথাও প্রসারণ চাপ পড়ে। এর ফলে শিলাস্তরে ক্র্যাক বা গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয় । এরপর যদি আবার ভূ-আলোড়ন হয় তবে ওই ফাটল বরাবর শিলার একটি অংশ থেকে আর একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, একে চ্যুতি [Fault] বলে । ভূত্বকের যে রেখা বরাবর চ্যুতির [Fault] সৃষ্টি হয় তাকে চ্যুতিরেখা এবং যে তলে চ্যুতির সৃষ্টি হয়, তাকে চ্যুতিতল বলে ।

২) প্রবল উর্ধ্বচাপ ও নিম্নচাপের ফলে কোনো দুটি চ্যুতির [Fault] মধ্যবর্তী অঞ্চল যখন পাশের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চ্যুতিরেখা বরাবর খাড়াভাবে ওপরে উঠে আসে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল দুটি নীচে বসে যায়, তখন ওপরে উঠে আসা অংশটি স্তূপ পর্বতে [Block Mountain] পরিণত হয় এবং নীচে বসে যাওয়া অংশ দুটি গ্রস্ত উপত্যকা [Rift Valley] রূপে বিরাজ করে । এইভাবে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশের উত্থানের ফলে সৃষ্টি হওয়া স্তূপ পর্বতকে হোর্স্ট (horst) বলা হয়। উদাহরণ, ভারতের সাতপুরা পর্বতটি হল হোর্স্ট জাতীয় স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] উদাহরণ ।

৩) ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের প্রবল চাপের ফলে কোনো সময় দুটি সমান্তরাল চ্যুতিরেখার মধ্যবর্তী অংশ যদি খাড়া ভাবে নীচে বসে গিয়ে গ্রস্ত উপত্যকায় [Rift Valley] পরতিণত হয়, তখন গ্রস্ত উপত্যকাটির দু,পাশের  খাড়া অংশ দুটি স্তূপ পর্বতের আকৃতিপ্রাপ্ত হয়। এই ভাবে সৃষ্টি হওয়া গ্রস্ত উপত্যকাগুলি জার্মানিতে ‘গ্রাবেন’নামে পরিচিত ।

উদাহরণ- ফ্রান্সের ভোজ ও জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট স্তূপ পর্বত দুটি এই ভাবে সৃষ্টি হয়েছে ।

*****

Comments

Related Items

সমুদ্রস্রোত (Ocean Currents)

সমুদ্রস্রোত (Ocean Currents) : সমুদ্রের জলরাশি নিয়মিতভাবে, নির্দিষ্ট দিকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রবাহিত হয় । সমুদ্রজলের এই প্রবাহকে সমুদ্রস্রোত বলে । সমুদ্রস্রোত সাধারণত একমুখী হয় । বায়ুপ্রবাহ দ্বারা তাড়িত হয়ে সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয় বলে এর গতিব

বারিমন্ডল (Hydrosphere)

বারিমন্ডল (Hydrosphere) : সৃষ্টির প্রথম অবস্থায় পৃথিবী ছিল এক উত্তপ্ত জ্বলন্ত মণ্ডল । ধীরে ধীরে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে তরল অবস্থায় আসে এবং অবিরাম তাপ বিকিরণ করে পৃথিবী ক্রমশ শীতল ও সংকুচিত হয় । আর সংকোচনের ফলে ভূপৃষ্ঠের গায়ে উঁচুনীচু আবরণের সৃষ্টি হয় । এই সম

পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চল (Major climatic regions of the world)

পৃথিবীর জলবায়ু অঞ্চল (Major climatic regions of the world) : পৃথিবীর যে সকল অঞ্চলে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মোটামুটি একই ধরনের বা সমধর্মী জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, সেই সকল অঞ্চলকে এক-একটি জলবায়ু অঞ্চল বলা হয় । পৃথিবীর মুখ্য জলবায়ু অঞ্চলগুলি হল —

বিভিন্ন প্রকারের বৃষ্টিপাত (Types of Rainfall)

বিভিন্ন প্রকারের বৃষ্টিপাত (Types of Rainfall) : উৎপত্তির কারণ ও বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য অনুসারে বৃষ্টিপাতকে সাধারণত তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা:- (১) পরিচলন বৃষ্টিপাত, (২) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত এবং (৩) ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত ।

অধঃক্ষেপণ (Precipitation)

অধঃক্ষেপণ (Precipitation) : সূর্যের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, হ্রদ, নদী, পুকুর, খাল, বিল প্রভৃতি জলরাশি থেকে জল জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় । জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস হাল্কা হওয়ার দরুন ঊর্ধগামী হয় । উপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এলে ঘনিভবনের ফলে জলীয়বাষ