রাসায়নিক আবহবিকার কাকে বলে ? রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি বর্ণনা কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 12/27/2021 - 08:36

প্রশ্ন:-  রাসায়নিক আবহবিকার কাকে বলে ? রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি বর্ণনা কর ।

রাসায়নিক আবহবিকার (Chemical Weathering):- যে আবহবিকারের মাধ্যমে শিলা গঠনকারী বিভিন্ন খনিজ পদার্থগুলির ওপর বায়ুমন্ডলের প্রধান উপাদান সমূহ বিশেষ করে অক্সিজেন (O2), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), জ্বলীয় বাষ্প প্রভৃতির বিক্রিয়ার ফলে কঠিন শিলা বিয়োজিত হয় এবং মূল খনিজ পদার্থগুলি নতুন গৌণ খনিজে পরিণত হয়ে মূল শিলা শিথিল হয়ে পড়ে, তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে । বৃষ্টিবহুল উষ্ণ অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকারের প্রাধান্য বেশি পরিলক্ষিত হয় ।

রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির মধ্যে  (১) অঙ্গার যোজন বা কার্বনিকরণ, (২) জারণ, (৩) জলযোজন বা আর্দ্রকরণ, (৪) দ্রবণ এবং (৫) আর্দ্র বিশ্লেষণ [Hydrolysis] উল্লেখযোগ্য ।

(১) অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ [Carbonation] :- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির মধ্যে অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । বিভিন্ন খনিজের সঙ্গে প্রাকৃতিক কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) -এর রাসায়নিক সংযোগের ফলে যে বিক্রিয়া ঘটে তাতে শিলা বিয়োজিত হয় এবং মূল খনিজগুলি নতুন খনিজে পরিণত হয়ে সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । এই প্রক্রিয়াকে অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ বলে । বৃষ্টির জল বায়ুমন্ডলের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার সময় বায়ুমন্ডলে অবস্থিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের সঙ্গে মিলিত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিডে (H2CO3) পরিণত হয় । এই কার্বনিক অ্যাসিড চুনাপাথরের উপর পতিত হয়ে যে বিক্রিয়া ঘটায় তাতে চুনাপাথরের মধ্যস্থিত ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট Ca(HCO3) -এ পরিণত হয় এবং তা সহজেই দ্রবীভূত হয়ে অপসারিত হয় । চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে চুনাপাথর এই প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত এবং ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠন করে । যথা—

(i) [tex]H_2O + CO_2 = H_2OCO_3[/tex]

        জল + কার্বন ডাই-অক্সাইড = কার্বনিক অ্যাসিড

(ii) [tex]H_2CO_3 + CaCO_3 = Ca(HCO_3)_2[/tex]

       কার্বনিক অ্যাসিড + চুনাপাথর = ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট

(২) জারণ (Oxidation):- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির মধ্যে জারণ হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন মিশলে তাকে জারণ বলে । লোহার উপর এবং লোহা গঠিত খনিজ ও শিলার উপর অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়া বেশি । লোহা যখন ফেরাস অক্সাইড রূপে অবস্থান করে তা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, কিন্তু লোহার সঙ্গে বাতাসের অক্সিজেন যুক্ত হলে লোহার উপরিভাগে হলুদ বা বাদামি রঙের একটি নতুন যৌগ পদার্থ তৈরি হয় এবং লোহা খুব সহজেই ক্ষয় পায় । সেইজন্য যেসব শিলায় লোহার পরিমাণ বেশি থাকে জারণের ফলে সেইসব শিলা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । জারণের ফলে মূল খনিজ ‘ফেরাস অক্সাইড’ ফেরিক অক্সাইডে [tex]2Fe_2O_33H_2O[/tex] পরিণত হয়ে ‘লিমোনাইট’ -এর সৃষ্টি করে, যা সহজেই ভেঙে যায় । একই কারণে লোহার জিনিসে মরচে ধরলে তা সহজেই নষ্ট হয়ে যায়,

 যথা— [tex]4FeO + 3H_2O + O_2 = 2Fe_2O_33H_2O[/tex] 

  অর্থাৎ  লোহা + জল + অক্সিজেন = লিমোনাইট

(৩) জলযোজন বা আর্দ্রকরণ (Hydration) :- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির মধ্যে জলযোজন বা আর্দ্রকরণ হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । শিলাস্তরের মধ্যে অবস্থিত কোনো খনিজ পদার্থের সঙ্গে জল যুক্ত হলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তার ফলে খনিজ পদার্থটির আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন হয়ে খনিজটি বিয়োজিত হয় । এই প্রক্রিয়াকে জলযোজন বা আর্দ্রকরণ বলে । রাসায়নিক বিয়োজনের ফলে শিলাগঠনকারী খনিজগুলি দৃঢ়ভাবে সংবদ্ধ থাকে না এবং সহজেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় । যেমন-  উৎকৃষ্ট লৌহ আকরিক ‘হেমাটাইট' [tex](2Fe_2O_3)[/tex] পাথরের সঙ্গে জলযুক্ত হলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, তার ফলে ‘লিমোনাইট’ [tex](2Fe_2O_33H_2O) [/tex] নামে নিকৃষ্ট লোহার সৃষ্টি হয়, যা অতি সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়,

যথা— [tex]2Fe_2O_3 + 3H_2O = 2Fe_2O_33H_2O[/tex]

  অর্থাৎ হেমাটাইট + জল = লিমোনাইট

(৪) দ্রবণ বা সলিউশন (Solution) :- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলির মধ্যে দ্রবণ বা সলিউশন হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । সৈন্ধব লবণ, জিপসাম প্রভৃতি কয়েকটি খনিজ পদার্থ জলের সংস্পর্শে দ্রবীভূত হয়ে তার নিজস্ব আকার হারিয়ে ফেলে । এই বিশেষ প্রক্রিয়াকে দ্রবণ বলে । দ্রবণের ক্ষেত্রে, যতবেশি পরিমাণ জল খনিজে প্রবিষ্ট হয়, খনিজ পদার্থটি তত তাড়াতাড়ি দ্রবীভূত হয়ে যায়, যথা—

   (i) সৈন্ধব লবণ + জল = সৈন্ধব লবণের দ্রবণ

   (ii) জিপসাম + জল = জিপসামের দ্রবণ

*****

Comments

Related Items

বর্জ্যের উৎস (Source of waste)

বর্জ্যের উৎস (Source of waste) : বর্তমান আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় মানুষের নানাবিধ কার্যকলাপেরপরিধিই হল বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্র । বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্রগুলি হল — (১) গৃহস্থালির বর্জ্য, (২) শিল্প বর্জ্য, (৩) কৃষিজ বর্জ্য,  (৪) পৌর

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste)

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste) : বিভিন্ন কারণে পরিবেশে নানা প্রকারের বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার, যেমন— (ক) কঠিন বর্জ্য, (খ) তরল বর্জ্য ও (গ) গ্যাসীয় বর্জ্য ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্যের ধারণা (Concept of Waste) : 'বর্জ্য' কথাটির অর্থ হল 'যা বর্জনযোগ্য' । যে-কোনো কঠিন, তরল অথবা গ্যাসীয় সম্পদকে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারের পরে যে মূল্যহীন, নষ্ট বা খারাপ হয়ে যাওয়া অব্যবহার্য বস্তু পড়ে থাকে, যা সরাসরি মানুষের কাজে না লেগে পরিবেশ দূষণ

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?

বান ডাকা (Tidal Bores)

বান ডাকা (Tidal Bores) : সাধারণত বর্ষাকালে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ভরা কোটালের সময় চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে জোয়ারের জল নদীর খাড়িপথ ও মোহনা দিয়ে খুব উঁচু হয়ে প্রবল বেগে উজানের দিকে অর্থাৎ নদী প্রবাহের বিপরীত দিকে অগ্রসর হয় । ঢেউ, জলোচ্ছ্বাসসহ নদীর এই