আগ্নেয় বা সঞ্চয়জাত পর্বত কাকে বলে ? উদাহরণ সহ আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি বর্ণনা কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 12/25/2021 - 22:24

প্রশ্ন:- আগ্নেয় বা সঞ্চয়জাত পর্বত কাকে বলে ? উদাহরণ সহ আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি বর্ণনা কর ।

উত্তর:-   ভূগর্ভের উত্তপ্ত গলিত তরল শিলা বা ম্যাগমা ভূস্তরের ফাটল দিয়ে লাভারূপে বাইরে বেরিয়ে এসে শীতল ও কঠিন হয়ে যে গম্বুজাকৃতি পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে সঞ্চয়জাত পর্বত [Mountain of Accumulaion] বা আগ্নেয় পর্বত [Volcano] বলে । যেমন - ইতালির ভিসুভিয়াস ।

পাতসঞ্চালন তত্ত্ব বা Plate Tectonic Theory অনুসারে আগ্নেয়গিরি বা আগ্নেয়পর্বতের উৎপত্তি :-

১) কোনো একটি মহাসাগরীয় পাত অপর একটি মহাদেশীয় পাতের দিকে অগ্রসর হলে দুইটি পাতের সংযোগস্থলে মহাসাগরীয় প্লেটের প্রান্তসীমা মহাদেশীয় পাতের নীচে ঢুকে যায় (subduction) । এই প্রক্রিয়ার ফলে দুটি পাতের সংযোগস্থলে প্রচন্ড চাপের ফলে ভূপৃষ্ঠের ৮০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার নীচে তাপমাত্রা ভয়ানক বেড়ে যায় । এই তাপে ভূ-অভ্যন্তরের বিভিন্ন পদার্থ গলে গিয়ে তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমার [Magma] সৃষ্টি হয় এবং গ্যাসের উৎপত্তি হয় ।

২) গ্যাসীয় বুদবুদগুলোর প্রচন্ড চাপে ভূ-গর্ভের অতি উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমা ভুত্বকের নলের মতো ফাটল বা সুড়ঙ্গ পথে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে এবং আগ্নেয় গিরির শীর্ষদেশে অবস্থিত জ্বালামুখ নামে এক বা একাধিক মুখ বা গহ্বর (crater) দিয়ে লাভা রূপে ছড়িয়ে পড়ে ।

৩) ঊর্ধ্বগামী সমস্ত ম্যাগমা (Magma) একসঙ্গে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে না, ভূপৃষ্ঠের ৩-৫ কিলোমিটার নীচে ম্যাগমা ঘর (Magma Chamber) নামে একটি ঘরে কিছুক্ষণ থাকার পর গ্যাসের চাপ আরও বৃদ্ধি পেলে ম্যাগমা স্রোত ক্রমান্বয়ে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে । জ্বালামুখ দিয়ে ভূপৃষ্ঠে নির্গত লাভা ক্রমশ শীতল ও কঠিন হয়ে আগ্নেয়গিরি বা আগ্নেয় পর্বতে পরিণত হয় ।

৪) বিভিন্ন সময়ের ব্যবধানে বারংবার লাভা নির্গমনের সঙ্গে সঙ্গে আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ক্রমশ বেড়ে যেতে থাকে এবং আগ্নেয় পর্বতটি ক্রমশ শঙ্কুর মতো আকৃতি নেয় । তবে পরবর্তী অগ্নুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে আগ্নেয়গিরির শঙ্কুর মতো আকৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে যায় । তাই বেশির ভাগ আগ্নেয় পর্বতগুলো মাঝারি উচ্চতাবিশিষ্ট হয় এবং এদের ঢাল মাঝামাঝি রকমের হয় । অগ্নুৎপাতের সময় লাভা ছাড়াও আগ্নেয় ধূলিকণা (Volcanic Dust), ছোটো বড়ো পাথরের টুকরো এবং সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO2) প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ (Crater) দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে ।

উদাহরণ: জাপানের ফুজিয়ামা, ইতালির ভিসুভিয়াস প্রভৃতি ।

*****

Comments

Related Items

উষ্ণতা হ্রাসের গড় (Lapse rate) কাকে বলে ? উষ্ণমণ্ডল সৃষ্টির কারণ কি ?

প্রশ্ন : উষ্ণতা হ্রাসের গড় (Lapse rate) কাকে বলেউষ্ণমণ্ডল সৃষ্টির কারণ কি ?

দিনের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে তাপের তারতম্য হয় কেন ?

প্রশ্ন : দিনের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে তাপের তারতম্য হয় কেন ?

উত্তর : সকালে এবং বিকালে কোনো স্থান থেকে সূর্য অনেক দূরে থাকে বলে সূর্যরশ্মি

(১) পৃথিবীপৃষ্ঠের সেই স্থানে তুলনামূলক ভাবে বেশি তির্যকভাবে পড়ে,

(২) বেশি পরিমাণ বায়ুস্তর ভেদ করে আসে এবং

পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব কী কী ?

প্রশ্ন :- পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব কী কী ?

অ্যালবেডো (Albedo) কাকে বলে ?

প্রশ্ন : অ্যালবেডো (Albedo) কাকে বলে ?

বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে ?

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে ?