হরমোনের উৎপত্তিস্থল ও কর্মস্থল এবং সাধারণ কাজ

Submitted by arpita pramanik on Tue, 12/04/2012 - 12:24

হরমোনের উৎপত্তিস্থল এবং কর্মস্থল (Site of formation and action of Hormones)

উদ্ভিদদেহে হরমোন ভাজক কলায়, বিশেষ করে কান্ডও মূলের অগ্রভাগে অবস্থিত তরুণ কোষের মধ্যে উত্পত্তি লাভ করে । প্রাণীদেহে হরমোন অনাল গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কোষে উত্পন্ন হয় । সুতরাং উদ্ভিদদেহে ভাজক কলা এবং প্রাণীদেহে অনাল গ্রন্থি হরমোনের প্রধান উত্সস্থল ।

যে স্থানে হরমোন উত্পত্তি হয় সেই স্থানে তা ক্রিয়া করে না । হরমোন উত্পত্তিস্থল থেকে দূরবর্তী স্থানে ক্রিয়া করে । উদ্ভিদের ক্ষেত্রে হরমোন কান্ড বা মূলের অগ্রভাগ থেকে নিঃসৃত হয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং দূরবর্তী স্থানের কোষগুলোর ওপর ক্রিয়া করে । প্রাণীদেহের হরমোন সারাদেহে অবস্থিত বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে উত্পন্ন হয়ে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে বাহিত হয় এবং দূরবর্তী বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের কোষসমূহের কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে ।

হরমোন ও রাসায়নিক সমন্বয়কারী (Hormons and Chemical co-ordinator)

জীবদেহের নির্দিষ্ট স্থান থেকে হরমোন উত্পন্ন হয়ে ধীরে ধীরে সারা দেহের কোষগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং কোষের বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে । এইভাবে হরমোন জীবদেহে রাসায়নিক সংযোগ গঠন করায় হরমোনকে রাসায়নিক সমন্বয়কারী বলে । প্রাণীদেহে স্নায়ুতন্ত্র ভৌত সমন্বয়কারী হিসেবে এবং হরমোন রাসায়নিক সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে । কিন্তু উদ্ভিদদেহে স্নায়ুতন্ত্র না থাকায় হরমোনই দেহের যাবতীয় জীবজ ক্রিয়াকলাপগুলির [biological activities] মধ্যে সমন্বয়সাধন করে ।

হরমোন ও স্নায়ু উভয়ই প্রাণীদেহে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে । হরমোনের ক্রিয়া মন্থর কিন্তু সুদূরপ্রসারী, স্নায়ুর ক্রিয়া দ্রুত কিন্তু তাত্ক্ষনিক । কাজের শেষে হরমোন ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু কাজের পর স্নায়ুর গঠনগত ও কার্যগত বৈশিষ্ট্যের কোন রকম পরিবর্তন ঘটে না ।

হরমোন ও স্নায়ুর কাজের পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য হরমোন  স্নায়ু
১. কর্মস্থল ও কাজের প্রকৃতি হরমোন উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে রাসায়নিক সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে  । স্নায়ু প্রাণীদেহে ভৌত সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে ।
২. কর্মক্ষমতা হরমোনের ক্রিয়া মন্থর কিন্তু সুদূরপ্রসারী । স্নায়ুর ক্রিয়া দ্রুত কিন্তু তাত্ক্ষনিক ।
৩. পরিণতি কাজের শেষে হরমোন ধ্বংস হয়ে যায় । কাজের পর স্নায়ুর কোনো গঠনগত ও কার্যগত পরিবর্তন হয় না ।

হরমোনের সাধারণ কাজ (General Functions of Hormone)

[1] হরমোন জীবদেহের কোষে কোষে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে ।

[2] হরমোন জীবদেহের কোষ বিভাজন এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।

[3] হরমোন জীবদেহের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ।

[4] হরমোন জীবদেহের যৌনাঙ্গের পরিস্ফুটনে এবং যৌন বৈশিষ্ট্যগুলির প্রকাশে সহায়তা করে ।

*****

Related Items

গিনিপিগের দ্বি-সংকর জননের পরীক্ষা

মেন্ডেলের দ্বি-সংকর জনন প্রক্রিয়াটি প্রাণীদেহেও ঘটানো যেতে পারে । একটি বিশুদ্ধ প্রলক্ষণযুক্ত কালো (রঙ) ও অমসৃণ (রোম) গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ প্রলক্ষণযুক্ত সাদা (রঙ) ও মসৃণ (রোম) গিনিপিগের সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে সব কালো ও অমসৃণ গিনিপিগ ...

গিনিপিগের একসংকর জননের পরীক্ষা

উদ্ভিদের মতো প্রাণীদের মধ্যেও একসংকর পরীক্ষা ঘটানো যেতে পারে । জনিতৃ জনুর একটি বিশুদ্ধ কালো গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা গিনিপিগের সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে শুধু মাত্র সংকর কালো গিনিপিগের সৃষ্টি হবে এখানে কালো রঙটি সাদার ওপর প্রকট ...

মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটর গাছ নির্বাচনের কারণ

বাগানের মিষ্টি মটর গাছে নিম্নলিখিত নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি থাকায় মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটর গাছকে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন । মটর গাছ দ্রুত বংশবিস্তারে সক্ষম, তাই অল্প সময়ের মধ্যে বংশানুক্রম কয়েকপুরুষ ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব । মটর ফুল উভলিঙ্গ হওয়ায় মটর ...

মেন্ডেলের দ্বিসংকর পরীক্ষা

একই প্রজাতিভুক্ত দু'জোড়া বিকল্প চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দু'টি জীবের সংকরায়ণ কে দ্বিসংকর জনন বা ডাই-হাইব্রিড ক্রস বলে । দ্বি-সংকর জননের পরীক্ষা থেকে মেন্ডেলের ধারণা হয়েছিল, জনিতৃ জনুর বৈশিষ্ট্যগুলি যে শুধুমাত্র অপত্য জনুতে আলাদাভাবে সঞ্চারিত হয় তাই নয়, উপরন্তু এই ...

মেন্ডেলের এক সংকর পরীক্ষা

একই প্রজাতিভুক্ত বিপরীতধর্মী এক-চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে যে যৌন জনন সম্পন্ন হয়, তাকে একসংকর জনন বা মনোহাইব্রিড ক্রস বলে । দুটি পৃথক পরীক্ষার সাহায্যে একসংকর পরনিষেক ব্যাখ্যা করা হল, একসংকর পরীক্ষা থেকে মেন্ডেল নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন ...