কৃষিকার্যে কৃত্রিম উদ্ভিদ-হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ (Practical application of Synthetic Plant Hormone in Agriculture)
উদ্ভিদদেহে স্বাভাবিক হরমোন উত্পন্ন হলেও বর্তমানে কৃত্রিম হরমোন ও তৈরি হচ্ছে । এই সব কৃত্রিম হরমোনের মধ্যে ইন্ডোল বিউটারিক অ্যাসিড (IBA), ন্যাপথালিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড (NAA), ডাই-ক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড (2, 4-D) প্রভৃতি প্রধান । কৃত্রিম হরমোনগুলি কম পরিমাণে বেশি কার্যকরী হওয়ায় আজকাল কৃষিকার্যে এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে ।
কৃত্রিম হরমোনের কাজ ও গুরুত্ব:-
[১] বীজহীন ফল উত্পাদন:- নিষেকের আগেই অর্থাৎ পরাগযোগ ও নেষেক ছাড়া ডিম্বাশয়ে কৃত্রিম অক্সিন [IBA, IAA] প্রয়োগ করে বীজবিহীন এবং আয়তনে বড় ফল উত্পাদন করা হয় । এই পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি বলে । এইসব ফলের মধ্যে পেঁপে, পেয়ারা, খেজুর, আঙ্গুর, টম্যাটো, কলা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।
[২] শাখা কলমে মূল সৃষ্টি:- শাখা কলমের দ্বারা বংশ বিস্তারের সময় নানান কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করে কলমে তাড়াতাড়ি মূল সৃষ্টি করা হয় । গোলাপ, জবা, বেল ইত্যাদি ফুলগাছ এবং আম, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি ফলের গাছের শাখা কলম তৈরি করার সময় IBA ও NAA বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় ।
[৩] আগাছা নির্মূল:- ধান, গম, যব ইত্যাদির খেতে অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ অর্থাৎ আগাছা নির্মূল করার জন্য 2, 4-D, MCAA ( মিথাইল ক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড ) প্রভৃতি কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করা হয় । কারণ কৃষিকার্যে আগাছাগুলি হল বাঞ্ছিত উদ্ভিদের প্রধান শত্রু ।
[৪] ক্ষতস্থান পূরণ:- চা, পাতাবাহার, আপেল, ন্যাসপাতি, ইত্যাদি গাছের ডাল ছাঁটার পর বেশি ঘনত্বের কৃত্রিম অক্সিন অর্থাৎ IAA (1%) দ্রবণ ছিটিয়ে ওই সমস্ত ক্ষতস্থান মেরামত করা হয় । এর ফলে ক্ষতস্থান রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে না ।
[৫] উদ্ভিদের অপরিণত অঙ্গের মোচন রোধ:- কৃত্রিম হরমোনের (2, 4-D, NAA) দ্রবণ ছিটিয়ে উদ্ভিদের নানান অপরিণত অঙ্গের (যেমন: পাতা, মুকুল, ফুল, ফল ইত্যাদি ) অকালমোচন রোধ করা হয় ।
[৬] অঙ্কুরোদ্গম ত্বরান্বিত করা:- কৃত্রিম জিব্বেরেলিন প্রয়োগের দ্বারা বীজের সুপ্ত অবস্থা ভঙ্গ করে দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম ঘটানো হয় ।
[৭] মূকুলোদ্গম বিলম্বিত করা:- অ্যাবসাইসিক অ্যাসিড (abscisic acid) প্রয়োগ করে আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদির মূকুলোদ্গম বিলম্বিত করা হয় ।
[৮] ফল ধরতে সহায়তা করা:- আনারস, লেবু, আপেল, ইত্যাদি গাছের কৃত্রিম হরমোন ছিটিয়ে গাছের ফল ধারণ ক্ষমতাকে ত্বরান্বিত করা হয় ।
[৯] ফলের বৃদ্ধি ও পরিপক্কতা:- IBA বা 2, 4-D নামক কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের আয়তন বৃদ্ধি ও পরিপক্কতা নিয়ন্ত্রণ করা হয় ।
[১০] পুষ্প পরিস্ফুটনের নিয়ন্ত্রণ:- কৃত্রিম হরমোন (প্রধানত NAA) প্রয়োগ করে উদ্ভিদের পুষ্প-মুকুলের পরিস্ফুটন ত্বরান্বিত করা হয় । জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করে দ্বি-বর্ষজীবী উদ্ভিদের প্রথম বছরে ফুল উত্পন্ন করা হয় ।
১১] জরা রোধ:- কাইনিন হরমোন প্রয়োগ করে উদ্ভিদের জরা বিলম্বিত করা হয় ।
*****
- 31318 views