স্নায়ু সন্নিধি ও স্নায়ুগ্রন্থি

Submitted by arpita pramanik on Wed, 11/28/2012 - 19:25

স্নায়ু সন্নিধি ও স্নায়ুগ্রন্থি (Synapse and Nerve Ganglion)

সাইন্যাপস বা স্নায়ু সন্নিধি বা প্রান্তসন্নিকর্ষ (Synapse)

সাইন্যাপস্ বা প্রান্তসন্নিকর্ষ হল দুটি নিউরোনের সংযোগস্থল, যেখানে একটি নিউরোনের অ্যাক্সনের প্রান্ত এবং অন্য একটি নিউরোনের ডেনড্রাইটের প্রান্ত খুব কাছাকাছি থাকে (অ্যাক্সোডেনড্রাইটিক সাইন্যাপস -এর ক্ষেত্রে), কিন্তু কখনই স্পর্শ করে না, মাঝে একটি আনুবীক্ষণিক ফাঁক থেকেই যায়, আর এর মধ্য দিয়েই নিউরোহিউমর নামে তরলের মাধ্যমে অ্যাক্সনের প্রান্ত থেকে স্নায়ু-উদ্দীপনা অন্য একটি নিউরোনের ডেনড্রাইটে পরিবাহিত হয় ।

সংজ্ঞা:- দুটি নিউরোনের যে সংযোগস্থলে একটি নিউরোন শেষ হয় এবং অপর একটি নিউরোন শুরু হয়, তাকে স্নায়ুসন্নিধি বা সাইন্যাপস বলে ।

গঠন পদ্ধতি:- সাইন্যাপস নিম্নলিখিত কয়েক রকম পদ্ধতিতে গঠিত হতে পারে, যেমন : 

(১) অ্যাক্সো ডেনড্রাইটিক সাইন্যাপস [axo-dendritic Synapse]:- একটি নিউরোনের অ্যাক্সনের শেষ প্রান্ত পরবর্তী নিউরোনের ডেনড্রাইটের সঙ্গে মিলিত হয়, এইরকম সাইন্যাপসকে অ্যাক্সো ডেনড্রাইটিক সাইন্যাপস বলে ।

(২) অ্যাক্সো সোমাটিক সাইন্যাপস [axo-somatic Synapse]:- একটি নিউরোনের অ্যাক্সনের শেষ প্রান্ত পরবর্তী নিউরোনের কোষদেহের সঙ্গে মিলিত হয়, এইরকম সাইন্যাপসকে অ্যাক্সো সোমাটিক সাইন্যাপস বলে ।

(৩) অ্যাক্সো অ্যাক্সেনিক সাইন্যাপস [axo-axonic Synapse]:- একটি নিউরোনের অ্যাক্সনের শেষ প্রান্ত (প্রান্তবুরুশ) অপর একটি নিউরোনের অ্যাক্সনের শেষ প্রান্তের সঙ্গে মিলিত হয়, এইরকম সাইন্যাপসকে অ্যাক্সো অ্যাক্সেনিক সাইন্যাপস বলে ।

এছাড়া কখনও কখনও একটি নিউরোনের অ্যাক্সন অনেকগুলি নিউরোনের ডেনড্রাইটের সঙ্গে বা একটি নিউরোনের ডেনড্রাইটের সঙ্গে অনেকগুলি নিউরোনের অ্যাক্সন মিলিত হয় ।

সাইন্যাপসের কাজ:- সাইন্যাপস স্নায়ুস্পন্দনকে (nerve impulse) এক নিউরোন থেকে অপর এক নিউরোনে প্রবাহিত করে । যখন পূর্ববর্তী নিউরোন থেকে স্নায়ুস্পন্দন ওই নিউরোনের অ্যাক্সনের শেষ প্রান্তে  আসে তখন অ্যাসিটাইল কোলিন নিঃসৃত হয়ে স্নায়ুস্পন্দনকে পরবর্তী নিউরোনের ডেনড্রাইটের মধ্যে প্রবাহিত করে ।

নার্ভ গ্যাংলিয়ন বা স্নায়ুগ্রন্থি (Nerve Ganglion)

কয়েকটি স্নায়ুকোষের কোষদেহগুলি মিলিত হয়ে যে গ্রন্থি সৃষ্টি করে, তাকে নার্ভ গ্যাংলিয়ন বা স্নায়ুগ্রন্থি বলে । স্নায়ুগ্রন্থি থেকে স্নায়ুর উত্পত্তি হয় ।

সংজ্ঞা:- কয়েকটি স্নায়ুকোষের কোষদেহগুলি একত্রিত হয়ে যে গ্রন্থির সৃষ্টি করে, তাকে স্নায়ুগ্রন্থি বা নার্ভ গ্যাংলিয়ন বলে । অনেকগুলো স্নায়ুকোষ একত্রিত হওয়ার ফলে গ্যাংলিয়নকে কিছুটা স্ফীত দেখায় ।

কাজ:-

(i) স্নায়ুগ্রন্থি থেকে স্নায়ুর উত্পত্তি হয় ।

(ii) নিউরো-সিক্রেসন (neuro-secretion) নামক রস ক্ষরণ করে স্নায়ুতন্ত্রকে সিক্ত রাখা  ।

(iii) অনেক সময় বিশেষ করে অমেরুদন্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে স্নায়ুগ্রন্থি থেকে নিউরো-সিক্রেটরি হরমোন ক্ষরিত হয় ।

*****

Related Items

গিনিপিগের দ্বি-সংকর জননের পরীক্ষা

মেন্ডেলের দ্বি-সংকর জনন প্রক্রিয়াটি প্রাণীদেহেও ঘটানো যেতে পারে । একটি বিশুদ্ধ প্রলক্ষণযুক্ত কালো (রঙ) ও অমসৃণ (রোম) গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ প্রলক্ষণযুক্ত সাদা (রঙ) ও মসৃণ (রোম) গিনিপিগের সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে সব কালো ও অমসৃণ গিনিপিগ ...

গিনিপিগের একসংকর জননের পরীক্ষা

উদ্ভিদের মতো প্রাণীদের মধ্যেও একসংকর পরীক্ষা ঘটানো যেতে পারে । জনিতৃ জনুর একটি বিশুদ্ধ কালো গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা গিনিপিগের সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে শুধু মাত্র সংকর কালো গিনিপিগের সৃষ্টি হবে এখানে কালো রঙটি সাদার ওপর প্রকট ...

মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটর গাছ নির্বাচনের কারণ

বাগানের মিষ্টি মটর গাছে নিম্নলিখিত নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি থাকায় মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটর গাছকে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন । মটর গাছ দ্রুত বংশবিস্তারে সক্ষম, তাই অল্প সময়ের মধ্যে বংশানুক্রম কয়েকপুরুষ ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব । মটর ফুল উভলিঙ্গ হওয়ায় মটর ...

মেন্ডেলের দ্বিসংকর পরীক্ষা

একই প্রজাতিভুক্ত দু'জোড়া বিকল্প চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দু'টি জীবের সংকরায়ণ কে দ্বিসংকর জনন বা ডাই-হাইব্রিড ক্রস বলে । দ্বি-সংকর জননের পরীক্ষা থেকে মেন্ডেলের ধারণা হয়েছিল, জনিতৃ জনুর বৈশিষ্ট্যগুলি যে শুধুমাত্র অপত্য জনুতে আলাদাভাবে সঞ্চারিত হয় তাই নয়, উপরন্তু এই ...

মেন্ডেলের এক সংকর পরীক্ষা

একই প্রজাতিভুক্ত বিপরীতধর্মী এক-চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে যে যৌন জনন সম্পন্ন হয়, তাকে একসংকর জনন বা মনোহাইব্রিড ক্রস বলে । দুটি পৃথক পরীক্ষার সাহায্যে একসংকর পরনিষেক ব্যাখ্যা করা হল, একসংকর পরীক্ষা থেকে মেন্ডেল নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন ...