চক্ষু বা চোখ (Eye)
সংজ্ঞা:- যে বিশেষ অঙ্গের দ্বারা প্রাণীরা পরিবেশ থেকে আলোকজাত উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং বহির্জগতের দৃশ্য দেখতে পায়, তাকে চোখ বলে ।
চক্ষু বা চোখ হল আমাদের দর্শনেন্দ্রিয় । আমাদের চোখ দুটি মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে অক্ষিকোটরে অবস্থিত । প্রতিটি চোখ একটি অক্ষিগোলক, একজোড়া অক্ষিপল্লব এবং একটি অশ্রুগ্রন্থি নিয়ে গঠিত ।
অক্ষিগোলকের প্রধান অংশগুলি হল : কনজাংটিভা, কর্নিয়া, আইরিশ, লেন্স বা মনি, স্ক্লেরা, কোরয়েড এবং রেটিনা ।
মানুষের চোখের বিভিন্ন অংশগুলির সংক্ষিপ্ত গঠন:-
[i] অক্ষিপল্লব [Eyelids]:- চোখ দুটি সঞ্চারশীল একটি ঊর্ধপল্লব ও একটি নিম্নপল্লব দিয়ে ঢাকা থাকে । অক্ষিপল্লবের কিনারায় এক সারি পল্লব লোম [eye lash] থাকে ।
কাজ:- বাইরের আঘাত ও ধুলোবালির হাত থেকে চোখ দুটিকে রক্ষা করা হল অক্ষি পল্লবের কাজ ।
[ii] কনজাংটিভা বা নেত্রবর্ত্মকলা [Conjunctiva]:- এটি অক্ষিগোলকের একবারে বাইরের দিকে অবস্থিত একরকম স্বচ্ছ পাতলা আবরণ ।
কাজ:- কনজাংটিভা চোখের আভ্যন্তরীণ অংশকে রক্ষা করে ।
[iii] করনিয়া বা অচ্ছোদপটল [Cornea]:- এটি অক্ষিগোলকের সামনের দিকে অবস্থিত স্বচ্ছ স্তর । কনজাংটিভা করনিয়ার ওপর থাকে ।
কাজ:- করনিয়া প্রতিসারক মাধ্যম হিসাবে কাজ করে ।
[iv] আইরিশ বা কনীনিকা [Iris]:- এটি করনিয়ার নীচে এবং লেন্স -এর ওপরে অবস্থিত স্তর । এটির কেন্দ্রে অবস্থিত ক্ষুদ্র ছিদ্রটিকে তারারন্ধ্র বা পিউপিল [pupil] বলে ।
কাজ:- কনীনিকা তারারন্ধ্রকে ছোটো-বড়ো করে চোখে আলো প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ।
[v] লেনস বা মণি [Lens]:- এটি কনীনিকার পরবর্তী দ্বি-উত্তলাকার স্বচ্ছ অংশ ।
কাজ:- লেনস আলোক রশ্মির প্রতিসরণে মুখ্য ভুমিকা গ্রহণ করে ।
[vi] স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডল [Sclera]:- এটি অক্ষিগোলকের পিছনের 5/6 অংশ জুড়ে অবস্থিত একবারে বাইরের আবরণী । এই আবরণীটি তন্তুময় ।
কাজ:- স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডলের প্রধান কাজ হল চোখের ভেতরকার অংশগুলিকে রক্ষা করা ।
[vii] কোরয়েড বা কৃষ্ম মণ্ডল [Choroid]:- এটি অক্ষিগোলকের পশ্চাতে অবস্থিত স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডলের পরবর্তী আবরণ । এই অংশে মেলানিন নামে রঞ্জক থাকায় এই অংশটি কালো রং -এর হয় ।
কাজ:- কোরয়েড বা কৃষ্ম মণ্ডল আলোকের প্রতিফলন রোধ করে এবং রেটিনাকে রক্ষা করে ।
[viii] রেটিনা বা অক্ষিপট [Retina]:- এটি অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থিত কোরয়েড স্তরের পরবর্তী স্নায়ুস্তর । এই স্তরটি রড [rod] এবং কোন [cone] নামে দু'রকম স্নায়ুকোষ দিয়ে গঠিত ।
কাজ:- রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় । রড কোষ ও কোন কোষ আলো ও বর্ণ গ্রাহক হিসেবে কাজ করে । রড কোষ মৃদু আলো এবং কোন কোষ উজ্জ্বল রঙ্গিন আলোয় সংবেদনশীল ।
[ix] অশ্রুগ্রন্থি [Tear Gland]:- প্রতি চোখের অক্ষিকোটরের বহির্ভাগে এবং ঊর্ধঅক্ষিপল্লবের নীচে ছোট্ট বাদামের মতো দেখতে একটি করে অশ্রুগ্রন্থি থাকে । অশ্রুগ্রন্থির ক্ষরণকে অশ্রু [tear] বলে ।
কাজ:-
(ক) অশ্রুগ্রন্থির ক্ষরণ নালি পথে বাহিত হয়ে কনজাংটিভার ওপর ছড়িয়ে পড়ে এবং চোখকে ভিজে রাখে ।
(খ) অশ্রু চোখের উপরিভাগে ধুলোবালি পড়লে তা ধুয়ে দেয় ।
(গ) এছাড়া অশ্রুতে অবস্থিত সোডিয়াম কার্বনেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড জীবাণুনাশক পদার্থ হিসেবে কাজ করে ।
চোখের বিভিন্ন অংশের অবস্থান ও কাজ সংক্ষেপে ছকের সাহায্যে দেখানো হল
চক্ষুর অংশ | অবস্থান | কাজ |
১.স্ক্লেরা | অক্ষিগোলকের পিছনের দিকে অবস্থিত সবচেয়ে বাইরের তন্তুময় আবরণী । | অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগের অন্যান্য স্তরকে রক্ষা করে । |
২.কোয়েড | অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থিত মধ্য আবরক । | রেটিনাকে রক্ষা করে এবং বিচ্ছুরিত আলোকের প্রতিফলন রোধ করে । |
৩.রেটিনা | অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থিত অন্তঃআবরক । | বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠনে সাহায্য করে । |
৪.করনিয়া | অক্ষিগোলকের বহিরাবরকের সম্মুখভাগে অবস্থিত। | প্রতিসারক মাধ্যম হিসাবে কাজ করে । |
৫.আইরিশ | অক্ষিগোলকের সামনে লেনস এর ওপরে অবস্থিত। | তারারন্ধ্রকে ছোট ও বড় হতে সাহায্য করে । |
৬.পিউপিল বা তারারন্ধ্র | আইরিশের পশ্চাদভাগে অবস্থিত। | এর মাধ্যমে চোখে আলোক রশ্মি প্রবেশ করে । |
৭.লেনস বা মনি | আইরিশের পশ্চাদভাগে অবস্থিত দ্বি-উত্তলাকার অংশ । | আলোর প্রতিসরণ ঘটায় এবং আলোক রশ্মিকে রেটিনার ওপর কেন্দ্রীভূত করে । |
৮.কনজাংটিভা বা নেত্রবর্ত্মকলা | করনিয়ার বাইরের আচ্ছাদন । | করনিয়ার বাইরের আচ্ছাদন । |
৯.অ্যাকুয়াস হিউমর | করনিয়া এবং লেন্সের মধ্যবর্তী প্রকোষ্ঠে অবস্থিত । | বিবর্ধক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে । |
১০.ভিট্রিয়াস হিউমর | লেন্সের এবং রেটিনার মধ্যবর্তী প্রকোষ্ঠে অবস্থিত । | প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে । |
১১.ব্লাইন্ড স্পট বা অন্ধবিন্দু | তারারন্ধ্রের বিপরীত দিকে রেটিনার ওপর অবস্থিত । | এখানে প্রতিবিম্ব গঠিত হয় না । |
১২.ইয়োলো স্পট | তারারন্ধ্রের বিপরীত দিকে রেটিনার ওপর অবস্থিত । | এখানে সবচেয়ে ভাল প্রতিবিম্ব গঠিত হয় । |
*****
- 24295 views