নিউরোনের শ্রেণিবিভাগ ও কাজ

Submitted by arpita pramanik on Tue, 11/27/2012 - 12:53

নিউরোনের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Neurone)

কাজ অনুযায়ী:- কাজ অনুযায়ী নিউরোন তিন প্রকার; যথা-

[i] সংজ্ঞাবহ বা সংবেদজ নিউরোন  

[ii]  আজ্ঞাবহ বা চেষ্টিয় নিউরোন   

[iii] সহযোগী নিউরোন ।

[i] সংজ্ঞাবহ বা সংবেদজ নিউরোন [Sensory Neurone] :- সেনসরি রকম নিউরোনগুলো রিসেপটর থেকে স্নায়ুস্পন্দন [nerve impulse] অর্থাৎ আবেগকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বহন করে । সংজ্ঞাবহ নিউরোনের দ্বারা আবেগ বাইরে থেকে ভিতরে পরিবাহিত হয় বলে একে অন্তর্বাহী বা অ্যাফারেন্ট নিউরোন [afferent neurone] বলে । এই রকম নিউরোন রিসেপটর থেকে উদ্দীপনা গ্রহন করে বলে একে রিসেপটর নিউরোন [receptor neurone] -ও বলা হয় ।

[ii] আজ্ঞাবহ বা চেষ্টিয় নিউরোন [Motor Neurone]:- মোটর নিউরোনগুলো কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে স্নায়ুস্পন্দন অর্থাৎ সাড়া, কারক অর্থাৎ ইফেক্টরে বহন করে । আজ্ঞাবহ নিউরোন দ্বারা স্নায়ুস্পন্দন দেহের ভেতর থেকে বাইরে পরিবাহিত হয় বলে একে বহির্বাহী বা ইফারেন্ট নিউরোন [efferent neurone] বলে । এই রকমের নিউরোন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে পাঠানো স্নায়ুস্পন্দন গুলোকে কারক অর্থাৎ ইফেক্টরে পাঠায় বলে একে ইফেক্টর নিউরোন [effector neurone] বলে । 

[iii] সহযোগী নিউরোন [Adjust or Interconnecting Neurone]:- ইন্টারকানেক্টিং নিউরোনগুলো সেনসরি ও মোটর নিউরোনের মধ্যে সংযোগ সাধন করে । এই ধরনের নিউরোন সবসময় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে অবস্থিত হয় ।

সেনসরি নিউরোন ও মোটর নিউরোনের পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য সেনসরি নিউরোন মোটর নিউরোন
১.অ্যাক্সন ও ডেনড্রনের দীর্ঘ্য অ্যাক্সন ও ডেনড্রনের দীর্ঘ্য এর ডেনড্রন দীর্ঘ এবং অ্যাক্সন ছোট । এর ডেনড্রন ছোট এবং অ্যাক্সন দীর্ঘ ।
২.ডেনড্রনের সঙ্গে সংযুক্তি এর ডেনড্রন সাধারণত গ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত থাকে । এর ডেনড্রন সাধারণত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে ।
৩.অ্যাক্সনের সঙ্গে সংযুক্তি  এটি সাধারণত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে । এটি সাধারণত ইফেক্টরের সঙ্গে যুক্ত থাকে ।
৪.কাজ এই রকম নিউরোন স্নায়ুস্পন্দনকে গ্রাহক থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বহন করে ।  এই রকম নিউরোন স্নায়ুস্পন্দনকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে ইফেক্টরে বহন করে ।

প্রবর্ধকের সংখ্যানুযায়ী:- কোষদেহ থেকে উত্পন্ন প্রবর্ধকের সংখ্যানুযায়ী নিউরোন পাঁচ প্রকারের হয়; যথা-

[i] মেরুবিহীন নিউরোন [Apolar Neurone]:- কোষদেহে যখন প্রবর্ধক থাকে না ।

[ii] এক-মেরুবর্তী নিউরোন [Unipolar Neurone]:- কোষদেহে যখন একটিমাত্র প্রবর্ধক অর্থাৎ অ্যাক্সন থাকে ।

[iii] দ্বি-মেরুবর্তী নিউরোন [Bipolar Neurone]:- কোষদেহে দু'দিকে যখন প্রবর্ধক থাকে অর্থাৎ একদিকে একটি অ্যাক্সন এবং অপরদিকে একটি ডেনড্রন থাকে ।

[iv] মেকি-এক-মেরুবর্তী নিউরোন [Pseudo-unipolar Neurone]:- প্রাথমিক অবস্থায় দুটি প্রবর্ধক থাকে, যারা বয়ঃবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরস্পর মিলিত হয়ে একটি প্রবর্ধকে পরিণত হয় ।

[v] বহু মেরুবর্তী নিউরোন [Multipolar Neurone]:- কোষদেহে যখন একাধিক প্রবর্ধক থাকে, যেমন: একটি  অ্যাক্সন এবং অসংখ্য ডেনড্রন বা ডেনড্রাইট থাকে ।

নিউরোনের কাজ [Functions of Neurone]:- নিউরোনের প্রধান কাজ হল উদ্দীপনা বা স্নায়ুস্পন্দন বহন করা । সেনসরি নিউরোন রিসেপটর থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে এবং মোটর নিউরোন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে ইফেক্টরে স্নায়ুস্পন্দন বহন করে ।

নিউরোগ্লিয়া [Neuroglia]:- স্নায়ুকোষ বা নিউরোন ছাড়াও স্নায়ুকলায় বা স্নায়ুতন্ত্রে নিউরোগ্লিয়া নামে আর একরকম গঠন গত উপাদান পরিলক্ষিত হয় ।এটি প্রকৃতপক্ষে একরকমের পরিবর্তিত যোগ কলা । এরা স্নায়ুতন্ত্রের ধারক কোষ হিসাবে কাজ করে । এরা বিভাজনে সক্ষম এবং বহু প্রবর্ধকযুক্ত । এদের স্নায়ুস্পন্দন পরিবহনের ক্ষমতা নেই । স্নায়ুকোষের মৃত্যুর পর এগুলি তার স্থান দখল করে । স্নায়ুতন্ত্রের মোট কোষসমষ্টির প্রায় 90 শতাংশই হল নিউরোগ্লিয়া ।

অ্যাক্সন ও ডেনড্রনের পার্থক্য

 

বৈশিষ্ট্য অ্যাক্সন ডেনড্রন
১.প্রকৃতি অ্যাক্সন স্নায়ুকোষের চেস্টিয় বা আজ্ঞাবহ অংশ। ডেনড্রন স্নায়ুকোষের সংজ্ঞাবহ অংশ ।
২.শাখা   অ্যাক্সন সাধারণত শাখাহীন; কখনও কখনও স্বল্প শাখাযুক্ত হয় ।   ডেনড্রন শাখাপ্রশাখা যুক্ত । 
৩.মায়োলিন আবরণ অ্যাক্সনে নিউরোলেম্মা ও মায়োলিনের আবরণ থাকে।  ডেনড্রনে নিউরোলেম্মা ও মায়োলিনের আবরণ থাকে না । 
৪.স্বোয়ান কোষ অ্যাক্সনে স্বোয়ান কোষ থাকে । ডেনড্রনের মধ্যে স্বোয়ান কোষ থাকে না ।
৫.নিজল দানা অ্যাক্সনে নিজল দানা থাকে না । ডেনড্রনে নিজল দানা থাকে ।
৬.রানভিয়ারের পর্বডেনড্রনে রানভিয়ারের পর্ব থাকে না । অ্যাক্সনে রানভিয়ারের পর্ব থাকে । ডেনড্রনে রানভিয়ারের পর্ব থাকে না ।
৭.কাজ স্নায়ুস্পন্দন বহন করা হল অ্যাক্সনের প্রধান কাজ। স্নায়ুস্পন্দন গ্রহন করা হল ডেনড্রনের প্রধান কাজ ।

*****

Related Items

থাইরক্সিন (Thyroxin)

থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন নিঃসৃত হয়। থাইরয়েড গ্রন্থিটি গ্রীবাদেশে ট্রাকিয়ার দু'পাশে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ ট্রাকিয়াল-রিং -এর সামনে অবস্থিত । প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের থাইরয়েড গ্রন্থির ওজন প্রায় 20-35 gm হয় । থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত আর দুটি হরমোন হল ট্রাই-আয়োডোথাইরেনিন ...

ইনসুলিন (Insulin)

অগ্ন্যাশয়ে অবস্থিত আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস নামক অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয় । অগ্ন্যাশয় অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় গ্রন্থির সংমিশ্রণে গঠিত হওয়ায় অগ্ন্যাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলে । অগ্ন্যাশয়ের আলফা কোষ থেকে গ্লুকাগন হরমোন নিঃসৃত হয় । ...

মানবদেহে বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি : পিটুইটারি গ্রন্থি

পিটুইটারি মানবদেহের সবচেয়ে ছোটো কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী অনাল গ্রন্থি । ওজন মাত্র 500 mg. । এই গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলি, অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে একে মুখ্য গ্রন্থি বা প্রভু গ্রন্থি বলে । পিটুইটারি গ্রন্থি মস্তিষ্কের মূলদেশে স্ফেনয়েড অস্থির সেলা-টারসিকা প্রকোষ্ঠে ...

প্রাণী-হরমোন ও উৎস

প্রাণীদেহে অবস্থিত অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরিত হয় । অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের স্নায়ুগ্রন্থিতে অবস্থিত নিউরোসিক্রেটরি কোষগুলো থেকে হরমোন নিঃসৃত হয় । প্রাণীদের নিউরোসিক্রেটরি কোষ থেকে নিঃসৃত হরমোনকে নিউরো হরমোন বলে । যেসব গ্রন্থির ক্ষরিত রস নালির মাধ্যমে ...

কৃষিকার্যে কৃত্রিম উদ্ভিদ-হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ

উদ্ভিদদেহে স্বাভাবিক হরমোন উত্পন্ন হলেও বর্তমানে কৃত্রিম হরমোন ও তৈরি হচ্ছে । এই সব কৃত্রিম হরমোনের মধ্যে ইন্ডোল বিউটারিক অ্যাসিড, ন্যাপথালিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ডাই-ক্লোরোফেনক্সি অ্যাসিটিক অ্যাসিড প্রভৃতি প্রধান । কৃত্রিম হরমোনগুলি কম পরিমাণে বেশি কার্যকরী ...