ডি.এন.এ. বা ডি-অক্সি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (DNA)

Submitted by arpita pramanik on Wed, 12/12/2012 - 08:42

 ডি.এন.এ. বা ডি-অক্সি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (DNA or Deoxyribonucleic Acid)

সংজ্ঞা [Defination]:- ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা দিয়ে গঠিত যে নিউক্লিক অ্যাসিড জীবের সমস্ত জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে DNA বা ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড [Deoxyribonucleic Acid] বলে ।

অবস্থান [Distribution]:-  কয়েক ধরনের ভাইরাস ছাড়া সব রকমের সজীব কোশেই DNA থাকে । প্রধানত নিউক্লিয়াসের মধ্যে, বিশেষত ক্রোমোজোমের মধ্যে DNA থাকে । এছাড়া মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাষ্টিড, এবং সেন্ট্রিওল -এর মধ্যেও DNA থাকতে পারে । কোনও কোনও ক্ষেত্রে, যেমন : প্যারামিসিয়াম, অ্যামিবা প্রোটিয়াস, উভচর প্রাণীদের কোশে এবং ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদের কোশে DNA সাইটোপ্লাজমের ধাত্রে থাকে ।  নির্দিষ্ট প্রজাতির জীবকোশে DNA -এর পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকে ।

আকার [Shape]:- ইউক্যারিওটিক কোশের DNA সুতোর মতো [thread like], সোজা এবং শাখাহীন হয় । প্রোক্যারিওটিক কোশ, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাষ্টিডের DNA গোলাকার হয় ।

আয়তন [Size]:-  কোশের মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য উপাদানের অণুর আয়তনের তুলনায় DNA অণু সবচেয়ে বড়ো । প্রজাতি অনুসারে DNA -র আয়তনের তারতম্য লক্ষ করা যায় । ব্যাকটিরিয়া কোশের DNA -র দৈর্ঘ্য 1.4 mm এবং মানুষের দেহকোশের DNA -র দৈর্ঘ্য 174 cm  ।

উপাদান [Composition]:-  DNA এক ধরনের রাসায়নিক জৈব যৌগ । DNA -র প্রধান উপাদান হল : চার রকম বেস [Base], একটি পেন্টোজ শর্করা এবং ফসফেট ।

DNA -র চারটি বেসের নাম হল : [i] অ্যাডিনিন (A),   [ii] গুয়ানিন (G),  [iii] থাইমিন (T),  [iv] সাইটোসিন (C) ।  এর মধ্যে A ও G- বেসকে পিউরিন এবং T ও C -বেসকে পিরিমিডিন বলা হয় ।  অ্যাডিনিন থাইমিনের সঙ্গে এবং গুয়ানিন সাইটোসিনের সঙ্গে হাইড্রোজেন বন্ধনে আবদ্ধ থাকে ।

DNA -র একটি বেস, একটি শর্করা এবং একটি ফসফেট নিয়ে গঠিত একককে নিউক্লিয়টাইড বলে ।  নিউক্লিয়টাইড থেকে একটি ফসফেট বাদ দিলে নিউক্লিয়সাইড গঠিত হয় ।

বিজ্ঞানী ওয়াটসন এবং ক্লিক -এর মতে, DNA কুণ্ডলীটি প্রকৃতিতে একটি দ্বিতন্ত্রী কুণ্ডলী

কাজ (function)

[i]  বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহকের ভুমিকা পালন করা:- এক পুরুষ থেকে অন্য পুরুষে এবং এক কোশ থেকে অন্য কোশে জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করা হল DNA -এর প্রধান কাজ । তাই ক্রোমোজোমে অবস্থিত DNA কেই জিন বলা চলে ।

[ii]  জৈবিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করা:- প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জীব কোশের সমস্ত কাজ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে DNA সজীব বস্তুর যাবতীয় জৈবিক ক্রিয়াকলাপগুলিকে [biological activities] নিয়ন্ত্রণ করে ।

[iii]  প্রোটিন ও RNA সংশ্লেষ করা:-   DNA প্রোটিন ও  RNA সংশ্লেষ করে ।

[iv]  প্রতিলিপি গঠন করা:-   DNA নিজের প্রতিলিপি গঠন করতে পারে ।

*****

Related Items

ভাইরাস ও ভাইরাসের বৈশিষ্ঠ্য

ভাইরাস কথার শব্দতত্ত্বগত অর্থ বিষ। 1796 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার সর্বপ্রথম ভাইরাস আক্রান্ত বসন্ত রোগের কথা উল্লেখ করেন । 1936 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ব্যাডেন এবং পিরী পরীক্ষা করে দেখান যে, ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন আছে এবং ভাইরাসগুলো নিউক্লিও ...

মাছ ও পায়রার অভিযোজন বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য

মাছ জলচর প্রাণী। পায়রা খেচর প্রাণী। মাছের দেহ আঁশ অথবা পিচ্ছিল মিউকাস দিয়ে আবৃত । পায়রার দেহ পালক দ্বারা আবৃত । মাছের গমন অঙ্গ হল পাখনা । পায়রার গমন অঙ্গ হল একজোড়া ডানা এবং একজোড়া পা। মাছের মেরুদন্ডের দু'পাশে মায়োটোম পেশি থাকে, যা মেরুদন্ডকে ...

পায়রার অভিযোজন

পায়রা খেচর প্রাণী । আকাশে ওড়ার জন্য পায়রার নিম্নলিখিত অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় । পায়রার উড্ডয়নে সাহায্যকারী অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য দেহের তাপ সংরক্ষণে সাহায্য করে । দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস করে । পায়রার পালকগুলি বার্ব, বার্বিউল ও ...

রুই মাছের অভিযোজন

রুই মাছ মুখ্য জলজ প্রাণী । জলে বসবাস করার জন্য এদের দেহে নিম্নলিখিত অভিযোজনগুলি দেখা যায় । রুই মাছের দেহ বেম বা মাকুর মতো । দেহ দু'পাশ থেকে চ্যাপ্টা এবং দেহ থেকে কোনো প্রবর্ধক বেরিয়ে থাকে না । জলে সাঁতার কাটার সময় জলের গতি রোধ করার জন্য দেহের গঠন ...

সুন্দরী বা সুঁদরী গাছের অভিযোজন

সুন্দরী এক রকমের লবণাম্বু উদ্ভিদ । এরা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় । এর অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল - মাটি লবণাক্ত থাকায় মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে না, মূল মাটির অল্প নীচে বিস্তৃত থাকে । মাটি কর্দমাক্ত ও রন্ধ্রবিহীন ...