Submitted by arpita pramanik on Sat, 12/01/2012 - 17:04

চক্ষু বা চোখ (Eye)

সংজ্ঞা:- যে বিশেষ অঙ্গের দ্বারা প্রাণীরা পরিবেশ থেকে আলোকজাত উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং বহির্জগতের দৃশ্য দেখতে পায়, তাকে চোখ বলে ।

চক্ষু বা চোখ হল আমাদের দর্শনেন্দ্রিয় । আমাদের চোখ দুটি মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে অক্ষিকোটরে অবস্থিত । প্রতিটি চোখ একটি অক্ষিগোলক, একজোড়া অক্ষিপল্লব এবং একটি অশ্রুগ্রন্থি নিয়ে গঠিত ।

অক্ষিগোলকের প্রধান অংশগুলি হল : কনজাংটিভা, কর্নিয়া, আইরিশ, লেন্স বা মনি, স্ক্লেরা, কোরয়েড এবং রেটিনা ।

মানুষের চোখের বিভিন্ন অংশগুলির সংক্ষিপ্ত গঠন:-

[i] অক্ষিপল্লব [Eyelids]:- চোখ দুটি সঞ্চারশীল একটি ঊর্ধপল্লব ও একটি নিম্নপল্লব দিয়ে ঢাকা থাকে । অক্ষিপল্লবের কিনারায় এক সারি পল্লব লোম [eye lash] থাকে ।

কাজ:-  বাইরের আঘাত ও ধুলোবালির হাত থেকে চোখ দুটিকে রক্ষা করা হল অক্ষি পল্লবের কাজ ।

[ii] কনজাংটিভা বা নেত্রবর্ত্মকলা [Conjunctiva]:- এটি অক্ষিগোলকের একবারে বাইরের দিকে অবস্থিত একরকম স্বচ্ছ পাতলা আবরণ ।

কাজ:- কনজাংটিভা চোখের আভ্যন্তরীণ অংশকে রক্ষা করে ।

[iii] করনিয়া বা অচ্ছোদপটল [Cornea]:- এটি অক্ষিগোলকের সামনের দিকে অবস্থিত স্বচ্ছ স্তর । কনজাংটিভা করনিয়ার ওপর থাকে ।

কাজ:- করনিয়া প্রতিসারক মাধ্যম হিসাবে কাজ করে ।

[iv] আইরিশ বা কনীনিকা [Iris]:- এটি করনিয়ার নীচে এবং লেন্স -এর ওপরে অবস্থিত স্তর । এটির কেন্দ্রে অবস্থিত ক্ষুদ্র ছিদ্রটিকে তারারন্ধ্র বা পিউপিল [pupil] বলে ।

কাজ:- কনীনিকা তারারন্ধ্রকে ছোটো-বড়ো করে চোখে আলো প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ।

[v] লেনস বা মণি [Lens]:- এটি কনীনিকার পরবর্তী দ্বি-উত্তলাকার স্বচ্ছ অংশ ।

কাজ:- লেনস আলোক রশ্মির প্রতিসরণে মুখ্য ভুমিকা গ্রহণ করে ।

[vi] স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডল [Sclera]:- এটি অক্ষিগোলকের পিছনের 5/6 অংশ জুড়ে অবস্থিত একবারে বাইরের আবরণী । এই আবরণীটি তন্তুময় ।

কাজ:- স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডলের প্রধান কাজ হল চোখের ভেতরকার অংশগুলিকে রক্ষা করা ।

[vii] কোরয়েড বা কৃষ্ম মণ্ডল [Choroid]:- এটি অক্ষিগোলকের পশ্চাতে অবস্থিত স্ক্লেরা বা শ্বেতমণ্ডলের পরবর্তী আবরণ । এই অংশে মেলানিন নামে রঞ্জক থাকায় এই অংশটি কালো রং -এর হয় ।

কাজ:- কোরয়েড বা কৃষ্ম মণ্ডল আলোকের প্রতিফলন রোধ করে এবং রেটিনাকে রক্ষা করে ।

[viii] রেটিনা বা অক্ষিপট [Retina]:- এটি অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থিত কোরয়েড স্তরের পরবর্তী স্নায়ুস্তর । এই স্তরটি রড [rod] এবং কোন [cone] নামে দু'রকম স্নায়ুকোষ দিয়ে গঠিত ।

কাজ:- রেটিনায় বস্তুর প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় । রড কোষ ও কোন কোষ আলো ও বর্ণ গ্রাহক হিসেবে কাজ করে । রড কোষ মৃদু আলো এবং কোন কোষ উজ্জ্বল রঙ্গিন আলোয় সংবেদনশীল ।

[ix] অশ্রুগ্রন্থি [Tear Gland]:- প্রতি চোখের অক্ষিকোটরের বহির্ভাগে এবং ঊর্ধঅক্ষিপল্লবের নীচে ছোট্ট বাদামের মতো দেখতে একটি করে অশ্রুগ্রন্থি থাকে । অশ্রুগ্রন্থির ক্ষরণকে অশ্রু [tear] বলে ।

কাজ:-

(ক)  অশ্রুগ্রন্থির ক্ষরণ নালি পথে বাহিত হয়ে কনজাংটিভার ওপর ছড়িয়ে পড়ে এবং চোখকে ভিজে রাখে ।

(খ)  অশ্রু চোখের উপরিভাগে ধুলোবালি পড়লে তা ধুয়ে দেয় ।

(গ)  এছাড়া অশ্রুতে অবস্থিত সোডিয়াম কার্বনেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড জীবাণুনাশক পদার্থ হিসেবে কাজ করে ।

চোখের বিভিন্ন অংশের অবস্থান ও কাজ সংক্ষেপে ছকের সাহায্যে দেখানো হল

চক্ষুর অংশ অবস্থান কাজ
১.স্ক্লেরা অক্ষিগোলকের পিছনের দিকে অবস্থিত সবচেয়ে বাইরের তন্তুময় আবরণী । অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগের অন্যান্য স্তরকে রক্ষা করে ।
২.কোয়েড  অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থিত মধ্য আবরক । রেটিনাকে রক্ষা করে এবং বিচ্ছুরিত আলোকের প্রতিফলন রোধ করে ।
৩.রেটিনা অক্ষিগোলকের পশ্চাদভাগে অবস্থিত অন্তঃআবরক । বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠনে সাহায্য করে ।
৪.করনিয়া অক্ষিগোলকের বহিরাবরকের সম্মুখভাগে অবস্থিত। প্রতিসারক মাধ্যম হিসাবে কাজ করে ।
৫.আইরিশ অক্ষিগোলকের সামনে লেনস এর ওপরে অবস্থিত। তারারন্ধ্রকে ছোট ও বড় হতে সাহায্য করে ।
৬.পিউপিল বা তারারন্ধ্র আইরিশের পশ্চাদভাগে অবস্থিত।    এর মাধ্যমে চোখে আলোক রশ্মি প্রবেশ করে ।   
৭.লেনস বা মনি আইরিশের পশ্চাদভাগে অবস্থিত দ্বি-উত্তলাকার অংশ । আলোর প্রতিসরণ ঘটায় এবং আলোক রশ্মিকে রেটিনার ওপর কেন্দ্রীভূত করে ।
৮.কনজাংটিভা বা নেত্রবর্ত্মকলা    করনিয়ার বাইরের আচ্ছাদন ।    করনিয়ার বাইরের আচ্ছাদন ।   
৯.অ্যাকুয়াস হিউমর করনিয়া এবং লেন্সের মধ্যবর্তী প্রকোষ্ঠে অবস্থিত ।       বিবর্ধক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ।      
১০.ভিট্রিয়াস হিউমর লেন্সের এবং রেটিনার মধ্যবর্তী প্রকোষ্ঠে অবস্থিত । প্রতিসারক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ।
১১.ব্লাইন্ড স্পট বা অন্ধবিন্দু  তারারন্ধ্রের বিপরীত দিকে রেটিনার ওপর অবস্থিত ।  এখানে প্রতিবিম্ব গঠিত হয় না । 
১২.ইয়োলো স্পট তারারন্ধ্রের বিপরীত দিকে রেটিনার ওপর অবস্থিত । এখানে সবচেয়ে ভাল প্রতিবিম্ব গঠিত হয় ।

*****

Related Items

ডারউইনবাদের ব্যাখ্যা

ডারউইনের মতে, অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । একটি স্ত্রী স্যালমন মাছ প্রজনন ঋতুতে প্রায় 3 কোটি ডিম পাড়ে । একটি ঝিনুক একবারে 12 কোটি ডিম্বাণু উত্পাদন করে ...

ডারউইনের তত্ত্ব ও প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি

ডারউইনের মতে, অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই হল জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । জীবের জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটার জন্য এবং খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত থাকায় বেঁচে থাকার জন্য জীবকে কঠিন প্রতিযোগিতার ...

অভিব্যক্তির তত্ত্বাবলি ও ল্যামার্কের তত্ত্ব

অভিব্যক্তির ফলে নতুন প্রজাতির অথবা একটি প্রজাতি থেকে অন্য একটি প্রজাতির উত্পত্তি হয় । অভিব্যক্তির কৌশল সম্পর্কে যেসব বিজ্ঞানী বিভিন্ন তত্ত্বাবলি প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁদের মধ্যে ল্যামার্ক এবং ডারউইনের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । এখানে অভিব্যক্তির বিভিন্ন তত্ত্বাবলি ...

জীবাশ্মঘটিত বা প্রত্নজীববিদ্যা সংক্রান্ত প্রমাণ

ভূগর্ভের শিলাস্তরে সুদীর্ঘকাল যাবৎ প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত কিন্তু আজকের পৃথিবীতে লুপ্ত জীবদেহের সামগ্রিক বা আংশিক প্রস্তরীভূত অবস্থা অথবা তার ছাপকে জীবাশ্ম বলে । বিবর্তন সম্পর্কে যেসব প্রমাণ আছে তাদের মধ্যে জীবাশ্ম ঘটিত প্রমাণ সব থেকে জোরালো । ...

অভিব্যক্তির স্বপক্ষে অঙ্গসংস্থান অঙ্গসংস্থানগত ও জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ

জীবদেহের যে সমস্ত অঙ্গের বাহ্যিক গঠন ও কাজ আলাদা হলেও উত্পত্তি এবং অভ্যন্তরীণ গাঠনিক কাঠামো মূলগতভাবে এক, তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলে । বিভিন্ন প্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গের প্রাথমিক গঠনগত মিল দেখে জৈব-বিবর্তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় । এগুলির মধ্যে মেরুদন্ডী ...