ডারউইনের তত্ত্ব ও প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি

Submitted by arpita pramanik on Fri, 12/21/2012 - 23:38

ডারউইনের তত্ত্ব (Theory of Darwin)

ডারউইন অভিব্যক্তি সম্পর্কে যে মতবাদ প্রকাশ করেন, সেই মতবাদকে ডারউইনবাদ বা প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ বলা হয় । 1959 খ্রিস্টাব্দে 'Origin of Species by means of Natural Selection' নামে এক গ্রন্থে ডারউইন তাঁর মতবাদগুলি প্রকাশ করেন ।

ডারউইনের প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি:-

[1]  অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি:-  ডারউইনের মতে, অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই হল জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ।

[2]  অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম:- জীবের জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটার জন্য এবং খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত থাকায় বেঁচে থাকার জন্য জীবকে কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয় । ডারউইন এই রকম সংগ্রামকে 'অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম' আখ্যা দিয়েছেন । জীবকে তিনটি পর্যায়ে এই সংগ্রাম করতে হয়, যথা :

[i]  অন্তঃপ্রজাতির সংগ্রাম, অর্থাৎ একই প্রজাতিভুক্ত বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে সংগ্রাম ।

[ii]  আন্তঃপ্রজাতির সংগ্রাম, অর্থাৎ যে কোনো দুই বা ততোধিক প্রজাতির মধ্যে সংগ্রাম ।

[iii]  প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম ।

[3]  ভ্যারিয়েশান বা ভেদ বা প্রকারণ:-  ডারউইনের মতে, পৃথিবীতে যে-কোনও দুটি জীব কখনই অবিকল একই রকমের হতে পারে না । অর্থাৎ জীবের মধ্যে কিছু না কিছু পার্থক্য বা ভেদ থাকবেই । ডারউইনের ধারণা অনুসারে ছোটো ছোটো ধারাবাহিক পরিবর্তনই হল নতুন প্রজাতির জীবের উৎপত্তির জন্য দায়ী ।

[4]  যোগ্যতমের উদবর্তন:-  ডারউইনের মতে, যে সমস্ত প্রকারণ বা ভেদ জীবের জীবন সংগ্রামের পক্ষে সহায়ক এবং পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনমূলক, তারাই কেবল বেঁচে থাকবে এবং তাদের উদবর্তন ঘটবে । অন্যরা কালক্রমে পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হবে ।

[5]  প্রাকৃতিক নির্বাচন:- যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা অন্যান্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে । অনুকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হলে বেশি সংখ্যায় বেঁচে থাকে এবং অত্যাধিক হারে বংশবিস্তার করে ।  প্রাকৃতিক নির্বাচন এক্ষেত্রে চালুনির মতো কাজ করে এবং সবচেয়ে উন্নত ও যোগ্যতম বংশধরকে ধরে রাখে । অপরপক্ষে, প্রতিকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হয় না বলে পরাজিত সৈনিকের মতো ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়ে যায় ।

[6]  নতুন প্রজাতির উত্পত্তি:- একটি বিশেষ জীবগোষ্ঠীর মধ্যে অনুকূল প্রকারণগুলি পুঞ্জীভূত হওয়ায় জীবের পূর্বপুরুষ ও উত্তরপুরুষের মধ্যে অনেক বেশি বৈসাদৃশ্য দেখা দেয় এবং এরই ফলে কালক্রমে একটি নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে । বিবর্তনের ফলস্বরূপ জীবজগতে নতুন প্রজাতির জন্ম হয় ।

*****

Related Items

টীকাকরণ এবং অনাক্রম্যতাকরণ

দেহে জীবাণু বা জীবাণুসৃষ্ট পদার্থ কৃত্রিমভাবে প্রবেশ করিয়ে ওই রোগের সাপেক্ষে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়াকে টীকাকরণ বলে, এবং যে পদার্থকে দেহে প্রবেশ করানো হয়, তাকে টীকা বলে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অথবা খাওয়ানোর দ্বারা প্রতিষেধক টীকা দেহে প্রবেশ ...

সাধারণ জীবাণু নাশকের ব্যবহার

বিভিন্ন রোগ-জীবাণু প্রতিরোধের জন্য নানা ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয় । সাধারণত জীবাণুনাশকগুলি প্রধানত তিন ধরনের হতে পারে, যেমন : প্রাকৃতিক, ভৌত এবং রাসায়নিক। সূর্যালোক এবং বাতাস স্বাভাবিক জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে । সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির ...

রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগ সমূহ

কোনো রোগের কারণে অথবা ক্ষতের মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্ত নির্গত হয়ে গেলে, রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে । বর্তমানে বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, নার্সিং হোম অথবা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্ত পাওয়া যায় ...

পতঙ্গ বাহকের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগসমূহ

রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের সংক্রমণের ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে । মানবদেহে খাদ্যের সাথে, জলের সাথে, বাতাসের মাধ্যমে, বিভিন্ন পতঙ্গ অথবা অপর জীবের দেহের সাথে সংলগ্ন হয়ে অথবা তাদের দংশনের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয় । এছাড়াও রোগাক্রান্ত অথবা প্রাণীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ...

প্রোটোজোয়া (Protozoa)

এককোশী আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী বলা হয় । আদ্যপ্রাণীদের মধ্যে কিছু প্রাণী মানবদেহে পরজীবীরূপে বসবাস করে এবং নানারকম রোগ সৃষ্টি করে । এখানে পাঠক্রমভুক্ত কয়েকটি আদ্যপ্রাণীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হল - প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স