কোশ চক্র ও কোশ চক্রের পর্যায়

Submitted by arpita pramanik on Thu, 12/13/2012 - 21:40

কোশ চক্র ও কোশ চক্রের পর্যায় (Cell Cycle and Stages of Cell Cycle)

এক কথায় কোশের বৃদ্ধি ও জননের বিভিন্ন দশার চক্র বা চাকার মতো আবর্তনকে কোশ চক্র বলে

কোশ চক্র [Cell Cycle]:- প্রতিটি জীবের মতো প্রতিটি কোশেরও একটি জীবন-চক্র আছে । কোশের এই জীবন-চক্র বিভাজন [division] ও অবিভাজন [non-division] এই দু'টি ঘটনার মধ্যে আবর্তিত হ'তে থাকে । জনিতৃ কোশের [parent cell] বিভাজনের মধ্যে দিয়ে অপত্য কোশ [daughter cell] সৃষ্টি হয় এবং অপত্য কোশের মৃত্যুর পর তার জীবনাবসান ঘটে । কোশের সত্তা অর্জন ও সত্তার বিলোপ যে হেতু কোশ বিভাজনের মধ্যে দিয়েই ঘটে, সেহেতু একে কোশ চক্র বা সেল সাইকল [cell cycle] বলা হয় ।

কোশ চক্রের সংজ্ঞা [Defination of Cell Cycle]:- একটি কোশ বিভাজনের আরম্ভ থেকে পরবর্তী কোশ বিভাজনের শুরু পর্যন্ত যে সমস্ত ধারাবাহিক ও চক্রাকার দশাগুলির মধ্য দিয়ে একটি কোশজীবন অতিবাহিত হয়, তাদের সামগ্রিকভাবে কোশচক্র বলে । 

কোশ চক্রের পর্যায় [Stages of Cell Cycle]:- কোশ চক্রের দুটি পর্যায় থাকে, যথা: [১] অবিভাজন পর্যায় বা ইন্টারফেজ বা M ফেজ  এবং [২] কোশ বিভাজন পর্যায় বা কোশ বিভাজন কাল  ।

[1] অবিভাজন পর্যায় বা ইন্টারফেজ বা M ফেজ [Interphase]:- এই পর্যায়ে কোশ বিভাজন ঘটে না । এই সময় অপত্য কোশে পরবর্তী বিভাজনের জন্য প্রস্তুতি পর্ব চলে । এই পর্বে বিপাকীয় কার্যাবলি দ্রুতহারে চলতে থাকে এবং DNA -র সংশ্লেষণ কাজ সংঘটিত হয় । ইন্টারফেজ পর্যায়ে কোশের প্রাথমিক বৃদ্ধির দশাটিকে G1 দশা বা গ্যাপ-1 [G1 stage] বলে । এই সময় RNA -তে প্রোটিন সংশ্লেষ ঘটে এবং কোশের বৃদ্ধি ঘটে, তাই একে কোশ-বৃদ্ধি দশাও বলে । এর পরবর্তী পর্যায়ে DNA সংশ্লেষণ ঘটে, একে S দশা [S-stage] বা সংশ্লেষণ দশা বলে ।  DNA সংশ্লেষণ শেষ হওয়ার পর যখন দ্বিতীয়বার কোশের বৃদ্ধি ঘটে, তখন তাকে G2 দশা বা গ্যাপ-2 [G2 stage] বলে । এই দশাটি হল DNA সংশ্লেষণ ও প্রফেজ দশার শুরুর মধ্যবর্তী সময় কাল ।  G1G2 দশায় চরম বিপাকীয় সক্রিয়তা দেখা যায় ।

[2] কোশ বিভাজন পর্যায় বা কোশ বিভাজন কাল [Mitotic phase]:-  ইন্টারফেজ দশার পর মাইটোটিক ফেজ বা বিভাজন দশা শুরু হয় । মাইটোটিক ফেজটি প্রধানত চারটি দশায় বিভক্ত, যথা : প্রফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ,  টেলোফেজ দশা

বিজ্ঞানী হার্ডওয়ার্ডপেল্ক [Howard and Pelc]  কোশ চক্রটিকে চারটি অন্তর্দশায় ভাগ করেছেন, যথা : G1, S, G2, এবং  M দশা ।  

*****

Related Items

ভাইরাস ও ভাইরাসের বৈশিষ্ঠ্য

ভাইরাস কথার শব্দতত্ত্বগত অর্থ বিষ। 1796 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার সর্বপ্রথম ভাইরাস আক্রান্ত বসন্ত রোগের কথা উল্লেখ করেন । 1936 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ব্যাডেন এবং পিরী পরীক্ষা করে দেখান যে, ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন আছে এবং ভাইরাসগুলো নিউক্লিও ...

মাছ ও পায়রার অভিযোজন বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য

মাছ জলচর প্রাণী। পায়রা খেচর প্রাণী। মাছের দেহ আঁশ অথবা পিচ্ছিল মিউকাস দিয়ে আবৃত । পায়রার দেহ পালক দ্বারা আবৃত । মাছের গমন অঙ্গ হল পাখনা । পায়রার গমন অঙ্গ হল একজোড়া ডানা এবং একজোড়া পা। মাছের মেরুদন্ডের দু'পাশে মায়োটোম পেশি থাকে, যা মেরুদন্ডকে ...

পায়রার অভিযোজন

পায়রা খেচর প্রাণী । আকাশে ওড়ার জন্য পায়রার নিম্নলিখিত অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় । পায়রার উড্ডয়নে সাহায্যকারী অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য দেহের তাপ সংরক্ষণে সাহায্য করে । দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস করে । পায়রার পালকগুলি বার্ব, বার্বিউল ও ...

রুই মাছের অভিযোজন

রুই মাছ মুখ্য জলজ প্রাণী । জলে বসবাস করার জন্য এদের দেহে নিম্নলিখিত অভিযোজনগুলি দেখা যায় । রুই মাছের দেহ বেম বা মাকুর মতো । দেহ দু'পাশ থেকে চ্যাপ্টা এবং দেহ থেকে কোনো প্রবর্ধক বেরিয়ে থাকে না । জলে সাঁতার কাটার সময় জলের গতি রোধ করার জন্য দেহের গঠন ...

সুন্দরী বা সুঁদরী গাছের অভিযোজন

সুন্দরী এক রকমের লবণাম্বু উদ্ভিদ । এরা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় । এর অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল - মাটি লবণাক্ত থাকায় মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে না, মূল মাটির অল্প নীচে বিস্তৃত থাকে । মাটি কর্দমাক্ত ও রন্ধ্রবিহীন ...