মানবদেহে বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি : পিটুইটারি গ্রন্থি

Submitted by arpita pramanik on Fri, 12/07/2012 - 17:52

মানব দেহে বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অবস্থান এবং ক্ষরণ (Location and Secretion of Endocrine Glands in Man)

পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary Glands) :-  পিটুইটারি মানবদেহের সবচেয়ে ছোটো কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী অনাল গ্রন্থি । ওজন মাত্র 500 mg. । এই গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলি, অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে একে মুখ্য গ্রন্থি বা প্রভু গ্রন্থি [Master Gland] বলে । পিটুইটারি গ্রন্থি মস্তিষ্কের মূলদেশে স্ফেনয়েড অস্থির সেলা-টারসিকা প্রকোষ্ঠে অবস্থিত । অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলি হল ACTH, GH, TSH, GTH

পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন হরমোন ও তাদের কাজ

A.C.T.H. বা অ্যাডরিনো কর্টিকোট্রফিক হরমোন :-  ACTH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । ACTH হরমোনের কাজ হল :

[i]  অ্যাডরিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে ।

[ii]  অ্যাডরিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলকে উদ্দীপিত করে তার ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে ।

[iii] এই হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে অ্যাডরিনাল কর্টেক্সের ক্ষরণ বেড়ে গিয়ে কুশিং বর্ণিত রোগ হয় ।

G.H. বা গ্রোথ হরমোন বা বৃদ্ধি পোষক হরমোন:-  GH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । GH হরমোনের কাজ  হল :

[i]  মানবদেহের তথা প্রাণীদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায় ।

[ii]  অস্থি ও তরুনাস্থির দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি ঘটায় । 

[iii]  শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাট বিপাকে সাহায্য করে ।

[iv] এই হরমোনের কম ক্ষরণে বামনত্ব বা ডোয়ারফিজম এবং অধিক ক্ষরণে অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম বা অ্যাক্রোমেগালি রোগ হয় । 

T.S.H. বা থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন:-  TSH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । TSH হরমোনের কাজ হল :

[i] থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ।

[ii] থাইরয়েড গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে তার ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা ।

[iii]  দেহের আয়োডিন বিপাক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা ।

[iv]  এই হরমোনের কম ক্ষরণে থাইরয়েডের ক্ষরণ হ্রাস পায় এবং ক্ষরণ বেড়ে গেলে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার বেড়ে যায় ।

G.T.H. বা গোনাডোট্রফিক হরমোন:-  GTH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । GTH হরমোনের কাজ হল :- গোনাডো বা জনন গ্রন্থির (শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়) বৃদ্ধি ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে ।

F.S.H. বা ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন:- FSH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় ।  FSH হরমোনের কাজ হল :- স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিকল বা ডিম্বথলির বৃদ্ধিতে এবং তা থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরিত হতে সাহায্য করে ।

I.C.S.H. ইন্টারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন:- ICSH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । ICSH হরমোনের কাজ হল :- পুরুষ দেহে শুক্রাশয়ের ইন্টারস্টিশিয়াল কোষসমূহকে উদ্দীপিত করে টেস্টোস্টেরণ নামক হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে ।

L.H. বা লিউটিনাইজিং হরমোন:-  LH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । LH হরমোনের কাজ হল :- স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ের করপাস লিউটিয়াম বা পীত গ্রন্থি গঠনে এবং তা থেকে প্রজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে ।

L.T.H. বা লিউটোট্রফিক হরমোন বা প্রোল্যাকটিন :-  LTH হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় ।  LTH হরমোনের কাজ হল :- মাতৃদেহে স্তনদুগ্ধ ক্ষরণে সহায়তা করে ।

পিটুইটারি হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ:- পিটুইটারি নির্যাস ইনজেক্ট করে অর্থাৎ দেহে প্রবেশ করিয়ে দুগ্ধবতী গাভির দুধের উত্পাদন বাড়ানো হয় । মাছের কৃত্রিম প্রজননের সময় পিটুইটারি নির্যাস ইনজেকসন করা হয়, ফলে স্ত্রীমাছ সঙ্গে সঙ্গে ডিম পাড়ে এবং পুরুষ মাছ তাদের শুক্রাণু নিঃসরণ করে ।

*****

Related Items

ডারউইনবাদের ব্যাখ্যা

ডারউইনের মতে, অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । একটি স্ত্রী স্যালমন মাছ প্রজনন ঋতুতে প্রায় 3 কোটি ডিম পাড়ে । একটি ঝিনুক একবারে 12 কোটি ডিম্বাণু উত্পাদন করে ...

ডারউইনের তত্ত্ব ও প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি

ডারউইনের মতে, অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই হল জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । জীবের জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটার জন্য এবং খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত থাকায় বেঁচে থাকার জন্য জীবকে কঠিন প্রতিযোগিতার ...

অভিব্যক্তির তত্ত্বাবলি ও ল্যামার্কের তত্ত্ব

অভিব্যক্তির ফলে নতুন প্রজাতির অথবা একটি প্রজাতি থেকে অন্য একটি প্রজাতির উত্পত্তি হয় । অভিব্যক্তির কৌশল সম্পর্কে যেসব বিজ্ঞানী বিভিন্ন তত্ত্বাবলি প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁদের মধ্যে ল্যামার্ক এবং ডারউইনের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য । এখানে অভিব্যক্তির বিভিন্ন তত্ত্বাবলি ...

জীবাশ্মঘটিত বা প্রত্নজীববিদ্যা সংক্রান্ত প্রমাণ

ভূগর্ভের শিলাস্তরে সুদীর্ঘকাল যাবৎ প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত কিন্তু আজকের পৃথিবীতে লুপ্ত জীবদেহের সামগ্রিক বা আংশিক প্রস্তরীভূত অবস্থা অথবা তার ছাপকে জীবাশ্ম বলে । বিবর্তন সম্পর্কে যেসব প্রমাণ আছে তাদের মধ্যে জীবাশ্ম ঘটিত প্রমাণ সব থেকে জোরালো । ...

অভিব্যক্তির স্বপক্ষে অঙ্গসংস্থান অঙ্গসংস্থানগত ও জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ

জীবদেহের যে সমস্ত অঙ্গের বাহ্যিক গঠন ও কাজ আলাদা হলেও উত্পত্তি এবং অভ্যন্তরীণ গাঠনিক কাঠামো মূলগতভাবে এক, তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বলে । বিভিন্ন প্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গের প্রাথমিক গঠনগত মিল দেখে জৈব-বিবর্তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় । এগুলির মধ্যে মেরুদন্ডী ...