হুমায়ুন ও মুঘল আফগান প্রতিদ্বন্দ্বিতা

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 09/08/2014 - 08:54

হুমায়ুন ও মুঘল আফগান প্রতিদ্বন্দ্বিতা (Humayun and The Mughal-Afghan Contest)

বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন ১৫৩০ সালে পিতার সিংহাসনে আরোহণ করেন । কিন্তু তিনি যে জটিল সমস্যা ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তা মোকাবিলা করার যোগ্যতা তাঁর ছিল না । দিল্লির শিশু রাষ্ট্রের ভিত ছিল খুবই দুর্বল । তখনও কোনো শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে নি । আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল না । আফগান দলপতিরা পরাজিত হলেও ক্ষুব্ধ ও নিজেদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে বদ্ধ পরিকর ছিলেন । এই অবস্থায় হুমায়ুন তাঁর পৈত্রিক সাম্রাজ্য নিজ ভাইদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে উদার চিত্তের পরিচয় দিলেও রাজনৈতিক বিজ্ঞতার পরিচয় দেন নি । কারণ এর ফলে বাবরের সাম্রাজ্যের অনৈক্য সূচিত হয় । যাই হোক, হুমায়ুনের দুর্বলতা ও অযোগ্যতার সুযোগ নিয়ে ভারতে রাজনৈতিক প্রাধান্য স্থাপনের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে আবার মুঘল-আফগান প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূত্রপাত হয় । এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১৫৩০-৪০ পর্যন্ত দশ বছর স্থায়ী হয় । এই সময়ের মধ্যে হুমায়ুন মালয়, গুজরাট ও বাংলায় নিজ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় ব্রতী হন । তিনি বিহারের শাসনকর্তা শেরশাহের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেন নি । শেরশাহ তাকে পরাস্ত করে ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করেন । এর ফলে ভারতে আফগান শক্তির পুনরুত্থান এবং মুঘল সাম্রাজ্যের সাময়িক বিলুপ্তি ঘটে । ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ পর্যন্ত শেরশাহ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে থাকেন । এরপর ১৫৪৫ থেকে ১৫৫৫ পর্যন্ত ১০ বছর এক প্রকার রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয় । শেরশাহের বংশধরেরা অপদার্থ ছিলেন । ফলে আফগান পুনরুত্থানও স্বল্পস্থায়ী হয় । ১৫৫৫ সালে হুমায়ুন দিল্লির সিংহাসন পুনরাধিকার করার ফলে মুঘল সাম্রাজ্য নব জীবন লাভ করে । অবশেষে ১৫৫৬ সালে পাণিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে আকবর হিমুকে পরাস্ত করে মুঘল সাম্রাজ্য সম্পূর্ণরূপে নিষ্কণ্টক করেন ।

*****

Related Items

ইলতুৎমিস (Iltutmish)

দিল্লি সুলতানির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইলতুৎমিস । তিনি ১২১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । কুতুবউদ্দিন তাঁকে ক্রীতদাস হিসাবে ক্রয় করেন । পরে তাঁর প্রতিভায় আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে বদাউনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন ও নিজ কন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন । ...

কুতুবউদ্দিন আইবক (Qutb-ud-din Aibak)

১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ ভারতের অন্যান্য রাজপুত রাজাদের সাহায্য নিয়ে মহম্মদ ঘুরিকে পরাস্ত করেন । পরের বছর অর্থাৎ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বীরাজকে পরাজিত নিহত করে দিল্লী ও আজমীর দখল করেন ...

সুলতানি আমল (Delhi Sultanate)

সুলতানি আমলে পর পর পাঁচটি রাজবংশ দিল্লির সিংহাসনে ক্ষমতাসীন ছিল । সেই পাঁচটি রাজবংশ হল - ইলবেরি তুর্কি বংশ বা দাসবংশ, খলজি বংশ, তুঘলক বংশ, সৈয়দ বংশ, লোদী বংশ। সুলতানি আমলে বলপূর্বক ও হত্যা করে সিংহাসন দখল করা ছিল অতি স্বাভাবিক ঘটনা ...

মহম্মদ ঘুরি (Muhammad Ghori)

আফগানিস্তানের গজনী ও হিরাটের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল ঘোর রাজ্য । সেই সময় উত্তর ভারতের হিন্দু রাজাদের মধ্যে কোনো ঐক্য ছিল না । এই সব হিন্দু রাজাদের মধ্যে আজমীর ও দিল্লির অধিপতি পৃথ্বীরাজ চৌহান ও কনৌজ-রাজ জয়্চাঁদ ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী ...

সুলতান মামুদ (Sultan Mahmud of Gazni)

মহম্মদ বিন কাশিমের সিন্ধু জয়ের ৩০০ বছর বাদে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গজনির সুলতান মামুদ ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন । সুলতান মামুদ একজন লোভী, লুন্ঠনকারী, রূপেই পরিচিত । ভারতে রাজ্য স্থাপনের কোনো ইচ্ছা তার ছিল না । ইসলাম ধর্মের প্রসার ...