সৈয়দ ও লোদি বংশ

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 09/07/2014 - 05:19

সৈয়দ ও লোদি বংশ (The Sayyid dynasty and the Lodi dynasty)

সৈয়দ বংশ (১৪১৪ - ১৪৫১) : তৈমুর লঙ দেশে ফিরে যাওয়ার আগে খিজির খান নামে একজন ব্যক্তিকে দিল্লি, মুলতান এবং দীপালপুরের শাসন-ভার দিয়ে যান । এই খিজির খান তুঘলক বংশকে উচ্ছেদ করে ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন । এই বংশের চারজন সুলতান ১৪১৪ থেকে ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । খিজির খাঁ ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । মোবারক শাহ ১৪২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু-মুসলিম অভিজাতবর্গের ষড়যন্ত্রে মোবারক শাহ প্রাণ হারান । মোবারক শাহের মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র মহম্মদ শাহ ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । ১৪৪৫ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ শাহের মৃত্যু ঘটলে অভিজাতবর্গ তাঁর পুত্র আলাউদ্দিন আলম শাহকে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠা করেন । আলাউদ্দিন আলম শাহ ১৪৪৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । কিন্তু এরা কেউই দিল্লি সুলতানির পতন আটকাতে পারেন নি । খিজির খানের আমলেই দিল্লি সুলতানি কেবলমাত্র মুলতান, দীপালপুর, লাহোর, দিল্লি ও দোয়াব অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায় ।

লোদি বংশ (১৪৫১ - ১৫২৬) : সৈয়দ বংশের পতনের পর দিল্লিতে লোদি বংশের শাসনব্যবস্থা শুরু হয় ।  লোদিরা ছিলেন আফগান । বহুলুল লোদি ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দে লোদি বংশের প্রতিষ্ঠা করেন । বহুলুল লোদি ১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । তিনি জৌনপুর অধিকার করেন । বহুলুল লোদির মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র তৃতীয় পুত্র নিজাম খাঁ আমির-ওমরাহদের সহযোগিতায় 'সিকান্দার শাহ লোদি' নাম নিয়ে ১৪৮৯ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন । সিকান্দার শাহ লোদি ১৪৮৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । তিনি বিহার পর্যন্ত তাঁর ক্ষমতা বিস্তার করেন । সিকান্দার শাহ লোদির মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইব্রাহিম লোদি ১৫১৭ খ্রীস্টাব্দে পিতার সিংহাসনে বসেন । ইব্রাহিম লোদি ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । এই ইব্রাহিম লোদিকেই ১৫২৬ খ্রীস্টাব্দে বাবর পাণিপথের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন । ভারতের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় ।

*****

Related Items

মুঘল যুগে ভারতের কৃষি নির্ভর শিল্প

মুঘল আমলে গ্রামীন অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ও হস্তশিল্প বা কুঠির শিল্প । কুঠির শিল্পকে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে । প্রথমত, কৃষিনির্ভর শিল্প এবং দ্বিতীয়ত অকৃষি শিল্প । কৃষিনির্ভর শিল্পের মধ্যে পড়বে শর্করা শিল্প, তৈল, তামাক, নীল, মদ প্রভৃতি শিল্প । ...

সুলতানি ও মুঘল আমলের চিত্রকলা

একটি সময় ছিল যখন মনে করা হত সুলতানি আমলে চিত্রকলার কোনো চর্চা হত না । ইসলামে ছবি আঁকা নিষিদ্ধ ছিল । বর্তমানে এই ধারণা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে । আসলে ভারতে ইসলামের আর্বিভাবের ফলে যে সমন্বয়ী প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল, তা ভারতের সংস্কৃতিকে গভীরভাবে ...

মুঘল যুগের স্থাপত্য

স্থাপত্য ও চিত্রকলার ইতিহাসে মুঘল যুগের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে । নির্মাতা হিসাবে মুঘল সম্রাটদের খ্যাতি ছিল জগৎজোড়া । এই যুগের স্থাপত্য ভারতীয় ও পারস্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল । মুঘল স্থাপত্যরীতির সুচনা হয় আকবরের সময়ে ...

সুলতানি যুগের স্থাপত্য

দিল্লির কুতুবমিনার (Qutb Minar) হল এয়োদশ শতকের মুসলিম স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় নিদর্শন । সুফি সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল । কুতুবমিনারের নির্মাণ কার্য শুরু করেন কুতুবউদ্দিন আইবক এবং সম্পূর্ণ হয় ইলতুৎমিসের আমলে । ...

প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণ

প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণ :

ফার্গুসনের মতে, সুলতানি স্থাপত্যের প্রকৃতি ছিল ইন্দো-স্যারাসিনিক (Indo-Saracenic) বা পাঠান । আবার হ্যাভেলের মতে, এই শিল্পরীতির ‘দেহ ও আত্মা’ ছিল ভারতীয় । আসলে সুলতানি যুগের স্থাপত্য প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরী