মির কাশিম (Mir Kasim)

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 11/02/2014 - 07:34

মিরকাশিম (Mir Kasim) :

কোম্পানির প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ এবং বর্ধমান, মেদিনীপুর, চট্টোগ্রামের জমিদারি প্রদানের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে মিরকাশিম বাংলার মসনদ লাভ করেন । ইংরেজদের সাহায্যে বাংলার মসনদ দখল করলেও তিনি ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ ছিলেন না, বরং বাস্তববাদী ছিলেন । অহেতুক ইংরেজ বিরোধিতা তাঁর কাম্য ছিল না । তিনি সব সময়েই ইংরেজদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখতে চেয়েছিলেন । অনেকের মতে, তিনি স্বাধীনচেতা পুরুষ ছিলেন এবং মিরজাফরের মতো ইংরেজদের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে চাননি । তাই তাঁর সঙ্গে ইংরেজদের সংঘর্ষ হয়েছিল । এই ধরনের ব্যাখ্যা ভিত্তিহীন । আসলে তিনি ইংরেজদের সঙ্গে সব সময় বোঝাপড়ার রাস্তা খুলে রাখতেই চেয়েছিলেন । তবে তাঁর অর্থ এই নয় যে, ইংরেজদের অন্যায় আবদারগুলি তিনি মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন । মিরজাফরের মতো তিনি অপদার্থ এবং অযোগ্য ছিলেন না । মিরকাশিম এমন কিছু প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন যা তাঁর স্বাধীনচেতা মনোভাবেরই পরিচয় দেয় । 

(১) তিনি ইংরেজদের সমর্থনপুষ্ট রাম নারায়ণকে ক্ষমতাচ্যুত করেন । মিরজাফরও তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ক্লাইভের বিরোধিতায় তা পারেননি ।

(২) মিরকাশিম সম্রাট শাহ আলমকে কূটনৈতিক তৎপরতায় বিহার ত্যাগ করতে বাধ্য করেন ।

(৩) তিনি তাঁর রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গেরে স্থানান্তরিত করেন । 

(৪) তিনি সমরু ও মার্কার নামে দুজন সেনাপতির সাহায্যে সেনাবাহিনীকে ইউরোপীয় কায়দায় সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন ।

কিন্তু তাঁর এইসব সংস্কারের পিছনে প্রত্যক্ষ ইংরেজ বিরোধিতা ছিল না । বস্তুত, মিরকাশিমের সঙ্গে ইংরেজদের এমন কোন চুক্তি হয়নি, যা এইসব সংস্কারের পরিপন্থী ছিল । ইংরেজরাও তা নিয়ে আপত্তি করেননি । মিরকাশিমের কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না । তাঁর পক্ষে ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আসারও কোনো প্রশ্ন ছিল না । আর ইংরেজরাও তাঁর কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করতে চায়নি ।  

ইংরেজরা চেয়েছিলেন নবাব যেমন তাদের অবৈধ ব্যবসায়ে কোনো বাধা দান না করেন । কিন্তু এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই বিরোধ বেধেছিল এবং ইংরেজদের একগুঁয়েমি মনোভাব ও কোনো প্রকার বোঝাপড়ায় আসতে অনিচ্ছুকতার জন্য শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল । ইংরেজদের অবৈধ ব্যবসার জন্য নবাব সমেত সমস্ত দেশীয় বণিকই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল । শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার ফলে নবাবের বাৎসরিক ২৫ লক্ষ টাকা লোকসান হচ্ছিল । নবাব তখন অর্থনৈতিক সংকটে । তাই তিনি এই বিষয়ে কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেন এবং সামান্য কিছু শুল্কও দাবি করলেন । কিন্তু ইংরেজরা তাঁর সামান্যতম দাবি মানতেও প্রস্তুত ছিল না । তখন তিনি দেশি-বিদেশি সমস্ত ব্যবসাদারদের শুল্ক মুকুব করলেন । তাতেও ইংরেজরা খুশি না হওয়ায় যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে ।

*****

Related Items

আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ - দক্ষিণ ভারত

বাতাপির চালুক্য বংশ - উত্তর মহারাষ্ট্র ও বিদর্ভে বাকাটকদের পতনের পর চালুক্য বংশের উদ্ভব হয় । রাষ্ট্রকূট বংশ - চালুক্যদের পতনের পর রাষ্ট্রকূটদের উদ্ভব হয় । কল্যাণীর চালুক্য বংশ - রাষ্ট্রকূট বংশের শেষ রাজা দ্বিতীয় কর্ককে, কাঞ্চীর পল্লব বংশ- সাতবাহন বংশের পতনের পর কৃষ্ণা থেকে ...

বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ - বাংলা

শশাঙ্ক ৬০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর গৌড়রাজ শশাঙ্কের আমলে বাংলা প্রথম সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে । পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের সুযোগ্য পুত্র ধর্মপাল ...

আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ - পশ্চিম ও উত্তর ভারত

বলভীর মৈত্রিক বংশ, যশোধর্মণ, কনৌজের উত্থান - মৌখরী বংশ, পুষ্যভূতি বংশ ও হর্ষবর্ধন, প্রতিহার বংশ, হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর প্রতিহার বংশ উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রভাব শালী হয়ে পড়ে। প্রতিহার বা গুর্জর প্রতিহাররা ছিল রাজপুত জাতির একটি শাখা । এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ...

গুপ্ত সাম্রাজ্য (Gupta Dynasty)

কুষাণ ও সাতবাহন উভয় সাম্রাজ্যের বেশ কিছু অংশ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হলেও অয়তনের দিক থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্য মৌর্য সাম্রাজের তুলনায় ছোটো ছিল । গুপ্ত সাম্রাজ্য প্রধানত বিহার ও উত্তর প্রদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল । বিহার অপেক্ষা উত্তর প্রদেশই ছিল এই সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র এবং গোড়ার ...

সাতবাহন সাম্রাজ্য (Satabahanas dynasty)

দাক্ষিণাত্য ও মধ্য ভারতে মৌর্যদের প্রভাব খুবই কম ছিল । অশোকের মৃত্যুর পর দাক্ষিণাত্যে মৌর্যদের আধিপত্য শেষ হয়ে যায় । কিন্তু যাতায়াতের অসুবিধা ও এখানকার অনুন্নত অর্থনীতি গোড়ার দিকে এই অঞ্চলকে বিদেশি আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখে । ফলে খ্রিস্ট পূর্ব প্রথম শতক থেকে সাতবাহন ...