বক্সারের যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 11/02/2014 - 18:52

বক্সারের যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব :

বক্সারের যুদ্ধ (The Battle of Buxar) : কাটোয়া, মুর্শিদাবাদ, গিরিয়া, সুটি, মুঙ্গের ও উদয়নালায় পরপর ছয়টি যুদ্ধে মিরকাশিম পরাজিত হন । এই অবস্থায় ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মিরকাশিমকে সিংহাসনচ্যুত করে ইংরেজরা মিরজাফরকে আবার বাংলার মসনদে বসান । কিন্তু মিরকাশিম হাল না ছেড়ে মুঘল সম্রাট শাহ আলম ও অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার সঙ্গে একযোগে ইংরেজদের মোকাবিলার জন্য বক্সারের প্রান্তরে মিলিত হন । ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের ২২শে অক্টোবর বক্সারের যুদ্ধে এই মিলিত বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় ঘটল ।

বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব (Importance of The Battle of Buxar) : বক্সারের যুদ্ধ বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।

(১) পলাশির যুদ্ধে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়েছিল । কিন্তু ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে পলাশির যুদ্ধের মীমাংসা হয়েছিল । ব্রিটিশ রণশক্তি ও কৌশলের কোনো পরিচয় সেখানে পাওয়া যায় নি । কাজেই কেবলমাত্র পলাশির যুদ্ধের ফলে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপিত হলে তা ইংরেজদের পক্ষে মর্যাদা হানিকর ও কলঙ্কজনক ঘটনা বলে বিবেচিত হত । কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে ব্রিটিশ সামরিক প্রাধান্য স্বীকৃত ছিল । এই যুদ্ধ প্রমাণ করল শক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই ইংরেজরা বাংলা দখল করেছিল । পলাশির প্রান্তরে যার সূচনা, বক্সারে তার পরিপূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি ।

(২) কেবল বাংলা নয়, বক্সারের যুদ্ধ জয়ে দিল্লি সহ প্রায় সমগ্র উত্তর ভারতে কোম্পানি সাম্রাজ্য স্থাপনের সুযোগ পায় । কিন্তু বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে তারা সে সুযোগ গ্রহণ করে নি । বাণিজ্যিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে তারা মুঘল সম্রাটকে তাঁর সিংহাসনের বিনিময়ে বাংলার দেওয়ানি লাভ করে । দেওয়ানি কোম্পানির আর্থিক স্বচ্ছলতার সহায়ক হয় ।

*****

Related Items

ভারতীয় সামন্ততন্ত্র (Indian Feudalism)

ভারতীয় সামন্ততন্ত্র একটি অত্যন্ত ব্যাপক, জটিল ও বিতর্কিত বিষয় । সাধারণত ‘সামন্ততন্ত্র’ শব্দটি মধ্যযুগে ইউরোপের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়ে থাকে । বর্বর আক্রমণের এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে নবম শতকে এই প্রতিষ্ঠানটি বিকশিত হয়েছিল মূলত পশ্চিম ইউরোপে । ভূমিকেন্দ্রিক ও ভূমিনির্ভর ...

প্রাচীন ভারতের অর্থনৈতিক জীবন

প্রাচীন ভারতে কৃষিই ভারতের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা ছিল । আর্যসভ্যতা ছিল গ্রামকেন্দ্রিক এবং আর্য অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি । ঋকবৈদিক যুগে পশুচারণই ছিল আর্যদের প্রধান উপজীবিকা এবং গো-সম্পদ ছিল ধনসম্পত্তির মাপকাঠি । ধনী ব্যাক্তিকে বলা হত ‘গোমৎ’ । ...

প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীদের স্থান

বৈদিক যুগে নারীর স্থান: প্রাচীন ভারতে নারীর স্থান নিয়ে বিতর্ক আছে । সাধারণভাবে বলা হয় বৈদিক যুগে নারীর স্থান ছিল খুব উপরে । পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কন্যাসন্তানের জন্ম অনভিপ্রেত হলেও তার যত্ন ও লালনপালনে কোনো ত্রুটি থাকত না । ঘোষ, অপালা, বিশ্ববারার ...

জাতি ভেদ প্রথা (Caste System)

বৈদিক যুগ : আর্যরা প্রথম দিকে যাযাবর ছিল । পরে তারা আগুন লাগিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে। ক্রমশ তারা কৃষিকাজ করতে শিখে । প্রথমের দিকে ব্যক্তিগত উদ্যোগ বলে কিছু ছিল না । সব কিছু ছিল যৌথ । এই সময় ...

বিদেশি আগমন ও হিন্দু সমাজে গতিশীলতা

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতে ব্যাকট্রীয়, গ্রীক, শক, পহ্লব, কুষাণ ও আরও পরে হুন প্রভৃতি বিদেশি জাতির আগমনের ফলে ভারতীয় সমাজে তার প্রভাব পড়ে । এইসব বিদেশির মধ্যে অনেকেই ভারতে থেকে যান, বিবাহ করেন এবং ভারতীয় সমাজের অঙ্গীভুত হয়ে যান । ...