দিল্লি সুলতানির পতনের কারণ

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 09/07/2014 - 05:41

দিল্লি সুলতানির পতনের কারণ (Causes of the Downfall of the Delhi Sultanate) :

দিল্লি সুলতানির পতন অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয় ।

(১) জন্মলগ্ন থেকেই দিল্লি সুলতানির জীবনীশক্তি ছিল ক্ষীণ । আগাগোড়াই দিল্লি সুলতানির ভিত্তি ছিল দুর্বল ও অনিশ্চিত । আলাউদ্দিন এবং মহম্মদ বিন তুঘলকের সময় ছাড়া দিল্লি সুলতানির কাঠামো ছিল স্বৈরতন্ত্র দিয়ে গড়া, যা দাঁড়িয়েছিল সংকীর্ণ ধর্মীয় ভিত্তির ওপর । জনগণের আনুগত্য ও সমর্থন সেখানে ছিল না ।

(২) দিল্লি সুলতানি শাসনের প্রধান ভিত্তি ছিল সামরিক শক্তি এবং এর কার্যকারিতা ও দক্ষতা পুরোপুরি সুলতানের ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও যোগ্যতার ওপর নির্ভরশীল ছিল । এই ধরনের সাম্রাজ্য কখনই স্থায়ী হতে পারে না । যতদিন পর্যন্ত সুলতানেরা শক্তিশালি ছিলেন এবং বলপূর্বক শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন ততদিনই এর স্থায়িত্ব ছিল । কিন্তু পরবর্তীকালে তা যখন সম্ভব হয়নি, তখনই দিল্লি সুলতানির পতন অনিবার্য ও সুনিশ্চিত হয়েছে ।

(৩) বিশাল আয়তন ভারতবর্ষকে দিল্লি থেকে শাসন করা অসম্ভব ছিল । বাংলার মতো দূরবর্তী অঞ্চলে দিল্লি সুলতানির কর্তৃত্ব ছিল অনিশ্চিত । তার ওপর দক্ষিণ ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের চেষ্টা করে দিল্লি সুলতানি নিজেকে ধরে রাখার ক্ষমতা অতিক্রম করে গিয়েছিল ।

(৪) আমির-ওমরাহদের স্বার্থপরতা এবং ক্ষমতা দখলের জন্য কুৎসিত অন্তর্দ্বন্দ্ব ও পারস্পরিক বিদ্বেষ সুলতানি সাম্রাজ্যের দুর্বলতা প্রকট করে দিয়েছিল । রাষ্ট্র বা সুলতানের প্রতি তাদের কোন আনুগত্য ছিল না । সুলতানি যুগে কোন উত্তরাধিকার বিধি বা আইন ছিল না বলে একজন সুলতানের মৃত্যু হলেই নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়ে উঠত ।

(৫) সামন্ততান্ত্রিক শাসন কাঠমো ছিল সুলতানি সাম্রাজ্যের দুর্বলতার আর একটি উৎস । বিশেষত ফিরোজ শাহ তুঘলক নগদ বেতনের বদলে বংশানুক্রমিক ইকতা প্রবর্তন করে দিল্লি সুলতানির সর্বনাশের পথ প্রশস্থ করে যান ।

(৬) সাংগাঠনিক ও প্রশাসনিক এইসব দুর্বলতার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করবার জন্য উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সুরক্ষিত রাখবার যথাযথ দায়িত্ব দিল্লির সুলতানিরা পালন করেন নি । ফলে বারবার মোঙ্গল আক্রমণে দিল্লি সুলতানি জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলে । বিশেষত, ১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তৈমুর লঙ্গের ভারত আক্রমণ দিল্লি সুলতানির কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেয় ।

*****

Related Items

সুলতানি যুগে আঞ্চলিক ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ

সুলতানি ও মুঘল আমল ছিল বাংলা সাহিত্যের সুবর্ণময় যুগ । বিখ্যাত বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস সম্ভবত চতুর্দশ শতকের শেষ দিকে বীরভূম জেলার নানুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন । সমকালীন কবি বিদ্যাপতি মিথিলার অধিবাসী হলেও আদতে বাংলার কবি বলেই স্বীকৃত ছিলেন । ...

সুলতানি যুগের সাহিত্য

ভারতে ইসলামি শাসন প্রবর্তিত হওয়ার ফলে স্বাভাবিক কারণেই সংস্কৃত ও অন্যান্য প্রাচীন ভারতীয় ভাষা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে । প্রশাসনের ভাষা হিসাবে ফারসি ভাষার ব্যবহার শুরু হয় । ফলে সংস্কৃতসহ প্রাচীন ভারতীয় ভাষাগুলির চর্চা অনেক হ্রাস পায় । সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা অবশ্য ...

সুফি আন্দোলন (Sufi Movement)

খ্রীস্টীয় নবম–দশম শতকে ইসলাম ধর্মের মধ্যে একটি প্রগতিশীল আন্দোলনের সূত্রপাত হয় । এই আন্দোলন ‘সুফি আন্দোলন’ নামে পরিচিত । যারা সুফ বা পশমের বস্ত্র পরিধান করে তাদেরকেই সুফি বলা হয় । অর্থাৎ, সুফি কথাটির সঙ্গে ‘সাফা’ বা পবিত্রতা ও ‘সাফ’ বা অবস্থানের কোন সম্পর্ক নেই । ...

ভক্তি আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ধর্মপ্রচারকগণ

ভক্তি আন্দোলনের ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে রামানন্দ ও নামদেবের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য । রামানন্দ ছিলেন রামের উপাসক । সহজ হিন্দিতে তিনি জনগনের মধ্যে ভক্তিবাদ প্রচার করেন । তিনি জাতিভেদ প্রথা মানতেন না । তাঁর শিষ্যদের মধ্যে রবিদাস ছিলেন মুচি, কবির ছিলেন জোলা, সেনা ...

ভক্তি আন্দোলন (Bhakti Movement)

ভক্তি আন্দোলন (Bhakti Movement) :

প্রেক্ষাপট : ভারতে ইসলাম ধর্ম প্রসারের ফলে হিন্দু ধর্ম ও সমাজে অস্থিরতা দেখা দেয় । হিন্দুরা অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন । ধর্মান্তরকরণের কাজ অবশ্য ধীরে ধীরে চলছিল । তবুও ভারতের মুসলিম সম্প্রদ