ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের কারণ ও তার ফলাফল

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 11/02/2014 - 20:04

ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের কারণ ও তার ফলাফল (Industrial Revolution in England and Its Effects) :

ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার নানাবিধ কারণের মধ্যে একটি বড় কারণ ছিল পুঁজির জোগান । এই পুঁজির অনেকটাই এসেছিল ঔপনিবেশিক ব্যবসাবাণিজ্য থেকে । ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে দুটি সমস্যা দেখা দেয়—

(১) কাঁচামালের অভাব এবং

(২) উদবৃত্ত দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয়ের জন্য বাজার ।

এই দুটি সমস্যা সমাধানের একটি উপায় হল উপনিবেশ স্থাপন । খনিজ ও বাণিজ্যিক কৃষিতে সমৃদ্ধ উপনিবেশ থেকে একদিকে যেমন কাঁচামাল সংগ্রহ করা সম্ভব, তেমনই অন্যদিকে সেখানেই উদবৃত্ত দ্রব্যসামগ্রীর বিক্রয়েরও সুযোগ ছিল । একাজ অবশ্যই সহজসাধ্য ছিল না । উপনিবেশগুলির পক্ষে এই ব্যবস্থা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না । ইংল্যান্ড আমেরিকায় তারা এই নীতি অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল । ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকা স্বাধীনতা অর্জন করেছিল । কিন্তু ভারতসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইংরেজরা বাহুবলে তাদের উপনিবেশ ও সাম্রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল ।  সাধারণভাবে উপনিবেশবাদ বলতে বোঝায় এমন এক ব্যবস্থা যাতে মাতৃভূমির স্বার্থে বাহুবলে অধিকৃত এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলিকে শোষণ করা হয় । ঔপনিবেশিক অর্থনীতিতে স্থানীয় শিল্পের যাতে কোনো বিকাশ না হয়, অথবা যেখানে উন্নত হস্ত বা কুঠির শিল্প আছে, তার যাতে পতন বা ধ্বংস অনিবার্য হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হয় । অর্থাৎ, উপনিবেশগুলির স্বাধীনভাবে অর্থনীতি নির্ধারণ করবার কোন সুযোগ ও স্বাধীনতা থাকে না । ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লব হওয়ায় উপনিবেশ স্থাপনে ইংল্যান্ড ছিল সবচেয়ে অগ্রণী । তার সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বজুড়ে । কথাই ছিল, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কখনও সূর্য অস্ত যায় না । তারপরেই ছিল ফ্রান্সের স্থান, যদিও ফ্রান্সে শিল্প বিপ্লব হয়েছিল বেশ কিছুটা দেরিতে । জার্মানি, রাশিয়া ও ইটালিতে আরও পরে শিল্প বিপ্লব হয়েছিল বলে উপনিবেশ স্থাপনের প্রতিযোগিতায় তারা অনেক পিছিয়ে ছিল । যাই হোক, উনিশ শতকের শেষ পর্বে আফ্রিকার প্রায় সর্বত্র এবং এশিয়ার এক বৃহৎ অংশ জুড়ে উপনিবেশ স্থাপিত হয়েছিল ।

*****

Related Items

মুঘল যুগে পর্তুগিজ বণিকদের কার্যকলাপ

১৪৯৭-৯৮ খ্রীষ্টাব্দে যখন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করেন, তখন সেই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করার ক্ষমতা ভারতবাসীর ছিল না । ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করার পর থেকেই ইউরোপের সঙ্গে ...

মুঘল যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য

বহির্বিশ্বে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল । বিদেশী বণিকরা যেমন ব্যবসার জন্য ভারতে আসত, তেমনই ভারতীয় বণিকেরা, বিশেষত গুজরাটিরা বহির্বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করত । ভারত থেকে বস্ত্র, গোল মরিচ, নীল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি হত । ভারতে আমদানি হত ...

মুঘল যুগে ভারতের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য

মুঘল আমলে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আভ্যন্তরীণ ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল । তা ছাড়া উন্নত মুদ্রানীতি এবং নগদে বেতন প্রদানের ফলে একদিকে যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা ...

মুঘল যুগে ভারতের অকৃষি নির্ভর শিল্প

অকৃষি শিল্প উৎপাদনের একটা বড় অংশ ছিল বিলাসদ্রব্য । সাধারণ মানুষের চাহিদা কম ছিল । বিলাসদ্রব্য নির্মাণের জন্য সরকারি কারখানা বা কর্মশালা ছিল । তবু তার বেশির ভাগ তৈরি হত স্বাধীন কারিগর ও শিল্পীর বাড়িতে । রান্নাবান্না ও ঘর গেরস্থালীর কাজে লোহা ও তামার তৈরি জিনিসপত্র ...

মুঘল যুগে ভারতের কৃষি নির্ভর শিল্প

মুঘল আমলে গ্রামীন অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ও হস্তশিল্প বা কুঠির শিল্প । কুঠির শিল্পকে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে । প্রথমত, কৃষিনির্ভর শিল্প এবং দ্বিতীয়ত অকৃষি শিল্প । কৃষিনির্ভর শিল্পের মধ্যে পড়বে শর্করা শিল্প, তৈল, তামাক, নীল, মদ প্রভৃতি শিল্প । ...