ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/15/2014 - 10:57

ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য : মৌসুমি বায়ু দ্বারা ভারতের জলবায়ু বিশেষভাবে প্রভাবিত হওয়ায় ভারতবর্ষকে আর্দ্র মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয় । ভারতের জলবায়ুর নিম্নলিখিত প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি পরিলক্ষিত হয়—

(১) ঋতু পরিবর্তন : বছরের বিভিন্ন সময়ে ঋতু পরিবর্তন হল ভারতের জলবায়ুর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য— (ক) মার্চ মাস থেকে মে মাস গ্রীষ্মকাল,  (খ) জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস বর্ষাকাল, (গ) অক্টোবর মাস ও নভেম্বর মাস শরৎকাল এবং (ঘ) ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস শীতকাল । এই চারটি প্রধান ঋতু ভারতের জলবায়ুতে চক্রাকারে আবর্তিত হয় । এছাড়া ভারতে (ঙ) শীতের আগে হেমন্ত এবং (চ) শীতের পরে বসন্ত নামে অপর দুটি ঋতুর আভাস পাওয়া যায় ।

(২) মৌসুমি বায়ু প্রবাহ : গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালীন উত্তর–পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহের প্রভাবে ভারতের ঋতু পরিবর্তন হয় । মৌসুমি বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ায় ভারতকে “আন্তঃমৌসুমি বায়ুর দেশ” বলা হয় । গ্রীষ্মকালে ভারতে মৌসুমি বায়ু যে দিক থেকে আসে, শীতকালে ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয় ।

(৩) চরমভাবাপন্ন জলবায়ু : উত্তর ভারতের জলবায়ু দক্ষিণ ভারতের জলবায়ুর তুলনায় অনেক বেশি চরমভাবাপন্ন, অর্থাৎ উত্তর ভারতের শীত ও গ্রীষ্ম দুটোই খুব তীব্র ।

(৪) গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা : গ্রীষ্মকালে ভারতের বেশির ভাগ স্থানে মার্চ মাস থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে । এপ্রিল মাসে উষ্ণতা আরো বেশি বেড়ে যায় । এই সময় উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের উষ্ণতা ৩৮° থেকে ৪০° সেলসিয়াসে পৌঁছায় । গ্রীষ্মকালে মে মাসে উত্তর ভারতের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হয় । এই সময় মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮° থেকে ৪৩° সেলসিয়াসে পৌঁছায় । গ্রীষ্মকালে মে মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারতের শুল্ক অঞ্চল সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয় । গ্রীষ্মকালে সময় সময় পশ্চিম ভারতের থর মরুভূমি অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪৮° সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যায় ।

(৫) শীতকালীন তাপমাত্রা : শীতকালে উত্তর ভারতের তাপমাত্রা দক্ষিণ ভারতের তাপমাত্রার তুলনায় বেশ কম থাকে । এই সময় উত্তর ভারতের তাপমাত্রা গড়ে ১০° থেকে ১৫° সেলসিয়াস হয় । শীতকালে দক্ষিণ ভারতের গড় তাপমাত্রা থাকে ২৫° সেলসিয়াসের মতো ।

(৬) বৃষ্টিপাত :

(ক) ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের ৮৪% বৃষ্টিপাত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে, ১৩% শরৎকালে, এবং ৩% শীতকালে সংঘটিত হয় ।

(খ) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকালে ও বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বাধিক হয় ।

(গ) উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে শীতকালে প্রায় শুকনো থাকে; তামিলনাড়ুর উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত করমণ্ডল উপকুল ছাড়া ভারতের অন্যত্র শীতকালে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না । 

(ঘ) পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শীতকালে কিছুটা বৃষ্টি হয় ।

(ঙ) ভারতের বৃষ্টিপাত একটানা না হয়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতে বিরতি ঘটে ।

(চ) ভারতের মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সঠিক সময় এবং পরিমাণ এক এক বছরে এক এক রকমের হয় । মৌসুমি বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা কোনও কোনও বছর ভারতে খরার অন্যতম প্রধান কারণ এবং অতিরিক্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাত ভারতে বন্যার প্রধান কারণ ।

(ছ) ভারতে আঞ্চলিক বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন দেখা যায়— পশ্চিম উপকুল, আন্দামান নিকোবর, উত্তর–পূর্ব রাজ্যসমূহ ও উত্তরবঙ্গে অত্যধিক বৃষ্টিপাত হয়; আবার রাজস্থানের মরুভূমি এবং লাদাখ, কারাকোরাম প্রভৃতি অঞ্চলে বছরে অতি অল্প বৃষ্টিপাত হওয়ায় এদের শুল্ক অঞ্চল বলা হয় ।

ভারতের জলবায়ুতে হিমালয় পর্বতের প্রভাব : ভারতের সমগ্র উত্তর ভাগ জুড়ে হিমালয় পর্বত শ্রেণি বিস্তৃত থাকায় ভারতের জলবায়ুর উপর হিমালয় পর্বতের অসাধারণ প্রভাব রয়েছে ।

(১) হিমালয় পর্বতের অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড় কাঁপানো শীতের হাত থেকে রক্ষা করেছে । হিমালয় পর্বত না থাকলে ভারতেও রাশিয়া ও চিনের মতো তীব্র শীতের প্রাবল্য দেখা যেত ।

(২) সমুদ্র থেকে আগত জলীয় বাস্প পূর্ণ দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ঢালে বাধা পেয়ে উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় । মৌসুমি বায়ু প্রবাহের দ্বারা সংঘটিত বৃষ্টিপাতে হিমালয় পর্বতের অসাধারণ প্রভাব রয়েছে ।

(৩) ভারত এমনিতে উষ্ণ মৌসুমি জলবায়ুর দেশ হলেও উচ্চতার প্রভাবে হিমালয়ের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে অনেকটা তুন্দ্রা অঞ্চলের মতো অতি শীতল জলবায়ু দেখা যায় । 

*****

Related Items

পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effect of wastes on environment)

পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effect of wastes on environment) : বর্জ্য পরিবেশকে নানাভাবে প্রভাবিত করে থাকে । যেমন — (ক) ভূপৃষ্ঠস্থ জলের কলুষিতকরণ, (খ) মৃত্তিকা সংক্রমণ, (গ) দূষণ, (ঘ) লিশেট ইত্যাদি ।

বর্জ্যের উৎস (Source of waste)

বর্জ্যের উৎস (Source of waste) : বর্তমান আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় মানুষের নানাবিধ কার্যকলাপেরপরিধিই হল বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্র । বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্রগুলি হল — (১) গৃহস্থালির বর্জ্য, (২) শিল্প বর্জ্য, (৩) কৃষিজ বর্জ্য,  (৪) পৌর

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste)

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste) : বিভিন্ন কারণে পরিবেশে নানা প্রকারের বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার, যেমন— (ক) কঠিন বর্জ্য, (খ) তরল বর্জ্য ও (গ) গ্যাসীয় বর্জ্য ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্যের ধারণা (Concept of Waste) : 'বর্জ্য' কথাটির অর্থ হল 'যা বর্জনযোগ্য' । যে-কোনো কঠিন, তরল অথবা গ্যাসীয় সম্পদকে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারের পরে যে মূল্যহীন, নষ্ট বা খারাপ হয়ে যাওয়া অব্যবহার্য বস্তু পড়ে থাকে, যা সরাসরি মানুষের কাজে না লেগে পরিবেশ দূষণ

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?