তড়িচ্চালক বল ও বিভব-প্রভেদ

Submitted by arpita pramanik on Thu, 01/17/2013 - 13:16

তড়িচ্চালক বল ও বিভব-প্রভেদ (Electromotive force and Potential difference) :

যে বাহ্যিক কারণ স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে পারে বলবিজ্ঞানে তাকে বল (force) বলা হয় । এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তড়িৎ-কোশের তড়িতাধান চালনা করার ক্ষমতাকে বলা হয় তার 'তড়িচ্চালক বল' (Electromotive force, সংক্ষেপে emf)

রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে তড়িৎ-কোশের দুই মেরুতে যে বিভব-বৈষম্যের সৃষ্টি হয়, তাই চালক বলের মতো কাজ করে তড়িৎ প্রবাহ বজায় রাখে । তড়িৎ-কোশের দুই মেরুর মধ্যে এই চালক বলকে কোশের তড়িচ্চালক বল বলে । তড়িৎ-কোশের মেরুদুটিকে পরিবাহী দিয়ে সংযোগ করলে তড়িচ্চালক বলের দরুন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ হয় ।

[বলবিজ্ঞানে 'বল' এবং তড়িৎ-কোশের 'তড়িচ্চালক বল' এক জাতীয় রাশি নয় এবং এদের এককও ভিন্ন । তড়িচ্চালক বল এবং বিভব-প্রভেদের একক অভিন্ন উভয়ের একক ভোল্ট (volt) হলেও এরা সমার্থজ্ঞাপক রাশি নয় ।]

তড়িচ্চালক বল (Electromotive force) : যার প্রভাবে বা যে কারণে তড়িৎ-বর্তনীর কোনো অংশে রাসায়নিক কিংবা অন্য কোনো রকম শক্তি তড়িৎ-শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বিভব-বৈষম্যের সৃষ্টি করে, তাকে তড়িচ্চালক বল বলে ।

তড়িৎ-কোশের তড়িদ্দ্বার দুটিকে কোনো পরিবাহী দিয়ে সংযোগ না করলে, অর্থাৎ খোলা অবস্থায় রাখলে তড়িদ্দ্বার দুটির মধ্যে সৃষ্ট বিভব-বৈষম্যকে তড়িৎ-কোশের তড়িচ্চালক বলের মান বলে ধরা হয় ।

একটি কোশের তড়িচ্চালক বল 1.5 ভোল্ট বলতে বোঝায় যে, কোশটির ধনাত্মক মেরু থেকে ঋণাত্মক মেরুতে 1 কুলম্ব তড়িতাধান নিয়ে যেতে 1.5 জুল কার্য করতে হয় ।

তড়িৎ-কোশের তড়িচ্চালক বলের মান কোশের মধ্যে বিক্রিয়াকারী তরলের রাসায়নিক প্রকৃতি এবং তড়িদ্দ্বার দুটির উপাদানের ওপর নির্ভর করে— কোশের আকার বা আকৃতির ওপর নির্ভর করে না । যেমন— আকার যাই হোক না কেন সরল ভোল্টীয় কোশের তড়িচ্চালক বল 1.08 ভোল্ট হয় ।

বিভব-প্রভেদ (Potential difference) : বর্তনীর কোনো অংশে তড়িচ্চালক বলের উপস্থিতি ওই অংশে বিভব-প্রভেদের সৃষ্টি করে । অর্থাৎ, তড়িচ্চালক বলের জন্যই বিভব-প্রভেদের সৃষ্টি হয় । সুতরাং বলা যায় যে— তড়িচ্চালক বল হল কারণ (cause) বিভব-প্রভেদ হল তড়িচ্চালক বলের ফল (effect) ।

যদি বর্তনীর কোনো অংশে তড়িৎ-শক্তি, অন্য কোনো শক্তিতে; যেমন— তাপশক্তি, যান্ত্রিক শক্তি, আলোক শক্তি, চৌম্বক-শক্তি, রাসায়নিক-শক্তি ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয়, তবে বর্তনীর ওই অংশে বিভব-প্রভেদের সৃষ্টি হয় । একটি তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ হলে তারটি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে— এখানে তড়িৎ-শক্তি তাপ-শক্তিতে রূপান্তরিত হয় । এজন্য বলা হয়, তারের দুই প্রান্তে বিভব-প্রভেদ আছে ।

তড়িচ্চালক বল এবং ও বিভব-প্রভেদের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Electromotive force and Potential difference)

  তড়িচ্চালক বল   বিভব-প্রভেদ
1. বর্তনী খোলা থাকলে তড়িৎ-কোশের দুই মেরুর বিভব-প্রভেদকে কোশের তড়িচ্চালক বল বলে । 1. বর্তনী সংযোগ করলে তড়িৎ-কোশের দুই মেরুর মধ্যে বিভব-প্রভেদকে কোশের বিভব-প্রভেদ বলে ।
2. তড়িৎ বর্তনীর যে অংশে রাসায়নিক কিংবা অন্য কোনো শক্তি তড়িৎ-শক্তিতে রূপান্তরিত যায়, সেই অংশে তড়িচ্চালক বলের উদ্ভব ঘটে । 2. বর্তনীর যে অংশে তড়িৎ-শক্তি অন্যান্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়, সেই অংশে বিভব-প্রভেদের উৎপত্তি হয় ।
3. তড়িচ্চালক বলকে বিভব-প্রভেদের কারণ বলা হয় । 3. বিভব-প্রভেদ হল তড়িচ্চালক বলের ফল ।
4. তড়িৎ-কোশের তড়িচ্চালক বলের মান বিভব-প্রভেদের মানের চেয়ে বেশি হয় । 4. বিভব-প্রভেদের মান তড়িৎ-কোশের তড়িচ্চালক বলের মানের চেয়ে কম হয় ।
5. তড়িচ্চালক বলের মান বর্তনীর রোধের ওপর নির্ভর করে না । 5. বর্তনীর দুই বিন্দুর মধ্যের বিভব-প্রভেদ ওই দুই বিন্দুর মধ্যে রোধের ওপর নির্ভর করে ।

*****

Related Items

তড়িৎ-বিশ্লেষণের প্রয়োগ

তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলি যেমন - সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুগুলিকে তাদের আকরিক থেকে নিষ্কাশিত করা হয় । আবার কতকগুলি ধাতু যেমন - কপার, জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির তড়িৎ-বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশোধন করা হয় । ...

কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ

কপার সালফেট জলে আয়নিত হয়ে কপার (+) এবং সালফেট (-) আয়ন উত্পন্ন করে । সুতরাং, জলীয় দ্রবণে চার প্রকার আয়ন থাকে, দুধরনের ক্যাটায়ান H (+) ও Cu (+) এবং দু ধরনের অ্যানায়ন OH (-) ও সালফেট (-) ।

জলের তড়িৎ-বিশ্লেষণ

বিশুদ্ধ জল তড়িতের কুপরিবাহী, কিন্তু সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার জলে মেশালে ওই জল তড়িতের সুপরিবাহী হয় । এর কারণ হল বিশুদ্ধ জলে খুব কম সংখ্যক অণু H+ এবং OH- আয়নে বিশ্লেষিত অবস্থায় থাকে । ওই জলে সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার যোগ করলে এদের আয়ন ...

তড়িৎ-বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ

যেসব পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে নিজেরা রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই সব পদার্থকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে ।

তড়িৎ-পরিবাহী এবং তড়িৎ-অপরিবাহী

যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহিত করলে তা তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম হয়, তাদের তড়িৎ-পরিবাহী পদার্থ বলে । যেমন; সোনা, রুপো, তামা, প্রভৃতি ধাতু, গ্রাফাইট, সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ ইত্যাদি । তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম এমন পদার্থগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় --