দশম অধ্যায় : দ্বিঘাত করণী (Quadratic Surds)
সূচনা (Introduction) : আমরা এর আগে স্বভাবিক সংখ্যা, পূর্ণ সংখ্যা, পূর্ণবর্গ সংখ্যা, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সংখ্যা, জোড় ও বিজোড় সংখ্যা, মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা ভগ্নাংশ ও দশমিক সংখ্যা, মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা সম্মদ্ধে জেনেছি । আমরা জানি 2 এর বর্গ 4 তাই 4 এর বর্গমূল 2, অঙ্কের ভাষায় √4=2 আবার -2 ও হয় , সুতরাং 4 এর বর্গমূল (+2) এবং (-2) হবে ।
তেমনি
53=125⇒3√125=534=81⇒4√81=325=32⇒5√32=2
বর্গমূল চিহ্নটির ক্ষেত্রে সাধারণত √ ব্যবহার করা হয়, ঘনমূল 3√ চিহ্ন দিয়ে, চতুর্থমূল 4√ চিহ্ন দিয়ে, এবং পঞ্চমমুল 5√ চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হয় ।
যে মূলগুলি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মান দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতে প্রকাশ করা যায় অর্থাৎ মানগুলি প্রত্যেকে মূলদ হবে । কিন্তু সব সময় তা হয় না । যেমন √2,√3,3√5 ইত্যাদির মান সম্পূর্ণরূপে নির্ণয় করা যায় না ।
কোনো ধনাত্মক মূলদ সংখ্যার যে সব মূল এর মান সম্পূর্ণরূপে নির্ণয় করা যায় না তাদের করণী (Surd) বলে ।
যেমন √2,√3,3√5 ইত্যাদি হল করণী, কিন্তু √4,3√8,3√27 ইত্যাদি করণী আকারে থাকলেও করণী নয় । কারণ এদের মান সম্পূর্ণরূপে নির্ণয় করা যায় ।
মূলদ সংখ্যা (Rational number) : কোনো সংখ্যাকে যদি দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতের আকারে প্রকাশ করা হয় তবে সেই সংখ্যাকে মূলদ সংখ্যা (Rational number) বলে । যেমন -3, 1, 10, 23,−35,36 ইত্যাদি ।
অমূলদ সংখ্যা (Irrational number) : যে সব সংখ্যাকে দুটি পূর্ণ সংখ্যার আকারে প্রকাশ করা যায় না তাদের অমূলদ সংখ্যা (Irrational number) বলে । যেমন √2,√3,3√5,π ইত্যাদি ।
দেখা যাচ্ছে যে √2,√3,3√5 এরা করণী এবং অমূলদ সংখ্যা , কিন্তু π করণী নয় অথচ অমূলদ সংখ্যা । তাই আমরা বলতে পারি সব করণী অমূলদ সংখ্যা কিন্তু সব মূলদ সংখ্যা করণী নয় ।
করণীর বিভিন্ন আকার (Different types of Surds) :
(১) শুদ্ধ করণী (Pure Surds) : যদি কোনো করণীকে সরল করে, কোনো মূলদ সংখ্যাকে (1 ব্যাতীত) করণী চিহ্নের বাইরে আনা অসম্ভব হয়, তবে সেই করণীকে বলে শুদ্ধ করণী । যেমন: √5,√11 ইত্যাদি ।
(২) মিশ্র করণী (Mixed Surds) : যে সব করণীকে সরল আকারে লিখলে দেখা যায় যে এদের প্রত্যেকটির একটি মূলদ ও একটি অমূলদ অংশ আছে, সেই ধরণের করণীকে মিশ্র করণী বলে ।
যেমন: √18=√9×2=3√2, √48=√3×2×2×2×2=4√3 হল মিশ্র করণী । এখানে 3, 4 হল মূলদ সংখ্যা এবং √2,√3 হল অমূলদ সংখ্যা ।
(৩) সদৃশ করণী (Similar Surds) -র দুটি করণীর অমূলদ অংশ একই হলে তাদের সদৃশ করণী বলে । যেমন: √2,3√2 ; 11√5,3√5 ইত্যাদি ।
(৪) অসদৃশ করণী (Dissimilar Surds) : সরল করার পর দুটি করণীর অমূলদ অংশ আলাদা হলে তাদের অসদৃশ করণী বলে । যেমন: 11√5,3√7 ; 10√2,3√3 ইত্যাদি ।
(৫) সরল করণী (Simple Surds) : যে সকল করণীতে একটি মাত্র পদ থাকে তাদের সরল করণী বলে । যেমন : √2,√3,√7,5√5 ইত্যাদি ।
(৬) দ্বিপদ করণী (Binomial Surds) : দুটি পদযুক্ত (দুটি পদই করণী বা একটি পদ করণী অপরটি মূলদ সংখ্যা হয়) করণীকে দ্বিপদ করণী বলে । যেমন: 2+√6,2√3−√5 ইত্যাদি ।
(৭) যৌগিক করণী (Compound Surds) : একাধিক করণীর অথবা মূলদ সংখ্যা ও একাধিক করণীর বীজগাণিতিক সমষ্টিকে যৌগিক করণী বলে । যেমন : 1+√5,2√2+3√5−√6,√2+√3 ইত্যাদি ।
মন্তব্য - দুটি পদযুক্ত যৌগিক করণীকে দ্বিপদ করণী বলে ।
(৮) সমমূলীয় করণী (Equiradical Surds) : দুই বা ততোধিক করণীর মূল সমান হলে ওদের সমমূলীয় করণী বলে । যেমন : √3,√2,√5 এবং 7√5,7√7,7√11 ইত্যাদি ।
এখানে মনে রাখা দরকার দুটি করণী সমমূলীয় না হলেও তাদের সমমূলীয় করণীর আকারে প্রকাশ করা যায় ।
যেমন: 3√2,4√2 এই দুটি করণী সমমূলীয় নয়, এখন লক্ষ কর
3√2=3√(2)44=3×4√24=12√244√2=4√(2)33=4×3√23=12√23
এখন দুটি করণীর মূল সমান ।
করণীর ক্রম (Order of Surds) : একটি শুদ্ধ বা মিশ্র করণীতে উপস্থিত মূল নির্ণায়ক সূচককে করণীর ক্রম বলে । যেমন : 3√11 এই করণীর ক্রম হল 3 ।
করণীর তুলনা (Difference of Surds) : দুই বা ততোধিক সমমূলীয় করণীর (সমমূলীয় না হলে তাকে সমমূলীয়র আকারে প্রকাশ করতে হবে) মূল নির্ণায়ক সূচক বাদে মানের তারতম্য অনুসারে করণীর তুলনা করা হয় ।
যেমন : √5>√3 কারণ 5 > 3 (সমমূলীয় করণী) ।
কিন্তু √5,4√3 সমমূলীয় করণী নয় তাই এদের তুলনা হবে না ।
করণীর সরলতম আকার (Simple form of Surds) : করণীর মূল চিহ্নের ভেতর থেকে যদি কোনো মূলদ উৎপাদক (1 বর্জিত) মূল চিহ্নের বাইরে আনা সম্ভব হয়, তখন করণীর যে রূপ পাওয়া যায় তাকে করণীর সরলতম আকার বলা হয় ।
যেমন: √45=√3×3×5=3√5 √45 এর সরলতম আকার হল 3√5
করণীর যোগ ও বিয়োগ (Addition and Subtraction of Surds) :- করণীর যোগফল ও বিয়োগফল নির্ণয় করতে হলে প্রথমে করণীগুলিকে সরলতম আকারে প্রকাশ করতে হবে । করণীগুলির যোগ অথবা বিয়োগ সাধারণ বীজগাণিতিক প্রক্রিয়ার নিয়মে করা হয় ।
যেমন: √2+√8=√2+2√2=3√2
√50−√12=√25×2−√4×3=5√2−2√3
করণীর গুণ ও ভাগ (Multiplication and Division of Surds) :- দুটি শুদ্ধ করণীর গুণ, সূচকের নিয়মাবলী অনুযায়ী হয় ।
[সূচকের নিয়মাবলী : যদি a≠0 এবং m ও n ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা হয় তবে am×an=am+n তাছাড়া (am)n=amn,(ab)m=am.bm(b≠0)(a≠0)
যেমন: √3×√3=(3)12+12=31=3
√5×√7=512×712=(5×7)12=3512=√35
অনুরূপে দুটি মিশ্র করণীর গুণ সূচক ও বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী হয় ।
সমমূলীয় করণীসমূহের গুণফল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ বীজগাণিতিক প্রক্রিয়ার মতন মূলদ ও অমূলদ অংশ গুলি পৃথক পৃথক গুণ করে গুণফল নির্ণয় করতে হবে । যদি করণীগুলি বিভিন্ন ক্রমের হয় তবে ওদের সমমূলীয় করণীর আকারে প্রকাশ করে গুণফল নির্ণয় করতে হয় । অমূলদ অংশ বা করণীর অংশের গুণের ক্ষেত্রে সূচকের নিয়মাবলী অনুযায়ী হবে ।
2√5×3√2=2×3×√5×2=6√10√3×3√2=312×213=336×226=2716×416=(27×4)16=10816=6√108
দুটি যৌগিক করণীর গুণফল নির্ণয় সূচক ও বীজগাণিতিক বহুপদী সংখ্যার গুণফল নির্ণয় প্রক্রিয়া অনুযায়ী হয় ।
যেমন:
(2+√3)(4+√3)=2×4+2×√3+4×√3+√3×√3=8+2√3+4√3+3=11+6√3
করণীর ভাগ সম্পর্কে আলোচনার আগে করণী নিরসক উৎপাদক এবং অনুবন্দি বা প্রতিযোগী করণী সম্পর্কে জানতে হবে ।
করণী নিরসক উৎপাদক :- কোনো করণীর সাথে যে উৎপাদক গুণ করলে গুণফলটি করণী মুক্ত হবে তাকে ওই করণীর করণী নিরসক বলে ।
যেমন:
√a এর করণী নিরসক উৎপাদক হল √a
b+√a এর করণী নিরসক উৎপাদক হল b−√a অথবা −b+√a
অনুবন্দি বা পূরককরণী (Conjugate or Complementary Surds) : যখন একটি দ্বিপদ করণীর দুটি পদের মান অন্য দ্বিপদ করণীর দুটি পদের মানের সমান হয় এবং ঐ দ্বিপদ করণীর অমূলদ পদটি বা যেকোনো একটি অমূলদ পদ বিপরীত চিহ্ন যুক্ত হয় তখন একটিকে অপরটির অনুবন্দি বা পূরক করণী বলা হয় । যেমন: b+√a এর অনুবন্দি করণী হল b−√a .অথবা 3√3+√5 এর অনুবন্দি করণী হল 3√3−√5
ভাগ (Division) : একটি করণীকে অপর একটি করণী দিয়ে ভাগ করতে হলে প্রথমে ওই দুটি করণীকে যথাক্রমে লব ও হর ধরে একটি ভগ্নাংশের আকারে প্রকাশ করে নিতে হবে, তারপর সেই ভগ্নাংশের হরকে করণী নিরসন করে ভাগফল নির্ণয় করতে হবে ।
যেমন:
4÷(3−√2)=4(3−√2)=4(3+√2)(3+√2)(3−√2)=4(3+√2)9−2=4(3+√2)7
(√5+2)÷(√3−1)=(√5+2)(√3−1)=(√5+2)(√3+1)(√3−1)(√3+1)=√5×√3+√5+2×√3+23−1=√15+√5+2√3+22
দ্বিঘাত করণী (Quadratic Surds) : আমাদের একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, এই অধ্যায়ের নাম কেন দ্বিঘাত করণী হল । যে করণীর ক্রম 2 তাকে দ্বিঘাত করণী বলে । এই অধ্যায়ে আমরা কেবল করণীর দ্বিতীয় ক্রম নিয়ে প্রশ্ন উত্তর করেছি, তাই এই অধ্যায়কে দ্বিঘাত করণী বলা হয় ।
*****