দ্বিঘাত করণী (Quadratic Surds)

Submitted by arpita pramanik on Wed, 06/01/2011 - 18:45

দশম অধ্যায় : দ্বিঘাত করণী (Quadratic Surds)

সূচনা (Introduction) : আমরা এর আগে স্বভাবিক সংখ্যা, পূর্ণ সংখ্যা, পূর্ণবর্গ সংখ্যা, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সংখ্যা, জোড় ও বিজোড় সংখ্যা, মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা ভগ্নাংশ ও দশমিক সংখ্যা, মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা সম্মদ্ধে জেনেছি । আমরা জানি 2 এর বর্গ 4 তাই 4 এর বর্গমূল 2, অঙ্কের ভাষায় 4=2 আবার -2 ও হয় , সুতরাং 4 এর বর্গমূল (+2) এবং (-2) হবে । 

তেমনি 

53=1253125=534=81481=325=32532=2

বর্গমূল চিহ্নটির ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যবহার করা হয়, ঘনমূল 3 চিহ্ন দিয়ে, চতুর্থমূল 4 চিহ্ন দিয়ে, এবং পঞ্চমমুল 5 চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হয় । 

যে মূলগুলি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মান দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতে প্রকাশ করা যায় অর্থাৎ মানগুলি প্রত্যেকে মূলদ হবে । কিন্তু সব সময় তা হয় না । যেমন 2,3,35 ইত্যাদির মান সম্পূর্ণরূপে নির্ণয় করা যায় না । 

কোনো ধনাত্মক মূলদ সংখ্যার যে সব মূল এর মান সম্পূর্ণরূপে নির্ণয় করা যায় না তাদের করণী (Surd) বলে । 

যেমন 2,3,35 ইত্যাদি হল করণী, কিন্তু 4,38,327 ইত্যাদি করণী আকারে থাকলেও করণী নয় । কারণ এদের মান সম্পূর্ণরূপে নির্ণয় করা যায় । 

মূলদ সংখ্যা (Rational number) : কোনো সংখ্যাকে যদি দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতের আকারে প্রকাশ করা হয় তবে সেই সংখ্যাকে মূলদ সংখ্যা (Rational number) বলে ।  যেমন  -3, 1, 10, 23,35,36 ইত্যাদি । 

অমূলদ সংখ্যা (Irrational number) : যে সব সংখ্যাকে দুটি পূর্ণ সংখ্যার আকারে প্রকাশ করা যায় না তাদের অমূলদ সংখ্যা (Irrational number) বলে । যেমন 2,3,35,π ইত্যাদি । 

দেখা যাচ্ছে যে 2,3,35 এরা করণী এবং অমূলদ সংখ্যা , কিন্তু π করণী নয় অথচ অমূলদ সংখ্যা । তাই আমরা বলতে পারি সব করণী অমূলদ সংখ্যা কিন্তু সব মূলদ সংখ্যা করণী নয় । 

করণীর বিভিন্ন আকার (Different types of Surds) :

(১) শুদ্ধ করণী (Pure Surds) : যদি কোনো করণীকে সরল করে, কোনো মূলদ সংখ্যাকে (1 ব্যাতীত) করণী চিহ্নের বাইরে আনা অসম্ভব হয়, তবে সেই করণীকে বলে শুদ্ধ করণী ।  যেমন: 5,11 ইত্যাদি । 

(২) মিশ্র করণী (Mixed Surds) : যে সব করণীকে সরল আকারে লিখলে দেখা যায় যে এদের প্রত্যেকটির একটি মূলদ ও একটি অমূলদ অংশ আছে, সেই ধরণের করণীকে মিশ্র করণী বলে । 

যেমন: 18=9×2=32, 48=3×2×2×2×2=43 হল মিশ্র করণী । এখানে 3, 4 হল মূলদ সংখ্যা এবং 2,3 হল অমূলদ সংখ্যা । 

(৩) সদৃশ করণী (Similar Surds) -র দুটি করণীর অমূলদ অংশ একই হলে তাদের সদৃশ করণী বলে । যেমন: 2,32115,35 ইত্যাদি । 

(৪) অসদৃশ করণী (Dissimilar Surds) : সরল করার পর দুটি করণীর অমূলদ অংশ আলাদা হলে তাদের অসদৃশ করণী বলে । যেমন: 115,37 ; 102,33 ইত্যাদি । 

(৫) সরল করণী (Simple Surds) : যে সকল করণীতে একটি মাত্র পদ থাকে তাদের সরল করণী বলে । যেমন : 2,3,7,55 ইত্যাদি । 

(৬) দ্বিপদ করণী (Binomial Surds) :  দুটি পদযুক্ত (দুটি পদই করণী বা একটি পদ করণী অপরটি মূলদ সংখ্যা হয়) করণীকে দ্বিপদ করণী বলে । যেমন: 2+6,235 ইত্যাদি । 

(৭) যৌগিক করণী (Compound Surds) : একাধিক করণীর অথবা মূলদ সংখ্যা ও একাধিক করণীর বীজগাণিতিক সমষ্টিকে যৌগিক করণী বলে । যেমন : 1+5,22+356,2+3 ইত্যাদি । 

মন্তব্য - দুটি পদযুক্ত যৌগিক করণীকে দ্বিপদ করণী বলে । 

(৮) সমমূলীয় করণী (Equiradical Surds) : দুই বা ততোধিক করণীর মূল সমান হলে ওদের সমমূলীয় করণী বলে । যেমন : 3,2,5 এবং 75,77,711 ইত্যাদি । 

এখানে মনে রাখা দরকার দুটি করণী সমমূলীয় না হলেও তাদের সমমূলীয় করণীর আকারে প্রকাশ করা যায় । 

যেমন: 32,42 এই দুটি করণী সমমূলীয় নয়, এখন লক্ষ কর

32=3(2)44=3×424=122442=4(2)33=4×323=1223

এখন দুটি করণীর মূল সমান । 

করণীর ক্রম (Order of Surds) : একটি শুদ্ধ বা মিশ্র করণীতে উপস্থিত মূল নির্ণায়ক সূচককে করণীর ক্রম বলে । যেমন : 311 এই করণীর ক্রম হল 3 ।

করণীর তুলনা (Difference of Surds) : দুই বা ততোধিক সমমূলীয় করণীর (সমমূলীয় না হলে তাকে সমমূলীয়র আকারে প্রকাশ করতে হবে) মূল নির্ণায়ক সূচক বাদে মানের তারতম্য অনুসারে করণীর তুলনা করা হয় । 

যেমন : 5>3 কারণ 5 > 3 (সমমূলীয় করণী) ।

কিন্তু 5,43 সমমূলীয় করণী নয় তাই এদের তুলনা হবে না । 

করণীর সরলতম আকার (Simple form of Surds) : করণীর মূল চিহ্নের ভেতর থেকে যদি কোনো মূলদ উৎপাদক (1 বর্জিত) মূল চিহ্নের বাইরে আনা সম্ভব হয়, তখন করণীর যে রূপ পাওয়া যায় তাকে করণীর সরলতম আকার বলা হয় । 

যেমন: 45=3×3×5=35  45 এর সরলতম আকার হল 35

করণীর যোগ ও বিয়োগ (Addition and Subtraction of Surds) :-  করণীর যোগফল ও বিয়োগফল নির্ণয় করতে হলে প্রথমে করণীগুলিকে সরলতম আকারে প্রকাশ করতে হবে । করণীগুলির যোগ অথবা বিয়োগ সাধারণ বীজগাণিতিক প্রক্রিয়ার নিয়মে করা হয় । 

যেমন: 2+8=2+22=32

5012=25×24×3=5223

করণীর গুণ ও ভাগ (Multiplication and Division of Surds) :- দুটি শুদ্ধ করণীর গুণ, সূচকের নিয়মাবলী অনুযায়ী হয় । 

[সূচকের নিয়মাবলী : যদি a0 এবং m ও n ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা হয় তবে am×an=am+n তাছাড়া (am)n=amn,(ab)m=am.bm(b0)(a0)

যেমন: 3×3=(3)12+12=31=3

5×7=512×712=(5×7)12=3512=35

অনুরূপে দুটি মিশ্র করণীর গুণ সূচক ও বীজগাণিতিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী হয় । 

সমমূলীয় করণীসমূহের গুণফল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ বীজগাণিতিক প্রক্রিয়ার মতন মূলদ ও অমূলদ অংশ গুলি পৃথক পৃথক গুণ করে গুণফল নির্ণয় করতে হবে । যদি করণীগুলি বিভিন্ন ক্রমের হয় তবে ওদের সমমূলীয় করণীর আকারে প্রকাশ করে গুণফল নির্ণয় করতে হয় । অমূলদ অংশ বা করণীর অংশের গুণের ক্ষেত্রে সূচকের নিয়মাবলী অনুযায়ী হবে । 

25×32=2×3×5×2=6103×32=312×213=336×226=2716×416=(27×4)16=10816=6108

দুটি যৌগিক করণীর গুণফল নির্ণয় সূচক ও বীজগাণিতিক বহুপদী সংখ্যার গুণফল নির্ণয় প্রক্রিয়া অনুযায়ী হয় । 

যেমন:

(2+3)(4+3)=2×4+2×3+4×3+3×3=8+23+43+3=11+63

করণীর ভাগ সম্পর্কে আলোচনার আগে করণী নিরসক উৎপাদক এবং অনুবন্দি বা প্রতিযোগী করণী সম্পর্কে জানতে হবে । 

করণী নিরসক উৎপাদক :- কোনো করণীর সাথে যে উৎপাদক গুণ করলে গুণফলটি করণী মুক্ত হবে তাকে ওই করণীর করণী নিরসক বলে । 

যেমন:

a এর করণী নিরসক উৎপাদক হল a

b+a এর করণী নিরসক উৎপাদক হল ba অথবা b+a

অনুবন্দি বা পূরককরণী (Conjugate or Complementary Surds) : যখন একটি দ্বিপদ করণীর দুটি পদের মান অন্য দ্বিপদ করণীর দুটি পদের মানের সমান হয় এবং ঐ দ্বিপদ করণীর অমূলদ পদটি বা যেকোনো একটি অমূলদ পদ বিপরীত চিহ্ন যুক্ত হয় তখন একটিকে অপরটির অনুবন্দি বা পূরক করণী বলা হয় । যেমন: b+a এর অনুবন্দি করণী হল ba .অথবা 33+5 এর অনুবন্দি করণী হল 335

ভাগ (Division) : একটি করণীকে অপর একটি করণী দিয়ে ভাগ করতে হলে প্রথমে ওই দুটি করণীকে যথাক্রমে লব ও হর ধরে একটি ভগ্নাংশের আকারে প্রকাশ করে নিতে হবে, তারপর সেই ভগ্নাংশের হরকে করণী নিরসন করে ভাগফল নির্ণয় করতে হবে । 

যেমন:

4÷(32)=4(32)=4(3+2)(3+2)(32)=4(3+2)92=4(3+2)7

 

(5+2)÷(31)=(5+2)(31)=(5+2)(3+1)(31)(3+1)=5×3+5+2×3+231=15+5+23+22

 

দ্বিঘাত করণী (Quadratic Surds) : আমাদের একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, এই অধ্যায়ের নাম কেন দ্বিঘাত করণী হল । যে করণীর ক্রম 2 তাকে দ্বিঘাত করণী বলে । এই অধ্যায়ে আমরা কেবল করণীর দ্বিতীয় ক্রম নিয়ে প্রশ্ন উত্তর করেছি, তাই এই অধ্যায়কে দ্বিঘাত করণী বলা হয় । 

*****

Comments

Related Items

পাটিগনিত (Arithmetic)

প্রথম অধ্যায়ঃ মিশ্রণ, দ্বিতীয় অধ্যায় : লাভ-ক্ষতি , তৃতীয় অধ্যায় : সুদকষা , চতুর্থ অধ্যায় : সমাহার বৃদ্ধি

Syllabus for Class X Standard Mathematics

পাটি গণিত (Arithmetic), বীজগণিত (Algebra), জ্যামিতি (Geometry), পরিমিতি(Mensuration), ত্রিকোণমিতি(Trigonometry)

Class X Mathematics Study material

গণিত, দশম শ্রেণির জন্য, বিষয়- মিশ্রণ, লাভ-ক্ষতি, সুদকষা, সমাহার বৃদ্ধি, গ.সা.গু. ও ল.সা.গু., সহ-সমীকরণ, দ্বিঘাত সমীকরণ, অনুপাত ও সমানুপাত, অসমীকরণ, দ্বিঘাত করণী, বৃত্ত সংক্রান্ত উপপাদ্য, বৃত্তের স্পর্শক সংক্রান্ত উপপাদ্য, সদৃশতা সংক্রান্ত উপপাদ্য ...