Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 09/29/2020 - 22:41

হুতুমপ্যাঁচার নক্সা : ঊনিশ শতকে যেসব বাংলা সাহিত্যগ্রন্থে সেকালের বাংলার সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত 'হুতুমপ্যাঁচার নক্সা' । কালীপ্রসন্ন সিংহ 'হুতোমপেঁচা' ছদ্মনামে 'হুতুমপ্যাঁচার নক্সা' গ্রন্থটি রচনা করেন । ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে এই গ্রন্থের প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় এবং পরে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ গ্রন্থাকারে এর প্রকাশ ঘটে । এই গ্রন্থে আঠারো শতকের শেষভাগ থেকে উনিশ শতকের সপ্তম দশক পর্যন্ত সময়কালের কলকাতার নাগরিক সমাজজীবনের ছবি ধরা পড়ে । এই গ্রন্থটি হল বাংলা ভাষার প্রথম সামাজিক ব্যঙ্গ সাহিত্য । কলকাতার বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ, বারোয়ারি পুজো প্রভৃতি এই নকশায় বর্ণিত হয়েছে । ঊনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত কলকাতায় ফুলেফেঁপে উঠা ধনী বাবুদের মধ্যে যে সামাজিক অবক্ষয় শুরু হয় তার স্বরূপটি 'হুতুমপ্যাঁচার নক্সা' গ্রন্থে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হায়েছে । বাবু-সংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করে গ্রন্থটি সমকালীন শিক্ষিত বাঙালিকে সচেতন করে তার সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছে । এই গ্রন্থে সমাজের অন্ধকার দিকগুলির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে । গণিকা বিলাস, ভ্রুণহত্যা, বিবিধ মাদক দ্রব্যের ব্যাপক আয়োজনকে ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিতে তুলে ধরা হয়েছে । দুর্গাপুজো, বারোয়ারি পুজো, চড়ক, রথ, স্নানযাত্রা ইত্যাদি পূজাপার্বণের নামে হিন্দুদের অতি বাড়াবাড়ির সমালোচনা করা হয়েছে ।

কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর গ্রন্থে তৎকালীন কলকাতাবাসীদের তিনভাগে বিভক্ত করেছেন, যথা — (i) ইংরেজি শিক্ষায় সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী, (ii) ইংরেজি শিক্ষায় নব্যপন্থী যারা সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী নয় এবং (iii) ইংরেজি না জানা গোঁড়া হিন্দু সমাজ । এরা সবাই কমবেশি জাল-জুয়াচুরি বা ফন্দি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে । গ্রন্থটির প্রথমভাগে চড়কপার্বণ, বারোয়ারি পুজো, ছেলেধরা, কৃশ্চানি হুজুগ, জাল প্রতাপচাঁদ, মিউটীনি, সাতপেয়ে গোরু, দরিয়াই ঘোড়া, লখনউ -এর বাদশা এবং দ্বিতীয় ভাগে রথ, স্নানযাত্রা, দুর্গোৎসব, রামলীলা প্রভৃতি আলোচিত হয়েছে । কলকাতার নানা ঘটনা যথা—মহাপুরুষ, সাতপেয়ে গরু, লক্ষ্মৌয়ের বাদশা প্রভৃতির প্রতি তীব্র কটাক্ষ করা হয়েছে । এতে ছদ্মনামের আড়ালে অনেকের প্রতি ব্যঙ্গবিদ্রুপ ধরা পড়ে । হিন্দুসমাজের কদাচার ও ভণ্ডামি লক্ষ করে হুতোম চড়ক, দুর্গা-সরস্বতী পুজো, রথযাত্রা ইত্যাদি অনুষ্ঠানকে ব্যঙ্গবাণে বিদ্ধ করেন । তিনি তৎকালীন সমাজে ইংরেজি-শিক্ষিত সম্প্রদায়, গুরুপদবি ধারী বৈষ্ণবদেরকে অবজ্ঞা করেন ।

****

Comments

Related Items

মুসোলিনির পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন:-  মুসোলিনির পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

ইতালির শাসনভার গ্রহণ করার পর মুসোলিনি তাঁর পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেন । মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল—

ফ্রাঙ্কো কে ? স্পেনে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল কেন ? এই গৃহযুদ্ধের গুরুত্ব কী ?

প্রশ্ন:- ফ্রাঙ্কো কে ? স্পেনে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল কেন ? এই গৃহযুদ্ধের গুরুত্ব কী ?

কোন সময়কে গান্ধী যুগ বলা হয় ? অসহযোগ আন্দোলনের মুল লক্ষ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন:-  কোন সময়কে গান্ধী যুগ বলা হয় ? অসহযোগ আন্দোলনের মুল লক্ষ্য কী ছিল ?

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে গান্ধী যুগ বলা হয় ।

সাইমন কমিশন সম্পর্কে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ?

প্রশ্ন:- সাইমন কমিশন সম্পর্কে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ?

খিলাফৎ আন্দোলন কী ? এই আন্দোলনের লক্ষ্য কী ছিল ? এই আন্দোলন প্রত্যাহারের কারণ কি ?

প্রশ্ন:- খিলাফৎ আন্দোলন কী ? এই আন্দোলনের লক্ষ্য কী ছিল ? এই আন্দোলন প্রত্যাহারের কারণ কি ?