স্পেনে বিদ্রোহ (Spanish Civil War)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 22:20

স্পেনে বিদ্রোহ (Spanish Civil War) :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে স্পেনের রাজতন্ত্রী, প্রজাতন্ত্রী, সমাজতন্ত্রী প্রভৃতি দলগুলি রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য স্পেনে যে গৃহ যুদ্ধ শুরু করে তা ‘স্পেনের গৃহযুদ্ধ’ নামে পরিচিত । স্পেনের গৃহযুদ্ধের অন্যতম নেতা ছিলেন জেনারেল ফ্রাঙ্কো । জেনারেল ফ্রাঙ্কো রুশ সাহায্যপুষ্ট স্পেনের প্রজাতন্ত্রী সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে জার্মানি ও ইটালি জেনারেল ফ্রাঙ্কোর পক্ষ অবলম্বন করে তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে । কিন্তু ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স নিষ্ক্রিয় ভুমিকা পালন করে । গৃহযুদ্ধে জেনারেল ফ্রাঙ্কো জয়লাভ করলে স্পেনে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর অধিনায়কত্বে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ও জার্মানির হাত শক্ত হয় ।

স্পেনের গৃহযুদ্ধ শুধু স্পেনের ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিল না, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম, যেমন—

(ক) জেনারেল ফ্রাঙ্কোর অধিনায়কত্বে স্পেনে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হিটলার ও মুসোলিনি জোটের শক্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় ।

(খ) স্পেনে গণতান্ত্রিক সরকারের পরাজয়ের মাধ্যমে আদর্শগত দ্বন্দ্বে গণতন্ত্র সাময়িকভাবে পিছু হটে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি জয়যুক্ত হয় ।

(গ) স্পেনের গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকারের হিটলার ও মুসোলিনিকে তোষণ করবার নীতি অত্যন্ত ঘৃণ্যভাবে প্রকটিত হয় ।

(ঘ) স্পেনের গৃহযুদ্ধের ফলে সবচেয়ে লাভবান হয় জার্মানি, কারণ—

(i) স্পেনের গৃহযুদ্ধের ফলে একদিকে যেমন ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলির রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরাজয় ঘটে, অন্যদিকে স্পেনে ইটালির ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে হিটলার দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে জার্মানির প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেয়ে যান ।

(ii) স্পেনের গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে হিটলার তাঁর স্থল, বিমান ও নৌবাহিনীর দক্ষতা এবং বিভিন্ন মারণাস্ত্রের ক্ষমতা যাচাই করার সুযোগ পেয়ে যান । সেই অনুসারে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপযোগী অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করার দিকে মননিবেশ করেন । স্পেনের গৃহযুদ্ধের সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করে একথা বলা যায় যে, এই গৃহযুদ্ধ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি মহড়া (Stage rehearsal of the Second World War) বিশেষ ।

*****

Related Items

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য (Working Class Movement in the Twentieth Century):-

দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা চলার পর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মানি আত্মসমর্পণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান  ঘটে । বিশ শ

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন (Quit India Movement and the Peasantry):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দোলনের আগেই দেশ

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন (Civil Disobedience Movement and the Peasantry):-

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সারা বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় । এই অর্থনৈতিক মন্দা ঔপনিবেশিক ভারতের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে । ভারতের কৃষিজাত পণ্যের দাম আন্

বারদৌলি সত্যাগ্রহ (Bardoli Satyagraha)

বারদৌলি সত্যাগ্রহ (Bardoli Satyagraha):-

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভয়ংকর বন্যায় বারদৌলি অঞ্চলে প্রচুর ফসল নষ্ট হলে সেখানকার কৃষকরা দুর্ভিক্ষের শিকার হয় । এই পরিস্থিতিতে সরকারি রাজস্ব বিভাগের নির্দেশে বারদৌলিতে ৩০ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি করা হয় । নবজীবন ও

একা আন্দোলন (The Eka Movement)

একা আন্দোলন (The Eka Movement):-

মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে উত্তরপ্রদেশে এই আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব দেখা যায় । ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে