মহাবিদ্রোহের ফল ও মহারানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণা

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 04/22/2012 - 19:26

মহাবিদ্রোহের ফল (Effects of the Revolt of 1857)

মহাবিদ্রোহের জন্য ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড পামার্স্টোন কোম্পানির প্রশাসনকে 'দায়িত্বহীন' বলে নিন্দা করেন এবং কোম্পানি প্রশাসনের অবসান ঘটাতে চেয়েছিলেন । তাই ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২রা আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হয় 'উন্নততর ভারতশাসন আইন' । এই আইন বলে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে তথা ব্রিটিশ সরকারের হাতে ভারতের শাসনভার হস্তান্তরিত করা হয় । কোম্পানির পরিচালন সভা ও বোর্ড অফ কন্ট্রোলের পরিবর্তে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার এক মন্ত্রীকে ভারত সচিবের পদে (Secretary of State) নিযুক্ত করা হয় । স্থির হয় যে, তিনি ১৫ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি পরামর্শদাতা বা কাউন্সিলের সাহায্যে ভারতের শাসনকার্য পরিচালনা করবেন এবং তাদের যাবতীয় কাজকর্মের জন্য পার্লামেন্টের কাছে জবাব দিতে বাধ্য থাকবেন । প্রয়োজনবোধে ভারতীয় কাউন্সিলের মতামত অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা ভারত সচিবকে দেওয়া হয় । যদিও অর্থ বিল অনুমোদন করা তার পক্ষে বাধ্যতামূলক করা হয় । ১৮৫৮ -র আইন বলে গভর্নর জেনারেলকে ভাইসরয় বা ব্রিটিশরাজের প্রতিনিধি নিযুক্ত করা হয় । কোম্পানি আমলের গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং ভারতে প্রথম ভাইসরয় নিযুক্ত হন ।

মহারানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণা (Queen's Proclamation)

১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ১ লা নভেম্বর মহারানি ভিক্টোরিয়া এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন । মহারানি ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধি ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং এলাহাবাদে এক দরবারের আয়োজন করেন এবং মহারানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন । মহারানির ঘোষণাপত্রে ভারতের কল্যাণার্থে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির আশ্বাস দিয়ে বলা হয়,

(১) দেশীয় অপুত্রক রাজাদের দত্তক পুত্র গ্রহণের অধিকার দেওয়া হবে ।

(২) কোম্পানির সঙ্গে পূর্বে সম্পাদিত সব চুক্তি ও সন্ধিপত্রের শর্ত ব্রিটিশ সরকার পালন করে চলবেন ।

(৩) ভারতীয়দের ধর্মীয় ও সামজিক রীতিনীতির উপর সরকার আর হস্তক্ষেপ করবেন না ।

(৪) স্বত্ববিলোপ নীতি পরিত্যাক্ত হবে ।

(৫) ব্রিটিশ সরকার ভারতে রাজ্যবিস্তার নীতি বর্জন করবেন ।

(৬) জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল ভারতীয়কে সমান মর্যাদা দেওয়া হবে ।

(৭) দেশীয় রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকার গ্রহণ করবেন ।

(৮) জাতি ধর্ম নির্বিশেষে গুণানুযায়ী ভারতীয়দের উচ্চ রাজপদে নিযুক্ত করা হবে ।

(৯) বিদ্রোহ চলাকালে একমাত্র ব্রিটিশ নাগরিক ও প্রজাদের হত্যাকান্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত অপরাধী ছাড়া অপর সকল সিপাহিকে মুক্তি দেওয়া হবে ।

এভাবে মহাবিদ্রোহের অবসানে ব্রিটিশের প্রত্যক্ষ শাসনে ভারতে এক নব অধ্যায়ের সূচনা হয় ।

*****

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?