ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 02/15/2021 - 09:37

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Quit India Movement) :-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিলে আন্দোলন ধীরে ধীরে দেশ জুড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের আকার ধারণ করে । ছাত্রসমাজও সর্বশক্তি নিয়ে পুরোভাগে থেকে ভারত ছাড়ো আন্দোলন পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে । দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খাজনা বন্ধ করে দিয়ে, রেললাইন তুলে ফেলে দিয়ে, সেতু উড়িয়ে দিয়ে, পোস্ট অফিস এবং রেলস্টেশন ভাঙচুর করে ছাত্ররা আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায় । বাংলার ছাত্রসমাজ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে । কলকাতায় ব্যাপক ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয় । কলকাতায় ও ঢাকায় ছাত্রধর্মঘটীদের ওপর ব্রিটিশ পুলিশ বর্বর আক্রমণ চালায় । মেদিনীপুরের কাঁথি, তমলুক, মহিষাদল, নন্দীগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে ছাত্রসমাজ জঙ্গি আন্দোলন শুরু করে থানা ও সরকারি ভবনের দখল নেয় এবং রেললাইন ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয় । পূর্ব বাংলার ফরিদপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, যশোহর, খুলনা ইত্যাদি অঞ্চলে ছাত্ররা একটানা ধর্মঘট পালন করে । বাংলার পুলিন সেন, উপেন জানা, বীরেন মাল, গোরাচাঁদ ঘোড়ুই প্রমূখ ছাত্ররা মনে করেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে গেলে অস্ত্র নিয়ে লড়াই করা প্রয়োজন । বাংলার বেশকিছু গ্রামাঞ্চলের কৃষকরা ছাত্রদের নেতৃত্বে এই আন্দোলনে শামিল হয় ।

বিহার, উত্তরপ্রদেশের গ্রামাঞ্চল, উড়িষ্যার বালেশ্বর, কটক, কোরাপুট ও তালচেরে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান ঘটে । ব্রিটিশ সরকার জাতীয় কংগ্রেসের নেতাদের গ্রেপ্তার করে । এই গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে মাদ্রাজে কে আর গণেশ, মোহন রেড্ডীর নেতৃত্বে ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয় । মহারাষ্ট্রের আহম্মদ নগরে কৃষক পরিবারের দশম শ্রেণির ছাত্র পোখারকার -এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধিতা শুরু হয় । বোম্বাইয়ের ছাত্র ধর্মঘটে ও শোভাযাত্রায় পুলিশের গুলিতে উমাভাই কাদিয়া নিহত হন । মহীশূরে ছাত্রকর্মী শঙ্করাপ্পা পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান । সিন্ধুপ্রদেশে হেমুকালানি, শোভা জ্ঞানচান্দানি, গোবিন্দ মালাই, নারায়ণ ওয়াধ্বনি প্রমূখ ছাত্রনেতা 'করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে' ধ্বনি উচ্চারণ করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যাপক প্রচারের উদ্দেশ্যে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে । উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ, বারাণসী, কানপুর, লখনউ প্রভৃতি অঞ্চলে ছাত্ররা জঙ্গি আন্দোলন গড়ে তোলে । লখনউ -এর ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয় । ত্রিবাঙ্কুর ও কোচিনে টানা দু-মাস স্কুলকলেজে ধর্মঘট চলে । সারাদেশের সব বয়সের এবং সমস্ত শ্রেণির ছাত্ররা ব্যাপকভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বা আগস্ট আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায় ।

*****

Comments

Related Items

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. সুই মুন্ডা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন—                [মাধ্যমিক-২০১৭]       

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন :-

১.  'বামাবোধিনী' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন—          [মাধ্যমিক- ২০১৭]

ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ ও বিতর্ক

ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ ও বিতর্ক (Initiatives Undertaken and Controversies Related to Linguistic Reorganization of States):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে । স্বাধীনতা লাভের পর ন

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগ

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় দেশভাগ :-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুযায়ী ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারত ও পাকিস্তান নাম দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় । মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চ

১৯৪৭-পরবর্তী উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ ও বিতর্ক

১৯৪৭-পরবর্তী উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ ও বিতর্ক (Initiative Undertaken and Controversies Related to the Refugee Problem in Post-1947 India) :-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব