বীণা দাস (Bina Das):-
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যাঁদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলার বিপ্লবী বীণা দাস । তিনি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে আগস্ট নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁদের আদি বাসস্থান ছিল চট্টগ্রামে । তাঁর পিতার নাম বেণী মাধব দাস ও মাতার নাম সরলা দাস । বেণী মাধব দাস ছিলেন ব্রাহ্মসমাজী পন্ডিত ও দেশপ্রেমিক । তাঁর দিদি ছিলেন বিপ্লবী কল্যাণী দাস । সুভাষচন্দ্র বসুর বাল্যশিক্ষক বেণিমাধব দাসের কনিষ্ঠা কন্যা ছিলেন বীণা দাস । স্বল্পভাষিনী ও শান্ত প্রকৃতির বীণা দাস বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হন ।
তিনি কলকাতায় প্রথমে ডায়াসেশন কলেজ ও পরে বেথুন কলেজে পড়াশুনা করেন ও পরবর্তিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন । কলকাতায় বেথুন কলেজে পড়াশুনার সময় বীণা দাস ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন বয়কট, পিকেটিং আন্দোলন, কলকাতার জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনের স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করেন । ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ই ফেব্রূয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডায়াসেশন কলেজের ছাত্রী বীণা দাস বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ করে গুলি ছোড়েন । লক্ষ্য ভ্রষ্ট হওয়ায় জ্যাকসন প্রাণে বেঁচে যান । বীণা দাস ধরা পড়েন এবং বিচারে তাঁর ৯ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয় । ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি জাতীয় কংগ্রেস দলে যোগদান করেন । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে পুনরায় জেলবন্দি হন । ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলার প্রাদেশিক আইন সভার সদস্যা হন । ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী যতীশ ভৌমিকের সাথে তার বিবাহ হয় ।
ঔপনিবেশিক শাসনের অন্ধকার সরিয়ে ভারতে এক নতুন ভোর আনতে যাঁরা জীবন পণ করেছিলেন বিপ্লবী বীণা দাস তাঁদের মধ্যে অন্যতম । নির্ভিক এই অগ্নিকন্যার শেষজীবন ছিল বড়ই বেদনাদায়ক । স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি হরিদ্বারে আশ্রয় নেন এবং সেখানে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে ডিসেম্বর সহায়সম্বলহীন অবস্থায় পথের ধারে মৃত্যুবরণ করেন ।
****