বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (Bengal Volunteers)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 02/15/2021 - 22:47

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (Bengal Volunteers):-

গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ডাকা অহিংস অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পরে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' সংগঠনটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে । ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রেরণায় ও সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী গঠিত হয় । ঢাকা সহ বাংলার বিভিন্ন স্থানে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স -এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় । সমকালীন বহু পুরুষ ও নারী বিপ্লবী বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স -এ যোগদান করেন । এর বিপ্লবী সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিনয়কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত, গনেশ ঘোষ প্রমুখ । বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স -এর সদস্যদের মধ্যে গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, লোকনাথ বল প্রমুখের সাহায্যে মাস্টারদা সূর্যসেন 'ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি' নামে এক সমরবাহিনী গঠন করেন । ঢাকায় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স -এর সদস্য বিনয়কৃষ্ণ বসু ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে আগস্ট মিডফোর্ড হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা বাংলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লোম্যান ও ঢাকার পুলিশ সুপার হডসনকে আক্রমণ করেন । হাডসন গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান কিন্তু লোম্যান নিহত হন । এই অবস্থায় বিনয়কৃষ্ণ বসু ছদ্মবেশে কলকাতায় চলে আসেন । কলকাতায় এই দলের সদস্য বাদল গুপ্ত (আসল নাম সুধীর গুপ্ত) ও দীনেশ গুপ্তের সঙ্গে তার পরিচয় হয় । বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই তিনজন মিলিত হয়ে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ই ডিসেম্বর রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করেন । বিনয়কৃষ্ণ বসু কারাবিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল সিম্পসনকে হত্যা করেন । এই ঘটনার অব্যবহিত পরে ভবনের অলিন্দে নিরাপত্তারক্ষী ও কমিশনার টেগার্টের নেতৃত্বে ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে বিপ্লবী-ত্রয়ীর সংঘর্ষ হয়, যা ইতিহাসে অলিন্দ যুদ্ধ নামে পরিচিত । সংঘর্ষের শেষে গ্রেফতারি এড়াতে বাদল গুপ্ত ঘটনাস্থলেই আত্মহত্যা করেন, বিনয়কৃষ্ণ বসু হাসপাতালে মারা যান এবং দীনেশ গুপ্তের ফাঁসি হয় । বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স -এর সদস্য বিমল দাশগুপ্ত ও জ্যোতিজীবন ঘোষ ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরের জেলাশাসক পেডিকে, প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্য ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে জেলাশাসক ডগলাসকে, অনাথ পাঁজা ও মৃগেন দত্ত ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে জেলাশাসক বার্জকে হত্যা করেন । মেদিনীপুরে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স -এর সদস্যদের কর্মধারা ব্রিটিশ প্রশাসনের কর্তাদের ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলে ।

*****

Comments

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?