প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 01/11/2022 - 19:43

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

দীর্ঘ চার বছর ধরে ধ্বংসলীলা চলার পর ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে । এই যুদ্ধ ইউরোপ তথা বিশ্বের আর্থ-সামাজিক তথা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের সূচনা করে । এই পরিবর্তনগুলি হল—

(i) বৃহৎ ইউরোপীয় সাম্রাজ্যেগুলির পতন এবং নতুন নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভব : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতিতে ইউরোপের চারটি বড় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে, যেমন— (i) অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য, (ii) তুরষ্ক সাম্রাজ্য, (iii) রুশ সাম্রাজ্য ও (iv) জার্মান সাম্রাজ্য । ইউরোপ মহাদেশের এই সমস্ত রাষ্ট্রীয়-পুনর্গঠনের ফলে ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটাভিয়া, লিথুয়ানিয়া, চেকোশ্লোভিয়া, পোল্যান্ড প্রভৃতি অনেক নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয় যার ফলে ইউরোপের মানচিত্রে বিরাট পরিবর্তন ঘটে ।

(ii) জাতীয়তাবাদের সাফল্য : ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদের সাফল্য ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম সুফল । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে ইউরোপের যুগোশ্লাভিয়া, পোল্যান্ড, চেকোশ্লাভিয়া, তুরষ্ক, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে জাতীয়তাবাদ সাফল্য লাভ করে । বল্কান অঞ্চলে নির্যাতিত জাতীয়তাবাদের আংশিক সাফল্য ঘটে ।

(iii) গণতন্ত্রের জয় :  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপ মহাদেশের জার্মানি, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, তুরষ্ক প্রভৃতি দেশে রাজতন্ত্রের অবসান ও গণতন্ত্রের উত্থান হয় । জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম হল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং জার্মানিতে ‘ভাইমার প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয় । তুরষ্কের সুলতানকে পদচ্যুত করা হয় এবং কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কে গণপ্রজাতান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থা চালু হয় ।

(iv) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্রতিপত্তি হ্রাস : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত ব্রিটেন ও ফ্রান্স বিশ্বরাজনীতিতে তাদের পূর্ব প্রতিপত্তি হারিয়ে ফেললে সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই স্থান দখল করে নেয় ।

(v) গণতন্ত্রের পতন ও একনায়কতন্ত্রের উত্থান : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হলেও (ক) গণতন্ত্রের মড়ক, (খ) নব প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলির দুর্বলতা, (গ) গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের অভাব, (ঘ) দূরদর্শী জনপ্রিয় রাষ্ট্রনেতার অভাব, (ঙ) অর্থনৈতিক মন্দার আঘাত, (চ) জাতিসংঘের ব্যর্থতা প্রভৃতি কারণে ইউরোপের অনেক দেশে গণতন্ত্রের বিপর্যয় এবং একনায়কতন্ত্রের উত্থান হয়, যেমন— জার্মানি, ইতালি প্রভৃতি দেশ ।

(vi) আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রসার-জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপ তথা সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রসার ঘটে । এই সময়কালে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাবিধানের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের উদ্ভাবিত ‘চোদ্দোদফা নীতি’ -র ওপর ভিত্তি করে ‘লিগ ওফ নেশনস’ বা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয় । বিশ্বের প্রতিটি দেশ যাতে আন্তর্জাতিক আইন, বিধি নিষেধ ও চুক্তি মেনে চলে সে ব্যাপারে লক্ষ রাখার উদ্দেশ্যে এই সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় ।

*****

Comments

Related Items

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কী কী কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির গণতন্ত্রের পতন ঘটে ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কী কী কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির গণতন্ত্রের পতন ঘটে ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর ।

হিটলার কীভাবে পররাজ্য গ্রাস শুরু করেছিলেন ? হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি কোন নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন ? এর ফল কী হয়েছিল ?

প্রশ্ন:- হিটলার কীভাবে পররাজ্য গ্রাস শুরু করেছিলেন ? হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি কোন নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন ? এর ফল কী হয়েছিল ?

(ক) পোল্যান্ড-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি, (খ) মিউনিখ চুক্তি, (গ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি— এই চুক্তিগুলি হিটলার কেন স্বাক্ষর করেছিলেন ?

প্রশ্ন:- (ক) পোল্যান্ড-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি, (খ) মিউনিখ চুক্তি,  (গ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি— এই  চুক্তিগুলি হিটলার কেন স্বাক্ষর করেছিলেন ?

নাৎসি দলের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন:- নাৎসি দলের পররাষ্ট্র নীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

জার্মানির নাৎসি দলের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য —

(ক) ইউরোপ তথা সারা বিশ্বে জার্মানিকে প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ।

(খ) ভার্সাই সন্ধির অপমান জনক চুক্তিগুলি অমান্য করা ।

নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

প্রশ্ন :- নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

হিটলার বা তাঁর নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল:-