পাবনার কৃষকবিদ্রোহ (১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 12/29/2020 - 21:13

পাবনার কৃষকবিদ্রোহ (Peasants' Revolt in Pabna)  :- ১৯৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দের নীল্ বিদ্রোহের পরবর্তীকালে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে পূর্ববঙ্গের পাবনা জেলায় কৃষকদের ওপর জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে কৃষকরা যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তা 'পাবনা বিদ্রোহ' নামে পরিচিত । পাবনার ইউসুফশাহী পরগনায় প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয় । এই কৃষকবিদ্রোহের মূল কারণ ছিল— অতিরিক্ত খাজনা বৃদ্ধি ও জমিতে রায়তদের দখলিস্বত্ব হরণ । বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও বারাণসীতে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের দশম আইনের প্রয়োগ দ্বারা জমিদাররা তিনটি কারণে জমির খাজনা বৃদ্ধি করতে পারত । এগুলি হল—

(১) যদি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের একই ধরনের জমির খাজনার তুলনায় রায়ত কম খাজনা প্রদান করে ।

(২) যদি উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়ে যায় ।

(৩) যদি রায়তরা তার জমির বরাদ্দ পরিমাণের চেয়ে কম পরিমাণ খাজনা দেয় ।

উপরোক্ত কারণগুলিতে জমিদাররা জমির খাজনা বৃদ্ধি করতে পারত । তবে জমিদাররা এইসব আইনের বাইরেও নানা ধরনের দুর্নীতি ও দমননীতির আশ্রয় নিয়ে জমির খাজনা বৃদ্ধি করত । পাবনা জেলার জমিদাররা কৃষকদের ওপর উপকর চাপিয়ে তা মূল খাজনার সঙ্গে যোগ করে আদায় করতে শুরু করে । স্বল্পদিনের জন্য রায়তদের সঙ্গে জমিদারদের লিজে জমি বন্দোবস্ত শুরু হয় । বিদ্রোহী কৃষকরা 'দি পাবনা রায়ত লিগ' গঠন করে জমিদারদের বেআইনি ভাবে চাপানো খাজনা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । লিগ কৃষকদের মামলা চালাতে সহায়তা করে ।

এই বিদ্রোহে স্থায়ী রায়তদের ভুস্বামী ঈশানচন্দ্র রায়, মেঘুল্লা গ্রামের মোড়ল শম্ভুনাথ পাল, ক্ষুদিমোল্লা প্রমুখদের নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা বাড়তি খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয় এবং জমিদারদের কাছে স্বাক্ষরিত কবুলিয়ত পত্রগুলি পুড়িয়ে দেয় । ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্রোহ সমগ্র পাবনা জেলা-সহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা, বাখরগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহি প্রভৃতি জেলার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে । বিদ্রোহে সক্রিয় নেতৃত্ব দিয়ে ঈশানচন্দ্র 'বিদ্রোহী রাজা' নামে পরিচিত হন ।

পাবনা বিদ্রোহ মূলত জমিদারদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হওয়ায় বিদ্রোহীরা মধ্যবিত্ত বাঙালিদের একাংশের সমর্থন পায়নি । এই পরিস্থিতে বিদ্রোহীদের ওপর পুলিশি অত্যাচার ও ১৮৭৩-৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে পাবনা বিদ্রোহ দুর্বল হয়ে পড়ে ।

জমিদারদের বিরুদ্ধে সংঘটিত পাবনা বিদ্রোহ সমকালীন অন্যান্য কৃষকবিদ্রোহগুলির মতো হিংসাত্মক রূপ নিয়েছিল । তবে নিহতের ঘটনা বিদ্রোহীদের হাতে খুব বেশি ঘটেনি ।     

****

Comments

Related Items

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (U.N.O) প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা কর । জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থাগুলির নাম কর ।

প্রশ্ন : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (U.N.O) প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা কর । জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থাগুলির নাম কর ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংক্ষেপে লেখ ।

প্রশ্ন : ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংক্ষেপে লেখ ।

প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা

সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।

ভারতের বিচারব্যবস্থার শীর্ষে আছে সুপ্রিমকোর্ট । এই সুপ্রিমকোর্ট একাধারে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত এবং আপিল আদালত হিসেবে কাজ করে ।

রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা কর ।

প্রশ্ন :  রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা কর ।

(১) রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেন রাজ্যপাল । রাজ্য প্রশাসনের সমস্ত ক্ষমতা তাঁর ওপর ন্যস্ত থাকে ।

ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তাৎপর্য ও জাতীয় কংগ্রেসের সাফল্য সম্পর্কে লেখ ।

প্রশ্ন : ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তাৎপর্য ও জাতীয় কংগ্রেসের সাফল্য সম্পর্কে লেখ ।