নির্জোট আন্দোলন (Non-Aligned Movement)

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 04/26/2012 - 18:46

নির্জোট আন্দোলন (Non-Aligned Movement) :

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত কলম্বো সম্মেলনে 'জোট নিরপেক্ষ' কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয় । জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু । যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের একজন উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জোট নিরপেক্ষতার ধারণা জনপ্রিয় হতে থাকে । এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বহু দেশ 'তৃতীয় বিশ্বের দেশ' (Third World) নামে পরিচিত হয় । পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে এই সমস্ত দেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয় । স্বাধীনতা লাভের পর এই সব দুর্বল ও দরিদ্র দেশগুলি আর্থিক উন্নয়নের জন্য প্রায় একই ধরনের বিদেশনীতি গ্রহণ করেছিল । এই কারণে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা গড়ে ওঠে । দেশগুলির বিদেশনীতির প্রধান সাদৃশ্য হল 'জোট নিরপেক্ষতা' (Non-Alignment) । নিরপেক্ষভাবে কোনো সমস্যার সমাধান করা এই নীতির মূল বিষয় ।

স্বাধীন ভারতে জোট নিরপেক্ষতার নীতি :

স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর ভারতের একটি সুষ্ঠু বিদেশ নীতির প্রয়োজন হয় । সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং তাঁর সরকার দুটি বিবদমান রাষ্ট্রের কোনোটির পক্ষে যোগদান না করে নিজস্ব একটি বিদেশ নীতি নির্ধারণ করেন । সেই নীতির মূল লক্ষ্য হল তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র আন্দোলন গড়ে তোলা যার নাম জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন । জোট নিরপেক্ষ নীতির প্রধান তত্ত্ব হল পৃথিবীর সমস্ত শক্তিজোটের সঙ্গে ‘সম-বন্ধুত্ব ও সম-দুরত্বের নীতি’ বজায় রাখা । এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র, শোষণ ও বঞ্চনার অবসান, নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি, জনগণের জীবনযাপনের সার্বিক মান উন্নয়ন ইত্যাদি ।

ভারতের জোট নিরপেক্ষতার প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য :

(১) স্বাধীনতা বজায় রেখে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা ।

(২) উপনিবেশ ও বর্ণবৈষম্যবাদের বিরোধিতা করা ।

(৩) দীর্ঘ দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসন ও শোষণে নিঃস্ব ও রিক্ত এবং দেশভাগের পরবর্তী বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যে সৃষ্ট অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পশ্চাদপদতার অবসানের জন্য ভারতের পক্ষে নির্জোট ও শান্তির নীতি অপরিহার্য হয়ে উঠে ।

(৪) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সামরিক শক্তি ও জঙ্গিবাদিতার পরিবর্তে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, বোঝাপড়া ও সহনশীলতা ভারতের জোটনিরপেক্ষ নীতির প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠে ।

****

Related Items

স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রভাব (Two-Nation Theory)

দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রথম প্রবক্তা ছিলেন স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ । স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ-র পূর্ব পুরুষরা মোগল যুগে পারস্য বা তুরাণ থেকে আসেন, এরা ছিলেন ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে ‘আশরফ’ বা ‘অভিজাত শ্রেণি’ । স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ নিজের অভিজাত বংশের ...

ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পটভূমি - তৃতীয় পর্যায়

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই মুসলমান বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ভারতে মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করে আসছিলেন । এতে ইন্ধন যোগান ঊর্দু কবি মহম্মদ ইকবাল ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চৌধুরী রহমত আলি । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ইকবাল 'অখন্ড ইসলাম তত্ত্ব' ...

ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পটভূমি - দ্বিতীয় পর্যায়

ইতিমধ্যে মহম্মদ আলি জিন্না ভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করলে একটি নতুন যুগের সুচনা হয় । মহম্মদ আলি জিন্না প্রথমে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । পরে তিনি কংগ্রেসকে মুসলিমদের স্বতন্ত্র নির্বাচনের দাবি মেনে নিতে বলেন । মহম্মদ আলি জিন্না ও বালগঙ্গাধর তিলকের ..

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান

১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ১৪ই জুলাই ভারতের বিশিষ্ট বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর ইচ্ছা অনুসারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন । নেতাজির রণধ্বনি ‘দিল্লী চলো’ ও ‘জয় হিন্দ’ মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারত সীমান্তে এসে পৌঁছায় । ...

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব

১৯৪২ সালের ৯ই আগষ্ট এর ভোর থেকেই ‘ভারত-ছাড়ো’ আন্দোলন শুরু হয়, প্রথম পর্যায়ে এই আন্দোলন কলকাতা, বোম্বাই, দিল্লী, নাগপুর, আমেদাবাদ, বরোদা, ঢাকা প্রভৃতি শহরে ছড়িয়ে পড়ে । মিছিল, মিটিং, পিকেটিং ও হরতাল পালনের মধ্য দিয়ে ছাত্র, যুবক, মধ্যবিত্ত ও শ্রমিক ...