দেওয়ানি কথার অর্থ কী ? ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কবে দেওয়ানি লাভ করে ? কোম্পানির শাসনকালে ভারতের কৃষি-অর্থনীতিতে ভাঙন দেখা যায় কেন ?

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 01/07/2022 - 09:52

প্রশ্ন:-  দেওয়ানি কথার অর্থ কী ? ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কবে দেওয়ানি লাভ করে ? কোম্পানির শাসনকালে ভারতের কৃষি-অর্থনীতিতে ভাঙন দেখা যায় কেন ?

দেওয়ানি কথার অর্থ হল রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত অধিকার । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করে ।

কোম্পানির আমলে পাঁচশালা বন্দোবস্ত, একশালা বন্দোবস্ত, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত, মহলওয়ারি বন্দোবস্ত প্রভৃতি ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাগুলি প্রবর্তন করা হলেও নতুন এই সব ব্যবস্থার ফলশ্রুতিতে ভারতের কৃষি-অর্থনীতিতে ভাঙন দেখা দেয়, কারণ—

(১) পূর্বতন মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির ক্ষমতা ও সুযোগসুবিধার বিনাশ : নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে নানা পরিবর্তন আসে । ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা এবং সেই সঙ্গে নতুন প্রশাসনিক ও বিচারব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় ভারতের পূর্বতন মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির যেমন— জমিদার, কৃষক ও পঞ্চায়েতদের ক্ষমতা ও সুযোগসুবিধার বিনাশ ঘটে, ফলে ভারতের প্রাচীন গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক সংগঠন ভেঙে পড়ে ।

(২) কৃষকের পক্ষে অলাভজনক ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা : নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাগুলি কৃষকদের পক্ষে মোটেই লাভজনক হয়নি, কারণ এইসব ব্যবস্থায় জমি ক্রয়-বিক্রয় করার, বন্ধক দেওয়ার ও অন্যভাবে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কৃষকের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে ওঠে ।

(৩) যৌথ পরিবার প্রথা ও পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার ওপর আঘাত : নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ফলে এত কাল পর্যন্ত ভারতের গ্রামীণ জীবনে যে সামাজিক বন্ধন ছিল, তা বিপর্যস্ত হয় । যৌথ পরিবার প্রথা ও পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ওপর চরম আঘাত আসে । গ্রামীণ জীবনে সহযোগিতার পরিবর্তে প্রতিযোগিতা আসে ।

(৪) গ্রামীণ জীবনে কৃষকদের পরিবর্তে মহাজন, বণিক ও সরকারি কর্মচারীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা : নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ফলস্বরূপ মহাজনদের কাছে দরিদ্র কৃষকদের জমি বন্ধক দেওয়ার রেওয়াজ ক্রমেই কৃষকদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা বিপর্যস্ত করে তোলে । প্রকৃতপক্ষে এইসব বন্দোবস্তের ফলে গ্রামীণ জীবনে কৃষকদের পরিবর্তে মহাজন, বণিক ও সরকারি কর্মচারীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয় এবং ভারতের গ্রামীণ জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যায় । এইসব কারণে কোম্পানির শাসনকালে ভারতের কৃষি-অর্থনীতিতে ভাঙন দেখা দেয় ।

*****

Comments

Related Items

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত (১৯৪৭-১৯৬৪)

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. ভারতের রাজনীতিতে 'লৌহ মানব' বলে পরিচিত ছিলেন—        [মাধ্যমিক-২০১৭]

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতের নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতের নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন—          [মাধ্যমিক-২০১৭]

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. একা আন্দোলনের নেতা ছিলেন—     [মাধ্যমিক-২০১৭]

স্যাডলার কমিশন (Sadler Commission)

১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হবার পর দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ক্রমশ বৃদ্ধি পায় । উচ্চশিক্ষাকে আরও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বড়লাট চেমসফোর্ডের সময় স্যার মাইকেল স্যাডলারের সভাপতিত্বে 'স্যাডলার কমিশন' গঠন করা হয় । স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এই কমিশনের সদস্য ছিলেন ...

বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (Indian universities Act, 1904)

লর্ড কার্জন প্রতিক্রিয়াশীল শাসক হলেও শিক্ষার ব্যাপারে তিনি খুবই উৎসাহী ছিলেন । লর্ড কার্জন স্যার টমাস র‍্যালের সভাপতিত্বে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে 'র‍্যালে কমিশন' গঠন করেছিলেন । এটি 'ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন' নামেও পরিচিত । স্যার টমাস র‍্যালে ছিলেন বড়লাটের কার্যনির্বাহক সমিতির আইন সদস্য । এই কমিশন ...