কৃষি অর্থনীতিতে ভাঙ্গন

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 04/22/2012 - 10:43

কৃষি অর্থনীতিতে ভাঙ্গন (Breakdown of the Agrarian Economy)

ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ । কৃষি অর্থনীতিই ছিল এদেশের অর্থনৈতিক জীবনের মেরুদন্ড । এদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার ও কোম্পানির আমলে পাঁচশালা বন্দোবস্ত, একশালা বন্দোবস্ত, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত, মহলওয়ারি বন্দোবস্ত প্রভৃতি ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাগুলি প্রবর্তন করা হলেও নতুন এই সব ব্যবস্থার ফলশ্রুতিতে ভারতের কৃষি-অর্থনীতিতে ভাঙন দেখা দেয়, কারণ-

(১) পূর্বতন মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির ক্ষমতা ও সুযোগসুবিধার বিনাশ:- নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে নানা পরিবর্তন আসে । ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা এবং সেই সঙ্গে নতুন প্রশাসনিক ও বিচারব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় ভারতের পূর্বতন মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির (যেমন— জমিদার, কৃষক ও পঞ্চায়েত) ক্ষমতা ও সুযোগসুবিধার বিনাশ ঘটে, ফলে ভারতের প্রাচীন গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক সংগঠন ভেঙে পড়ে ।

(২) কৃষকের পক্ষে অলাভজনক ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা:- নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাগুলি কৃষকদের পক্ষে মোটেই লাভজনক হয়নি, কারণ এইসব ব্যবস্থায় জমি খরিদ-বিক্রি করার, বন্ধক দেওয়ার ও অন্যভাবে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কৃষকের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে ওঠে । নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাগুলিতে জমিদারদের স্বার্থ দেখা হয়েছিল । ফলে সাধারণ প্রজার স্বার্থ উপেক্ষিত হয় । সমাজে এক শ্রেণির ভূমিহীন প্রজার উদ্ভব হয় । ভূমিহীন প্রজাগণ জমিদারদের খেয়ালখুশি মতো জমি চাষের অধিকার পেত । জমিদার ইচ্ছা করলে প্রজাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারত । এতে দেশের কৃষিকার্যের ব্যাপক ক্ষতি হয় । জমির উপর না জমিদার না প্রজার কারও মমত্ববোধ ছিল না ।      

(৩) যৌথ পরিবার প্রথা ও পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার ওপর আঘাত:-  নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ফলে এত কাল পর্যন্ত ভারতের গ্রামীণ জীবনে যে সামাজিক বন্ধন ছিল— তা বিপর্যস্ত হয় । যৌথ পরিবার প্রথা ও পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ওপর চরম আঘাত আসে । গ্রামীণ জীবনে সহযোগিতার পরিবর্তে প্রতিযোগিতা আসে ।

(৪) গ্রামীণ জীবনে কৃষকদের পরিবর্তে মহাজন, বণিক ও সরকারি কর্মচারীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা:- নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ফলস্বরূপ মহাজনদের কাছে দরিদ্র কৃষকদের জমি বন্ধক দেওয়ার রেওয়াজ ক্রমেই কৃষকদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা বিপর্যস্ত করে তোলে । প্রকৃতপক্ষে এইসব বন্দোবস্তের ফলে গ্রামীণ জীবনে কৃষকদের পরিবর্তে মহাজন, বণিক ও সরকারি কর্মচারীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয় এবং ভারতের গ্রামীণ জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যায় । এইসব কারণে কোম্পানির শাসনকালে ভারতের কৃষি-অর্থনীতিতে ভাঙন দেখা দেয় ।

*****

Related Items

নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল ? এই সময়ের দুটি ব্যঙ্গাত্মক বাংলা নাটকের নাম কর । নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ?

প্রশ্ন:- নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল ? এই সময়ের দুটি ব্যঙ্গাত্মক বাংলা নাটকের নাম কর । নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ?

বাংলায় সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কার্যাবলি উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:-  বাংলায় সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কার্যাবলি উল্লেখ কর ।

প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ? জ্যোতিবা ফুলে কেন স্মরণীয় ? উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনগুলি সমাজে কী প্রভাব বিস্তার করে ?

প্রশ্ন:- প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ? জ্যোতিবা ফুলে কেন স্মরণীয় ? উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনগুলি সমাজে কী প্রভাব বিস্তার করে ?

প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ডঃ আত্মারাম পান্ডুরঙ্গ ।

উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল ? ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে ? ব্রাহ্মসমাজের সমাজ সংস্কারের লক্ষ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন:- উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল ? ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে ? ব্রাহ্মসমাজের সমাজ সংস্কারের লক্ষ্য কী ছিল ?

উনিশ শতকের সমাজ-সংস্কার আন্দোলনগুলির প্রধান লক্ষ্য ছিল—

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে চার্লস উডের প্রতিবেদনে কী কী সুপারিশ করা হয়েছিল ?

প্রশ্ন:- ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে চার্লস উডের প্রতিবেদনে কী কী সুপারিশ করা হয়েছিল ?

শিক্ষা সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান করার জন্য ১৮৫৪ সালে চার্লস উডের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয় । এই কমিশনের সুপারিশগুলি ছিল—