ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দেশীয় বস্ত্রশিল্পের অবনতির চারটি কারণ উল্লেখ কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 01/07/2022 - 08:19

প্রশ্ন:-  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দেশীয় বস্ত্রশিল্পের অবনতির চারটি কারণ উল্লেখ কর ।

ভারতে কোম্পানি শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এদেশের ঐতিহ্যমন্ডিত বস্ত্রশিল্পের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে এবং কালক্রমে তা ধ্বংস হয়ে যায় । ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের কারণ হিসেবে রমেশচন্দ্র দত্ত, রজনীপাম দত্ত, নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিংহ, বিপিন চন্দ্র, অমিয় বাকচী প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন যেমন—

(১) শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী অবাধ বাণিজ্য : ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চ্যার্টার অয়াক্ট -এর মাধ্যমে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লোপ পেয়ে অবাধ বাণিজ্যনীতি চালু হলে ইংল্যান্ডের বৃহদায়তন কলকারখানায় তৈরি সস্তা দামের কাপড়ে ভারতের বাজার ছেয়ে যায়, ফলে ভারতীয় হস্তচালিত বস্ত্রশিল্প ক্রমশ পিছু হটতে থাকে । ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দের পর কিছু সময়ের জন্য ইউরোপের বাজারে ভারতের রপ্তানি-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যায় ।

(২) ব্রিটিশ সরকারের ভারসাম্যহীন শিল্পনীতি ও বৈষম্যমূলক শুল্কনীতি : ইংল্যান্ডের তৈরি জিনিসপত্র যাতে অবাধে ভারতে আসতে পারে তার জন্য কোম্পানি আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয় । অন্যদিকে অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে ব্রিটেনে ভারত থেকে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর উঁচু হারে শুল্ক ধার্য করা হয় । ব্রিটেনে ভারতের রপ্তানি করা বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্কের হার ছিল অত্যন্ত বেশি । দৃষ্টান্ত হিসাবে বলা যায় যে ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনে ভারতীয় ছাপা সুতিবস্ত্র ও মসলিনের ওপর শুল্কের হার ছিল যথাক্রমে ৬৭.৫ শতাংশ এবং ৩৭.৫ শতাংশ ।

(৩) তাঁতিদের ওপর অত্যাচার : সুতিবস্ত্র তৈরির জন্য যে তুলার প্রয়োজন হয়, কোম্পানির কর্মচারীরাই তা তাঁতিদের চড়া দামে বিক্রি করত । একদিকে চড়া দামে তুলা কিনে এবং অন্যদিকে কম দামে বস্ত্র বিক্রি করে তাঁতিরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ত— যা ছিল কোম্পানির আমলে দেশীয় বস্ত্রশিল্পের অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ । কোম্পানির দালাল, গোমস্তা ও কর্মচারীদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচার জন্য গরিষ্ঠ সংখ্যক তাঁতিরা নিজেদের পেশা ত্যাগ করে । কেউ কেউ নিজেদের হাতের বুড়ো আঙুল কেটে ফেলে । কর্মহীন তাঁতিরা ভূমিহীন খেতমজুরে পরিণত হয় ।

(৪) দাদন প্রথার কুফল : পলাশির যুদ্ধের পর থেকেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার কর্মচারী, দেশীয় এজেন্ট বা গোমস্তাদের মাধ্যমে তাঁতিদের দাদন বা অগ্রিম দিত । কোম্পানির দাদন গ্রহণ করায় তাঁতিরা অন্য কোথাও উৎপন্ন দ্রব্য বিক্রি করতে পারত না এবং কম দামে লোকসান স্বীকার করেও তারা উৎপন্ন বস্ত্র কোম্পানিকে বিক্রি করতে বাধ্য থাকত ।

*****

Comments

Related Items

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি কে প্রবর্তন করেন ? এর প্রধান শর্তগুলি কি ছিল ? কোন দেশীয় রাজ্য সর্বপ্রথম এবং কারা কারা এটি গ্রহণ করেছিল ?

 

প্রশ্ন:- অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি কে প্রবর্তন করেন ? এর প্রধান শর্তগুলি কি ছিল ? কোন দেশীয় রাজ্য সর্বপ্রথম এবং কারা  কারা এটি গ্রহণ করেছিল ?

অমৃতসরের সন্ধির গুরুত্ব বর্ণনা করুন ।

প্রশ্ন:- অমৃতসরের সন্ধির গুরুত্ব বর্ণনা করুন ।

শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির গুরুত্ব বর্ণনা করুন ।

প্রশ্ন:-  শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির গুরুত্ব বর্ণনা করুন ।

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার বর্ণনা কর ।

প্রশ্ন:- ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তার বর্ণনা কর ।